শিপন দেওয়ান – আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করে সংসার চলে শেরপুরের ঝিনাইগাতীর অশীতিপর নজিমুদ্দিনের। নিজের জীর্ণ বসতঘর মেরামত করতে ভিক্ষার টাকায় তিল তিল করে জমিয়েছেন ১০ হাজার টাকা। এমন সময় দেশে হানা দিল বৈশ্বিক প্রাণঘাতী মহামারী করোনা। প্রাণের ঝুঁকির পাশাপাশি চরম অর্থসংকটে পড়ল মানুষ। যার ঢেউ আছড়ে পড়ল তার সেই অজপাড়া গাঁয়েও। বেকার হয়ে পড়ল অসহায় খেটেখাওয়া মানুষ। চরম এই সংকট নাড়িয়ে দিল নজিমুদ্দিনের মনকে। ঘর মেরামতের সেই জমানো টাকা মুহূর্ত না ভেবে দান করে দিলেন শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে কর্মহীনদের খাদ্য সহায়তার জন্য খোলা তহবিলে। নজিমুদ্দিনের এই দানের ঘটনা প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের মানুষকে নাড়িয়ে দিলেও খুব একটা নাড়াতে পারেনি সমাজের বিত্তবানদের।
দেশের এই চরম ক্রান্তিকালেও বিত্তবানরা আদর্শ মানতে পারেননি নজিমুদ্দিনকে। অর্থের প্রাচুর্য অনুপাতে অসহায় মানুষের দিকে সহায়তায় হাত বাড়াতে দেখা যায়নি বেশিরভাগ বিত্তবানকেই। করোনা প্রাদুর্ভাবের প্রথম দিকে কিঞ্চিত সাহায্য-সহায়তা করলেও ঈদুল ফিতরের পর তা এখন নেই বললেই চলে। গত বুধবার রাত ১০টার দিকে রাজধানীর মহাখালীতে মহাসড়কের পাশে বসে থাকতে দেখা গেছে অনেক অসহায়, হতদরিদ্র ও দিনমজুর মানুষকে। সড়কের পাশে এমন চিত্র প্রতিদিনই দেখা যায়। সড়কের দুই পাশে তারা তাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে বসে থাকেন। তাদেরই একজন আবুল হোসেন। আট ও তিন বছরের দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে বসে আছেন। তাদের চোখেমুখে অভাবের ছাপ স্পষ্ট। এই প্রতিবেদককে দেখে সপরিবারে পড়িমড়ি করে এগিয়ে এলেন আবুল হোসেন। অসহায় ভঙ্গিতে বললেন, ‘সহালে মাইয়াগো একটা রুটি খাওয়াইছিলাম। এর পর থিক্যা অহনো আর কিছু খাওয়াইতে পারি নাই। লকডাউনের সময় অনেকে ত্রাণ দিলেও অ্যাহন আর কেউ কিছু দেয় না। মাঝে-মইধ্যে দুই-একজন রান্না করা খাওন দিয়া যায়।’ আবুল হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে সেখানে অভাবী মানুষের ছোটখাটো একটা জমায়েত হয়ে গেল। তাদের মধ্যে সমিরন বিবি নামে একজন বললেন, ‘বড়লোকগো ভাবে মনে অয় তারা আমাগো খাওন দিতে দিতে হয়রান হয়া গেছে। কী করব তারা এত্ত ট্যাকা দিয়া! ট্যাকা কি কবরে লয়া যাইব?
এই তো কত বড়লোক মরতাছে। মইরা গেলেই তো ঠুস। ট্যাকা কি লগে লয়া যাইতে পারতাছে?’ সমিরনের অভাবী চেহারায় স্পষ্ট ক্ষোভের ছাপ। করোনা ভাইরাসের ছোবলে থমকে গেছে গোটা বিশ্ব। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। মহামারী ঝুঁকি এড়াতে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় দুই মাসের বেশি সময় ‘গৃহবন্দি’ থাকতে হয়েছে সবাইকে। সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়েছে খেটেখাওয়া মানুষ। দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। এমন অবস্থায় শুরুর দিকে মানুষের পাশে এগিয়ে আসতে দেখা গেছে জনপ্রতিনিধি ও বিত্তবানদের। তবে অনেকেই বলছেন, সেগুলো ছিল লোকদেখানো কার্যক্রম। বড়লোকেরা ত্রাণ বিতরণের চেয়ে প্রচার করেছেন বেশি। সাধারণ্যে এমনই কথা প্রচলিত। অসহায় মানুষের ভাষ্য, এই মহামারীতে দেশের অনেক বড়লোক দরদীর চেয়ে বরং নিষ্ঠুর হয়েছেন।