কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে দুর্নীতি ও অনিয়ম ! উত্তরণের উপায়

রউফ মাওলা – সভাপতি , ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া ফোরাম ( IMF ) কুয়েতঃ কিছু সুনির্দিষ্ট কারণে কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস খবরের শিরোনাম হয়েছে গত ৬/৭ মাস যাবৎ । ঐ প্রসঙ্গ সবারই জানা । আমি আজ ঐ প্রসঙ্গে না গিয়ে কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের দুর্নীতির প্রসঙ্গে দু’ একটি কথা বলব ।

আপনারা জানলে আশ্চর্য হবেন , দূতাবাসের পাসপোর্ট সেকশনে পাহাড় সমান দুর্নীতি হচ্ছে এই মহামারী করোনা কালীন সময়েও । আর এই দুর্নীতির কারণে রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসীরা চরমভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পদে পদে । এই সব দুর্নীতির শিকার ভূক্তভোগিরা দূতাবাসের ভয়ে কিছুই বলতে চায়না – শুধু মর্ম ব্যথা নিয়েই চাপাগুঞ্জনে দিন কাটায় – কারণ সত্য প্রকাশ করলে যদি পরে আবার ওদের কোন বিপদ হয় । তবে দূতাবাসের দূর্নীতি এখন “ Open Secret” – সবার মুখে মুখে করোনা ভাইরাসের মত বাতাসে প্রবাহিত হচ্ছে দুতাবাসের বিভিন্ন দুর্নীতি ।

নিম্নে দূতাবাসের দূর্নীতির দু’ একটি চিত্র তুলে ধরা হল :-

ক) করোনার কারণে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় “Machine Readable Passport” ( MRP ) এর ডেলিভারী সময় ৩ মাস নির্ধারণ করা হয় দূতাবাস থেকে । এই দীর্ঘ্যমেয়াদি পাসপোর্ট ডেলিভারীর কারণে জরুরী ভিত্তিত্বে আকামা লাগানোর জন্য প্রবাসীদের সুবিধার্থে প্রাক্তন রাস্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম ম্যানুয়েল ( হাতে লিখা ) পাসপোর্ট নবায়নের ব্যবস্থা করেছেন । এর সাথে কুয়েত পাসপোর্ট অফিসে আকামা লাগানোর সুবিধার্থে দূতাবাসের পেড এ প্রতি পাসপোর্টের জন্য একটি অনুরোধ পত্র দেওয়া হয় , এতে আকামা লাগাতে প্রবাসীদের সহায়তা হচ্ছে । এই ম্যানুয়েল পাসপোর্ট নবায়নের জন্য কোন ফি নির্ধারণ করেনি দূতাবাস – এবং ২ দিনের মধ্য ডেলিভারী দেওয়ার সময় নির্ধারণ করেছে দূতাবাস কিন্ত অভিযোগ আছে দূতাবাসের অসৎ- দূর্নীতিবাজ কিছু কর্মকর্তা বা দালালদের ১০ দিনার ঘুষ দিলে ১ ঘন্টার মধ্যে পাসপোর্ট ডেলিভারী দিয়ে দেয় । অনেক প্রবাসী জরুরী কারণে তাই করতে বাধ্য হচ্ছে । গত ২৪ আগস্ট এমন এক ভূক্তভোগী প্রবাসীর সূত্র ধরেই আমি দূতাবাসের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য উদঘাটন করতে সক্ষম হই ।

খ) বর্তমানে MRP জন্য ৩ মাসের ডেলিভারী ডেট দিয়ে দেয় দুতাবাস করোনার কারণে । প্রতি পাসপোর্টের ফি ৯ দিনার ৫শত ফিলস্ । এখন কোন ইমার্জেন্সি ডেলিভারী নেই । কিন্ত অভিযোগ আছে দূতাবাসের কিছু অসৎ-দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও বহিরাগত দালালরা ২ সপ্তাহ বা ১ মাসের ডেলিভারীর কথা বলে ভূক্তভোগী প্রবাসীদের কাছ থেকে ৪০ থেকে ৪৫ দিনার নিচ্ছে । যার ভাগ-ভাটোয়ারা ঢাকা অফিসও পেয়ে থাকে বলে অনুমান করা হয় ।

গ ) সূত্রে জানা গেছে , দূতাবাসের অসৎ কর্মচারীদের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের পাসপোর্ট নবায়ন বা নতুন পাসপোর্ট বানানোর জন্য বাসা থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে এবং ডেলিভারী দেয় । এ ক্ষেত্রেও অসৎ কর্মকর্তারা পাসপোর্ট প্রতি ৪০ থেকে ৪৫ দিনার ঘুষ নিয়ে থাকে । ৩ মাসের পরিবর্তে ডেলিভারার সময় বেঁধে দেয় ২ সপ্তাহ থেক ১ মাসের মধ্যে । অনেক প্রবাসী জরুরী প্রয়োজনে ভিসা লাগানোর জন্য তা করতে বাধ্য হয় কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ডেলিভারী না দিতে পারলে বা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে না পারলে ভূক্তভোগি প্রবাসীদের টাকাও ফেরত দিচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে দালালরা ।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে , করোনার পূর্বে পাসপোর্ট নবায়নের জন্য প্রতি মাসে ৬ থেকে ৮ হাজার পাসপোর্ট জমা হত । এতে প্রতি পাসপোর্টে ফি বাবদ ৯ দিনার ৫ শত ফিলস্ হিসাবে আয় হত ৫৭ হাজার থেকে ৭৬ হাজার কুয়েতী দিনার প্রতি মাসে । কিন্তু করোনার পরবর্তি প্রতি মাসে এখন নবায়নের জন্য পাসপোর্ট জমা হচ্ছে প্রায় ১৫ হাজারের মত – এক্ষেত্রে মাসিক আয় ১ লক্ষ ৪২ হাজার ৫ শত কুয়েতী দিনারের মত । এই আয় বাংলাদেশ সরকারের অনেক বড় রকমের সহায়ক । এত বড় অংকের আয় হচ্ছে শুধু প্রবাসীদের কারণেই । আর এই প্রবাসীরাই দূতাবাসে ন্যায্য কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে দূতাবাসের কিছু অসৎ -দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দ্বারা হয় লাঞ্ছিত , হয় অপমানিত , হয়রানি ।

আমার আজকের এই সমীক্ষা দূতাবাসের বিরুদ্ধে নয় । আমার এ সমীক্ষা দূতাবাসের অধ:স্তন কিছু অসৎ – দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে । বর্তমান কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস কিছু অসৎ কর্মচারীদের যোগসাজসে দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে দূতাবাস এবং এই সব কিছু কর্মকর্তার কারণে কুয়েত প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধারা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন । এ ব্যপারে দুতাবাসে প্রবাসীদের ন্যায্য সেবা নিশ্চিত করতে আমি দূতাবাসের উধর্বতন অফিসার মহোদয় ও নবাগত মান্যবর রাস্ট্রদূত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশিকুজ্জ্মানের সদয় দৃস্টি আকর্ষণ করছি ।

পরিশেষে , কুয়েতস্থ বিভিন্ন রাজনৈতিক , সামাজিক ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের প্রতি বিশেষ অনুরোধ করছি , কুয়েত প্রবাসীদের দূতাবাসে ন্যায্য সেবা প্রতিষ্ঠার জন্য আপনারা আরও সোচ্ছার হউন । চলুন সবাই মিলে “ দালাল নির্মূল ও দূর্নীতিমুক্তকরণ” কমিটি গঠন করে প্রবাসীদের ন্যায্য অধিকার ও সেবা করার জন্য দূতাবাসের সৎ অফিসারদের সহযোগিতায় আমরা হাতে হাত মিলিয়ে মহৎ কাজ করতে ব্রতী হই এবং ভূক্তভোগি অসহায় প্রবাসীদের সাহায্যে এগিয়ে আসি । তা’হলেই দূতাবাসে প্রতিস্ঠিত হবে দুর্নীতি মুক্ত , দালাল মুক্ত সুন্দর সুস্ট পরিবেশ – আর এভাবেই হতে পারে দূতাবাসকে দালাল মুক্ত ও দুর্নীতি মুক্তির উত্তরণের একমাত্র উপায় ।

২৯ আগস্ট ২০২০ ইং কুয়েত ।

SHARE THIS ARTICLE