মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানঃ একজন চিকিৎসকের সুরক্ষা পোশাক কতটা জরুরি তা বুঝিয়ে দিয়েছেন ডা. মঈন উদ্দিন। ছাত্রজীবনে ঠিক এমনটাই দেখেছিলাম তাঁকে। ক্লাস, পরীক্ষা শেষ করে ছুটতেন কাজে। এসএসসি, এইচএসসিতে স্ট্যান্ড করেছিলেন। অথচ কি পড়েছেন, কি খেয়েছেন সেদিকে নজর ছিল না এতটুকু।
ঢাকা মেডিকেলে যখন পড়তেন অসংখ্যবার গিয়েছিলাম ডা. ফজলে রাব্বি হলে তাঁর রুমে। ইন্টার্নি শেষ করে থাকতেন শাহাবাগের একটি মেসে। সেখানেও গিয়েছিলাম। কাজ পাগল এই লোকটি আজ চলে গেছে না ফেরার দেশে। আমাদের আসামি বানিয়ে। রেইনকোট দিয়ে পিপিইর কাজ আর এন-৯৫ এর বদলে কাপড়ের মাস্ক একজন চিকিৎসকের জন্য যে কতটা বিপদজনক তা খুব ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি।
মৃত্যুর আগে রোগী দেখার জন্য পিপিই চেয়েছিলেন। পাননি। করোনা রোগীদের চিকিৎসা না থাকায় নিজ কর্মস্থল ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউর সেবাও নিতে পারেননি। পাননি এয়ার এম্বুলেন্সের সেবা। ঢাকা আসতে অনুরোধ করেছিলেন আইসিইউ সম্বলিত এম্বুলেন্সের। সেটাও পাননি। এমনকি সাধারণ এম্বুলেন্সও রাজি হচ্ছিল না তাঁকে ঢাকায় আনার। দীর্ঘ অপেক্ষার পর শেষ পর্যন্ত এলেন। ভর্তিও হলেন কুর্মিটোলা হাসপাতালে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। ঢাকায় আসার এক দিন পর লাইফ সাপোর্টে নিতে হয়েছে। আজ চলে গেছে না ফেরার দেশে।
মাফ করবেন মঈন ভাই। আপনি আপনার কথা রেখেছেন। আপনার মরহুম গ্রাম্য চিকিৎসক বাবা আপনাকে মানবতার ডাক্তার, গরীবের ডাক্তার বানাতে চেয়েছিলেন। আপনি হয়েছেন। মানুষের সেবা কিভাবে করতে হয় মৃত্যুর মাধ্যমে সবাইকে জানাতেও পেরেছেন। কিন্তু আমরা আপনার জীবনের শেষ সময়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অনুরোধ রাখতে পারি নাই।
আপনার অসুস্থতার কথা যেদিন শুনেছি সেদিন থেকে প্রতিদিন দোয়া করেছি সুস্থতার জন্য। নিয়মিত আপডেট জানার চেষ্টা করেছি। এখন আপনি সব কিছুর উর্ধ্বে। দোয়া করি আল্লাহ আপনাকে শহীদ হিসাবে কবুল করুক। আপনার ছোট্ট দু’টি বাচ্চা যেন শোক সইতে পারে। মানবিক মানুষ হতে পারে। আপনার মতো তারাও যেন ধার্মিক হতে পারে। সেই দোয়া করি।