গৃহে অন্তরীণ অবস্থা থেকে বেগম জিয়াকে মুক্ত করাই এখন সবচেয়ে জরুরি কাজঃ মির্জা ফখরুল

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃগৃহে অন্তরীণ অবস্থা থেকে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করাই এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ। সরকারের নির্বাহী আদেশে আরো ছয় মাস খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করার সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আজকে আমার কাছে যা মনে হয়, বড় একটা সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এই গৃহান্তরীণ থাকা। তিনি গণতন্ত্রের নেত্রী, দীর্ঘকাল তিনি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাকে বের করে আনাটা সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। এটা এক নম্বর কাজ। দুই নম্বর হচ্ছে, আমাদের যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যিনি বিদেশে আছেন বাংলাদেশে ফিরে আসা গণতন্ত্রের জন্যে বেশি প্রয়োজন এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা সেগুলোকে দূর করা।

মির্জা ফখরুল বলেন, মূল বিষয়টা হচ্ছে- গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করা। শুধু মাত্র রাজনৈতিক দলগুলো নয়, জনগণের মধ্যেও সেই ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে।আমি বিশ্বাস করি, এদেশের মানুষ সব সময় গণতন্ত্রের পক্ষে। তারা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হয়েছে, তারা স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়ী হয়েছে, তারা নিজেদের ভাষার অধিকার ফিরিয়ে আনতে জয়ী হয়েছে, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে জয়ী হয়েছে। ইনশাল্লাহ এখনো গণতন্ত্রের এই যে সংগ্রাম, সমাজকে মুক্ত করবার যে সংগ্রাম সেই সংগ্রামেও তারা জয়ী হবে যদি ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন সৃষ্টি করা যায়। আমি বিশ্বাস করি, আমরা সেই গণআন্দোলন সৃষ্টি করতে সক্ষম হবো।

জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন এবং ২০ দলসহ ফ্রন্টকে নিয়ে একাদশ নির্বাচনে অংশ গ্রহনের কথা তুলে ধরে ‘ভোটের আগের দিন সরকারি দলের ভোট ডাকাতি’ প্রসঙ্গও টানেন মির্জা ফখরুল।

বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ এন্ড কমিউনিকেশনের (বিএনআরসি) উদ্যোগে ‘আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস’ উপলক্ষে এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়।

এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে সারা পৃথিবীতে গণতান্ত্রিক রীতি-নীতিকে ধবংস করে দিয়ে একটি গোষ্ঠীর স্বার্থে কী অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, কী রাজনৈতিক ক্ষেত্রে, কী সামাজিক ক্ষেত্রে এটা চাপিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। বাংলাদেশে কী হচ্ছে? আজকে বাংলাদেশে যে বৈষম্য, মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন, ভোটের অধিকার হরণ, সংবাদপত্র-মত-ব্যক্তির স্বাধীনতা সব কিছু হরণ করা হয়েছে। আজকে বাংলাদেশে জনগণ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে না, এ দেশে এখন আওয়ামী লীগ ও তার ‍সুবিধাভোগী শ্রেণীর দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এই সরকারের গণতন্ত্রের সব কিছুকে হরণ করেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে জনগন ও সকল গণতান্ত্রিক দলের ‘ইস্পাত কঠিন ঐক্য’ প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, আজকে কোনো কিছুই নেই। মানুষের যে মৌলিক অধিকার ছিল, তারা (আওয়ামী লীগ) তা নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। অনির্দিষ্টাকালের জন্য ক্ষমতায় থাকতে তারা ২০১১ সালে সংবিধানে সংশোধনীর যে পাস করছে তার চতুর্থ সংশোধনীর চেয়েও খারাপ বলব আমি। জনগণের ক্ষমতার উৎসকে তারা এই সংশোধনীর মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। তারা জনগণের অধিকারে বিশ্বাস করে না। তিনি বলেন, বেগম জিয়াকে মুক্ত করলে গণতন্ত্রের মুক্তি আসবে। কিন্তু ওই মুক্তি কী করতে হলে আমাদেরকে কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। কী করে আমরা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে আমরা রাস্তায় নামতে পারব, আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলন ছাড়া আমাদের অন্য কোনো বিকল্প আছে বলে আমরা নিশ্চিত এই ব্যাপারে আমরা সকলে একমত।

জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, সরকার রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করে রাষ্ট্রের মূল ভিত্তিকে সঙ্কটগ্রস্ত করে ফেলেছে। সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতাকে টিকিয়ে রেখেছে অনিয়ম-অবিচারের বিস্তার হচ্ছে। ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে তারা রাষ্ট্রকে বিপজ্জনক অবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্র, আইনশাসন পুনরুদ্ধার করার প্রয়োজনে গণবিস্ফোরণ ঘটাতে হবে।এই লক্ষ্যে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। এছাড়া কোনো বিকল্প নেই্। যারা ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতা নিয়েছে তাদের কাছে গণতন্ত্র আশা করা, জনগণের অধিকার আশা করা, স্বাধীনতা রক্ষা করা আশা করা যায় না। এসময় বিরোধী রাজনৈতিক দলের ব্যর্থতা ও অনৈক্যের কারণে সরকার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করছে বলেও মন্তব্য করেন রব।

বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, এখন বাংলাদেশে অনুবীক্ষণ কিংবা দূরবীক্ষণ কোনোটা দিয়েই বাংলার গণতন্ত্রের কিছু দেখা যাচ্ছে না। গণতন্ত্র তো দূরের কথা, ভোটের নিশ্চয়তাই নেই। পরিকল্পনা এখান যা হয়, পরিকল্পনা পরীর মতো উড়াল দিয়ে একদল লোক অর্থ সম্পদ নিয়ে মালয়েশিয়া, কানাডা, সুইজারল্যান্ড ইত্যাদি জায়গায় পাড়ি দিচ্ছে আর জনগণ কল্পনার ধুলাবালিতে হামাগুড়ি খাচ্ছে। ব্যাংক, শেয়ারবাজার, জমি, নদী, বন, পাহাড় সব ক্ষেত্রে দখল আর লুটপাট চলছে। আমলাতন্ত্র কামলাতন্ত্রে পরিণত হয়েছে। পু্লিশ আইনভঙ্গকারী বাহিনীর খেতাব লাভ করেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য জাতীয় ঐক্যমত হওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

SHARE THIS ARTICLE