আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ মেধাভিত্তিক অভিবাসন নীতি চালু এবং প্রেসিডেন্ট ওবামার সময়কার তরুণ অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার যে প্রকল্পটির বিরোধিতা ট্রাম্প করেছিলেন তা তিনি চালু করছেন।
ডাকা তথা ড্রিমার অভিবাসীদের নাগরিকত্বের বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম টেলিমুন্দো নোটিসিয়াসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি একটি বড় ধরনের নির্বাহী আদেশ দেব। প্রেসিডেন্ট হিসেবে এটা করার আমার ক্ষমতা আছে। ডাকাদের এ দেশের নাগরিক বানাব।’
নাগরিকত্ব সংক্রান্ত আলোচনায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘খুব তাৎপর্যপূর্ণ একটা বিল আমরা আনতে যাচ্ছি। মেধাভিত্তিক এই বিল দেখে আশা করি মানুষরা খুশি হবেন।’ মার্কিন নাগরিকত্বের জন্য কী কী পর্যায় আছে সব উল্লেখ থাকবে এই বিলে। যদিও এই বিলের খসড়া নিয়ে রিপাবলিকানদের ক্ষোভ রয়েছে। বিরোধীদেরও কটাক্ষ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
হোয়াইট হাউজ জানায়, প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এই বিষয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে সহমতের ভিত্তিতে কাজ করতে আগ্রহী তিনি। নাগরিকত্ব বিল, সীমান্ত নিরাপত্তা আর প্রতিভা নির্ভর সংস্কারে কাজ করতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট।শিশু বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দিয়ে দ্রুতই একটি নির্বাহী আদেশ দেবেন ট্রাম্প বলেও জানা যায়। তরুণ অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রকল্পটি ‘ড্রিমার’ বা ‘ডাকা’ নামে পরিচিত।
এই বিষয়টি সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নেওয়া একটি উদ্যোগ। সে সময় ট্রাম্প বিষয়টির বিরোধিতা করেন। তবে ডিফার্ড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইব্যালস তথা ডাকা অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেওয়া নিয়ে ট্রাম্প আচমকা ঘোষণা দিলেও দ্রুতই এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছে হোয়াইট হাউস।
টেলিভিশনে ট্রাম্পের সাক্ষাৎকারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জুড ডির জানান, এমন সিদ্ধান্ত এখনই আসছে না। অভিবাসন সংস্কারের বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেসে আলোচনা তোলার সম্ভাবনা আছে।তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট আজ যে ঘোষণা দিয়েছেন সেটা হলো-যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় যোগ্যতাভিত্তিক অভিবাসন নীতি নিয়ে একটা নির্বাহী আদেশ দেওয়ার জন্য তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।
তার দীর্ঘ বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট আরও বলেছেন, ডাকা নিয়ে আইনি সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে তিনি কংগ্রেসের সঙ্গেও আলোচনা করতে ইচ্ছুক, সেখানে শক্তিশালী সীমান্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা ও যোগ্যতাভিত্তিক স্থায়ী অভিবাসন নীতি সংস্কার বিষয়গুলোর সাথে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।
ট্রাম্প জানান, এই নীতি চালু হলে নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ হবে এবং তরুণ অভিবাসীদের আইনগত সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়টিও এই বিলের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অভিবাসনে নীতিতে ডিফারড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভাল (ডিএসিএ) নামে পরিচিত নীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।তিনি বলেন, ‘এখানে নাগরিকত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে মেধা, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।’
জানা যায়, শিশু বয়সে যারা কোনো বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই বাস করতে, কাজ করতে বা পড়াশোনা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিল তাদের যুক্তরাষ্ট্রে ডাকা বা ড্রিমার অভিবাসী হিসেবে পরিচিত। এদের অধিকাংশই লাতিন আমেরিকার দেশগুলো থেকে আসা। ২০১২ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওমাবা তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার উদ্যোগটি নিয়েছিলেন। ওবামা সরকারের নেওয়া এই প্রকল্প বাতিল করে দেওয়ার চেষ্টা করেন ট্রাম্প। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের বাধার সামনে তা সম্ভব হয়নি। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত এক রুলিংয়ে জানায় ডাকা বাতিলের সরকারের কোনো জোরালো আইনি যুক্তি নেই এবং এটা বহাল রাখার নির্দেশনা দেয় আদালত।
চলতি বছরের নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও লড়তে যাচ্ছেন ট্রাম্প। অভিবাসী নীতি সীমিতকরণ, চলমান বর্ণবাদ আন্দোলন, করোনা মহামারি মোকাবিলায় ব্যর্থতা ইত্যাদি কারণে ক্ষমতা ধরে রাখার সম্ভাবনা অনেকটাই নড়বড়ে। আসছে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী জো বাইডেনের সঙ্গে কঠিন লড়াইয়ে মুখোমুখি হতে হবে তাকে। ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতেই ট্রাম্প ডাকা অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি তুলে থাকতে পারেন বলে অনেকের ধারণা।
বিশ্বের আধুনিক ইতিহাসে এই প্রথম কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতার সমস্ত ব্যবহার করছেন। শুধুমাত্র প্রেসিডেন্ট পদের ক্ষমতা পরিবর্তনই নয়, কংগ্রেসও বদলে ফেলছেন তিনি। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর সকল প্রতিবন্ধকতাকে সরিয়ে বিচার বিভাগীয় ক্ষেত্রটিকে নিজের করে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ আদালত জানায় ৬ লক্ষ ৫০ হাজার তরুণ অভিবাসীদের আইনগত সুরক্ষা দেওয়া বন্ধ করার যে প্রচেষ্টা করেছিল প্রশাসন তা প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে। আদালত এই অভিবাসীদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার যে অনুমোদন রয়েছে তা বহাল রাখছে।
উল্লেখ্য, অপ্রাপ্তবয়স্ক থাকাকালীন নাগরিকত্বের জন্য প্রয়োজনীয় নথি ছাড়াই সেদেশে ছিলেন সাড়ে ছয় লাখ অভিবাসী। বর্তমানে তারা যুক্তরাষ্ট্রেই থাকছেন। ২০১২ সালে বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট পদে থাকাকালীন তাঁদের নাগরিকত্ব না দিলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ও কাজ করার আইনি অনুমতি দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে নির্বাচনী প্রচারে এই সব অভিবাসন নীতি বিরুদ্ধ প্রস্তাবকে হাতিয়ার করেই প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নির্বাচনী প্রচার চালান ট্রাম্প।