ডাঃ মোঃ জিন্নুরাইন জায়গীরদার, এনেসথেশিয়া ও ইনটেন্সিভ কেয়ার কনসালট্যান্ট ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড: অক্সিজেন নিয়ে যা বলছিলাম। অক্সিজেন কিভাবে স্টোর করা হবে। যেহেতু এটা একটা গ্যাস, তাই এটাকে স্টোর করে রাখতে চাইলে, রাখতে হবে বন্ধ কন্টেইনারে। আর গ্যাসীয় পদার্থ সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান থেকে আমরা জানি, এজাতীয় পদার্থ, কন্টেইনারের পুরো অংশ দখল করে নেয়। ফলে একটা কন্টেইনারে যেমন অল্প অক্সিজেনও রাখা যায়, তেমনি অনেক বেশি পরিমাণ অক্সিজেনও রাখা যায়। তবে এখানে একটা সমস্যা আছে। সমস্যার নাম চাপ বা প্রেসার। যখনই নির্দিষ্ট পরিমাণ আয়তনের ভেতরে অনেক বেশি পরিমাণ অক্সিজেন রাখার চেষ্টা হবে, অক্সিজেনের চাপ অনেক বেড়ে যাবে। আর সেই চাপ সহ্য করার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডারকে অনেক শক্ত হতে হবে। চাপ যদি আরও বাড়াই? ইয়েস। একটা সময় দেখা যাবে অক্সিজেন তরল হয়ে গেছে। অক্সিজেনের এই চরিত্রকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানীরা তৈরি করেন অক্সিজেন সংরক্ষণের বিভিন্ন পদ্ধতি। �প্রথমটি হচ্ছে অক্সিজেন ট্যাঙ্ক। বিপুল পরিমাণে, খুব অল্প জায়গায় জমা করে রাখার উপায় হচ্ছে অক্সিজেন ট্যাংক। উচ্চচাপের কারণে অক্সিজেন এখানে তরল অবস্থায় থাকে। পাইপ লাইনের মাধ্যমে এই তরল অক্সিজেনকে গ্যাসে রূপান্তরিত করে রোগীদের জন্য সরবরাহ করা সম্ভব। এই ব্যাবস্থা প্রচুর ব্যায়সাপেক্ষ এবং শুধুমাত্র বিশেষায়িত এবং বড় হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন ট্যাংকে অক্সিজেন সংরক্ষন করে পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। পরের পদ্ধতিটি অপেক্ষাকৃত কম ব্যয়সাপেক্ষ। অক্সিজেন সিলিন্ডার। বিশেষ ব্যাবস্থায় উচ্চচাপে সিলিন্ডারে অক্সিজেন ভর্তি করে রাখা যায়।
এক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে একটি মধ্যম সিলিন্ডারে যে পরিমাণ অক্সিজেন রাখা যায় সেটা থেকে একজন রোগীকে ১-২ দিনের বেশী অক্সিজেন দেয়া যায়না। অক্সিজেন ফুরিয়ে যায়, আর তাই বারে বারে সিলিন্ডার পূরণ করে নিতে হয়। তৃতীয় আরেকটি পদ্ধতি আছে। একটি মেশিন। নাম অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর। এই যন্ত্র বাতাস থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অক্সিজেন নিয়ে অক্সিজেন ঘনীভূত করে সাথে সাথে রোগীদের ব্যাবহারের জন্য সরবরাহ করতে পারে। তবে একটি যন্ত্র থেকে শুধুমাত্র একজন রোগীকে দেয়া সম্ভব এবং প্রতি মিনিটে খুব বেশী পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হয়না। এতক্ষণ ত বলা হলো সংরক্ষণ করা হবে কিভাবে, এবার আসি অক্সিজেন থেরাপি ডিইভাইস প্রসঙ্গে। অর্থাৎ সংরক্ষিত অক্সিজেন তো পেলাম, সেই অক্সিজেন শ্বাসনালীতে প্রবেশ করানোর জন্য দরকার একটি ডিভাইস। যার ভেতর দিয়ে অক্সিজেন মশাই আমাদের ফুসফুসের দিকে এগিয়ে যাবেন। এখানে আবার প্রকারভেদ কেন? কারণ আছে। রাস্তা কত চওড়া, কত বেশি পরিমাণ কত অল্প সময়ের ভেতরে যেতে পারবে, তা নির্ভর করে এই ডিভাইসের উপরে। বিভিন্ন ধরনের অক্সিজেন থেরাপি ডিভাইস বিভিন্ন মাত্রায় অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে। কোন ডিভাইস দিয়ে সর্বোচ্চ কত পরিমাণ অক্সিজেন দেয়া যায়, তা নির্ধারিত। তবে নির্দিষ্ট রুগীর জন্য কতোটা প্রয়োজন বা প্রতি মিনিটে কি পরিমাণ অক্সিজেন দিতে হবে সেটা নির্ধারনের দায়িত্ব একজন চিকিৎসকের। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে, এই সকল যন্ত্র ব্যাবহারের জন্য পূর্বশর্ত হচ্ছে রোগীর শাস প্রশ্বাস গ্রহণের ক্ষমতা থাকতে হবে। সঙ্গে কিছু নজরদারীর ব্যাপার তো আছেই। যেমন পালস অক্সিমিটার, ই সি জি ও ব্লাড প্রেশার মনিটর এসব দিয়ে প্রাথমিক মনিটরিঙের কাজ চলে। এবার বলি অক্সিজেন থেরাপি ডিভাইসের প্রকার ভেদ সম্পর্কেঃ �১। নেজাল কেনুলাঃ দুই নাকে ছোট দুটি নলের মাধ্যমে এই ব্যাবস্থায় রোগীকে প্রতি মিনিটে ২-৬ লিটার অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব আর সেটা দেয়া হলে রোগী ২৪% থেকে ৪৫% পর্য্যন্ত অক্সিজেন পেতে পারেন তবে সেটা অনেকাংশে রোগীর শ্বাস প্রশ্বাসের শক্তির উপর নির্ভরশীল। ৬ লিটারের বেশী অক্সিজেন দিলে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং সেটা কোন ভাবেই রোগীকে ৪৫% এর অতিরিক্ত অক্সিজেন সরবরাহ করতে সক্ষম হবেনা। ২। ভেন্টিমাস্কঃ এই ব্যাবস্থায় মুখে মাস্ক লাগিয়ে রোগীকে ৩০-৪০-৫০-৬০% পর্য্যন্ত অক্সিজেন দেয়া সম্ভব। এই ব্যাবস্থায় ভেঞ্চুরী নামের একটি বস্তুর মাধ্যমে, যা বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে এবং সেটাতে লিখা থাকে কত লিটার অক্সিজেন দিলে রোগী কত হারে অক্সিজেন পেতে পারে, সেটা দিয়ে ৬০% পর্য্যন্ত অক্সিজেন দেয়া সম্ভব। ৩। সিম্পল মাস্কঃ একটি মাস্কের সাথে নল দিয়ে সিলিন্ডার থেকে ৩০-৪০% অক্সিজেন দেয়া সম্ভব। �৪। আংশিক রিব্রিথিং মাস্কঃ এই মাস্ক দিয়ে ৪০-৬০% অক্সিজেন দেয়া সম্ভব। ৫। নন-রিব্রিথিং মাস্কঃ এই মাস্বকের সাথে একটি ব্যাগ থাকে, যা দিয়ে রোগীকে ৬০-১০০% অক্সিজেন দেয়া সম্ভব। ৬। হাই ফ্লো নেজাল কেনুলাঃ হাই ফ্লো নেজাল কেনুলা এক ধরনের নূতন যন্ত্র যার মাধ্যমে মাস্ক ব্যাবহার না করে শুধু নাকে নল দিয়ে ২১-১০০% অক্সিজেন দেয়া সম্ভব। এই যন্ত্র প্রতি মিনিটে ১০-৬০ লিটার পর্য্যন্ত অক্সিজেন সরবরাহ করতে সক্ষম। এই যন্ত্র ব্যায়সাপেক্ষ এবং এখনো এটা সার্বজনীন ভাবে সহজলভ্য নয়। তবে এই যন্ত্রের বিশেষ কিছু সুবিধা আছে যা অন্য কোন অক্সিজেন ডেলিভারি ডিভাইসে নাই। এই যন্ত্র দিয়ে অক্সিজেনের সাথে উষ্ণ জলীয় বাষ্প মিশ্রণ করে দেয়া হয় যাতে করে শুষ্ক অক্সিজেনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে রোগীকে মুক্ত রাখা সম্ভব। একই সাথে এই যন্ত্রের মাধ্যমে শ্বাস নালীতে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব যা বিশেষ পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত সাহায্যকারী হয়। এতক্ষণ আমরা অক্সিজেন সংরক্ষণ করে কিভাবে অতিরিক্ত অক্সিজেন রোগীকে দিতে পারি সেটা নিয়ে কথা বললাম। এর পর আসুন আমরা আসি আসল কোথায়। আসল কথা কি সেটা জানতে হলে অপেক্ষা করুন। চলবে…………….