কসোভোর প্রেসিডেন্ট হাশিম থাচির পদত্যাগঃ যুদ্ধপরাধের অভিযোগে হ্যাগে বিচারের সম্মুখীন

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ কসোভোর প্রেসিডেন্ট হাশিম থাচিকে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী মামলায় অভিযুক্ত করা হলে গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি পদত্যাগ করেন। হল্যান্ডের রাজধানী হেগের বিশেষ আদালতে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করা হয় হাশিম থাচিকে। সংসদের স্পিকার ভোজা ওসমানীকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। বৃহস্পতিবার কসোভো স্পেশিয়েলিস্ট চেম্বার (কেএসসি) থাচির বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করলে, এক সংবাদ সম্মেলনে থাচি বলেন, “কসোভোর প্রেসিডেন্টের সম্মান রক্ষার জন্য” তিনি পদত্যাগ করছেন। তিনি বলেন, তিনি কোন অন্যায় করেন নি। ১৯৯৮-৯৯ সালে কসোভোর স্বাধীনতার লড়াইয়ের সময় কসোভো লিবারেশন আর্মির (কেএলএ) রাজনৈতিক নেতা হিসাবে দায়িত্ব পালনকারী থাচি বৃহস্পতিবার বিকেলে বিচারের সম্মুখীন হওয়ার জন্য নেদারল্যান্ড যান। সার্বিয়ার সংবাদ সংস্থা তানজুগ জানিয়েছে যে, সামরিক বিমানে যাত্রার সময় থাচির সাথে ছিলেন, তাঁর দল গণতান্ত্রিক পার্টির নেতা কাদ্রি ভেসেলি, সংসদ সদস্য রেক্সেপ সেলিমি এবং কে এল এর অন্যান্য সহকর্মী যারা অভিযুক্তদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। কসোভোর যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রবীণ রাজনীতিবিদ এবং কে এল এ’র প্রাক্তন মুখপাত্র জাকুপ ক্রাসনিকিকে বুধবারে প্রিস্টিনা থেকে গ্রেপ্তার করে ইতিমধ্যে হেগে স্থানান্তর করা হয়েছে। ১৯৯০ সালের প্রথম দিকে আলবেনীয় জনগণের বিরুদ্ধে সার্বিয়ায় দীর্ঘস্থায়ী নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্রোহী কসোভো লিবারেশন আর্মি (কে এল এ)। ১৯৯৮-৯৯ সালে প্রেসিডেন্ট স্লোবোদান মিলোসেভিচের বেলগ্রেড বাহিনীর বিরুদ্ধে কেএলএ স্বাধীনতার লড়াই করে। ১৯৯৯ সালে কসোভোতে আলবেনীয় বাহিনীদের হত্যা ও বহিষ্কার বন্ধের লক্ষ্যে বেলগ্রেডে ন্যাটো বাহিনী বোমা হামলা পরিচালনা করলে সার্ব বাহিনী কর্তৃক হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হয়। যুদ্ধে ১০ হাজারেরও বেশি লোক মারা যায়। ২০০৮ সালে সার্বিয়া থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয় কসোভো, কিন্তু বেলগ্রেড এই স্বাধীনতার ঘোষণাকে মেনে নেয়নি। এ বছর জুন মাসে কসোভো স্পেশিয়ালিস্ট চেম্বার (কেএসসি) থাচি সহ ৯ জন রাজনৈতিক নেতাকে “আলবেনিয়ান, সার্ব, রোমা এবং অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর প্রায় ১ শত জনকে হত্যা এবং আরও শতাধিক ব্যাক্তির বিরুদ্ধে সহিংসতার” অভিযোগে অভিযুক্ত করে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল থেকে জানানো হয়েছে, থাচি এবং সহযোগীদের বিরুদ্ধে অঙ্গ পাচার, অপহরণ, আটককৃতদের সাথে খারাপ ব্যবহার এবং যৌন সহিংসতার অভিযোগ করা হয়েছে।� সার্বিয়া থেকে বিচ্ছিন্নতা যুদ্ধের সময় কেএলএ দ্বারা জাতিগত সংখ্যালঘু এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে কথিত অপরাধ তদন্তের জন্য ২০১৫ সালে কসোভো বিশেষজ্ঞ চেম্বারস (কেএসসি) গঠন করা হয়েছিল। ট্রাইব্যুনাল কসোভো আইনের অধীনে কাজ করে তবে আন্তর্জাতিক বিচারপতি এবং প্রসিকিউটররা এই চেম্বারের সাথে যুক্ত। ২০১১ সালের ইউরোপের কাউন্সিলের এক প্রতিবেদনে মিঃ থাচি কে কসোভো লিবারেশন আর্মির (কে এল এ) অফসুট নেতা হিসাবে অভিযুক্ত করে। এ সময় তিনি অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে নিন্দা করেন। জুলাই মাসে তিনি হেগে প্রসিকিউটরদের সাথে বেশ কয়েকদিন আলাপ আলোচনা করেন এবং সেই সময় তিনি স্পষ্ট করেন যে অভিযুক্ত হলে তিনি বিচারের মুখোমুখি হবেন। ১৯৯০ এর দশকের শেষদিকে সংঘাত চলাকালীন জাতিগত আলবানিয়ানদের হত্যার জন্য সার্বিয়া ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন প্রাক্তন সেনা, আধাসামরিক এবং পুলিশকে বিচারের মুখোমুখি করেছে। থাচি সহ অন্যান্যদের যুদ্ধাপরাধ মামলায় এই অভিযুক্তিতে মানবাধিকার আন্দোলনের সাথে যুক্ত গ্রুপগুলো থেকে এই অভিযুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলা হয়েছে, কসোভো যুদ্ধে অত্যাচারিত হাজারো মানুষ এই সংবাদে আনন্দিত হয়েছে। তারা সবাই এই হত্যাযজ্ঞের বিচার কামনা করে।

SHARE THIS ARTICLE