চীন ও ভারতের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব বেড়েছে !!!

আইরিশ বাংলাপোষ্ট অনলাইন ডেস্কঃ বন্ধুদেশ ভারতের কাছে গুরুত্ব বেড়েছে বাংলাদেশের। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার হঠাৎ বাংলাদেশ সফর ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর এমনই মনে করছেন দেশের আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। অত্যন্ত গোপনীয়তায় দৃশ্যত এ সফলের মূল অ্যাজেন্ডা কিংবা সাক্ষাতে  আলোচনার বিষয় কী ছিলো তা এখনো জানা যায়নি।

তবে আন্তর্জাতিক বিষয়ে চোখ রাখা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সফর ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো জোরদার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভারতের পক্ষ থেকে হয়তো প্রধানমন্ত্রীর জন্য কোনো বিশেষ বার্তা আনা হয়েছে; যাতে দু’দেশের বড় স্বার্থ থাকবে। সব মিলিয়ে এটি স্পষ্ট, ভারতের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব বেড়েছে।

বাংলাদেশকে ভারত বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে চাচ্ছে। ভারত ও বাংলাদেশ নিয়ে সমপ্রতি বেশ কিছু ধোঁয়াশা চলছিল সামপ্রতিক কয়েকটি বিষয় নিয়ে। এ সফরের মাধ্যমে সেই ধোঁয়াশাগুলো কেটে যাবে; সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। মূলত সবকিছু সমাধানের জন্য হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ভারত থেকে আকস্মিক বাংলাদেশে এসেছেন।

বিশ্লেষকদের দাবি, করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে এখন ভূ-রাজনৈতিক খেলা চলছে। এ বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে হয়তো সোজাসাপ্টা আলোচনার মাধ্যমে সম্পর্কোন্নয়ন আরো এগিয়ে নেয়া হয়েছে। চীন ও ভারতের মধ্যে  যে সঙ্ঘাত চলছে সে বিষয়ে বাংলাদেশের নীরবতা ছিলো উল্লেখ করার মতো।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের ভূমিকা কী, কেনই বা নীরবতা— এ বিষয়গুলোও হয়তো ভারত জানার চেষ্টা করেছে। লাদাখকাণ্ডের জেরে চিনের সাথে ভারতের সঙ্ঘাত বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। আর এ পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার প্রবল চেষ্টা করছে বেইজিং, যা ভারতের অত্যন্ত চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ‘হাতছাড়া’ হয়ে গেলে সীমান্ত নিয়ে আরও কঠিন অবস্থার মুখে পড়তে হতে পারে ভারতকে। তাই বিশেষ সফরের মাধ্যমে জটিলতাগুলো সমাধানের পথ খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তা এখনো সম্পূর্ণ অজানা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সাক্ষাৎ সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। অতীতে যেমন সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে ব্রিফিং করা হতো, সাংবাদিকদের মুখোমুখি করা হতো— এবারের সফরে এগুলো কিছুই ছিলো না।

এমনকি কোনো ফটোগ্রাফও প্রকাশ করা হয়নি। সাক্ষাতের বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও আলোচনা চলছে। নানা সমীকরণ চলছে। করোনা মোকাবিলায় চীনের ভ্যাকসিন ট্রায়ালের প্রস্তাব আসার আগে থেকেই ভারত সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ শুরু হয়। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের বিষয় সামনে চলে আসে। তখন থেকেই এ সফরের বিষয়টি আলোচনায় আসে।

তবে দুই দেশই এ ব্যাপারে গোপনীয়তা রক্ষা করেছে। অনেকে মনে করছেন, বাংলাদেশ অনেকটাই বাণিজ্য এবং অর্থনীতিতে চীননির্ভর হয়ে পড়েছে। চীনা ভ্যাকসিনের বাংলাদেশে ট্রায়ালের জন্যও চেষ্টা করা হচ্ছে। ভারত চায় না যে, এই চীনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল বাংলাদেশে হোক। এর মাধ্যমে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক আবার নতুন মাত্রা পাক, এটা ভারত চাইছে না।

তাই ভারত তাদের অবস্থান দৃঢ় রাখতে, ব্যবসায়িক স্বার্থ ঠিক রাখতে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ সফরের আসল অ্যাজেন্ডা কী ছিলো তা এখনো জানা না গেলেও ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা শিরোনাম করেছে, ‘হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বিদেশ সচিব’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরে নরেন্দ্র মোদির জমানায় প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে ভারতের সেটা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।

দ্য হিন্দু এক রিপোর্টে বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় দু’দেশের সম্পর্কের একটি রোডম্যাপ নিয়ে কথা হয়েছে। হিন্দুস্থান টাইমস খবরে বলা হয়, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকে একটি বিশেষ বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন শ্রিংলা।’

দ্য প্রিন্টের খবরে বলা হয়ছে, গত এক বছর ধরে ভারতের সঙ্গে চলা বাংলাদেশের শীতল সম্পর্ক আবারো আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বার্তা নিয়ে শ্রিংলার এই সফর।’ চীন বিভিন্ন উপায়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ‘আগ্রাসী সম্পর্ক’ করছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এই সফর ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করবে।’

তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ঢাকায় চীনের উপস্থিতি নিয়েই বেশি উদ্বিগ্ন ভারত। বিশেষ করে তিস্তা প্রকল্পে চীনের ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার খবর দিল্লিকে বিচলিত করেছে। চীনা ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা বাংলাদেশে চালানোর ছাড়পত্র দেয়ায় ভারতের উদ্বেগের মাত্রা আরও বেড়েছে। সিলেটে ওসমানী বিমানবন্দর প্রকল্পে চীনা অর্থায়নকেও ভারত সন্দেহের চোখে দেখছে। পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নে চীনের ভূমিকা নিয়েও দিল্লি নানাভাবে  তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।

এ নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন আমার সংবাদকে বলেছেন, ‘ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কী বিষয় নিয়ে সাক্ষাত করেছেন, হঠাৎ কেন সফর এটি এখনো অজানা। গণমাধ্যমে এ বিষয়ে আমরা এখনো কিছু দেখিনি। সাক্ষাৎকারের মূল বিষয় কী ছিলো এর বিষয়ে আমরা এখনো জানি না। দু’দেশের পক্ষ থেকে এখনো কিছু জানানো হয়নি।

তবে অনুমান করছি— ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো জোরদার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভারতের পক্ষ থেকে হয়তো প্রধানমন্ত্রীর জন্য কোনো বিশেষ বার্তা আনা হয়েছে। এককথায় বলতে গেলে, ভারতের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব বেড়েছে। বাংলাদেশকে ভারত বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে চাচ্ছে।’

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ আমার সংবাদকে বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশকে নিয়ে সমপ্রতি বেশ কিছু ধোঁয়াশা চলছিল। এই সফরের মাধ্যমে ধোঁয়াশাগুলো কেটে যাবে। সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। মূলত সবকিছু সমাধানের জন্য হর্ষবর্ধন শ্রিংলা এসেছেন বলে আমরা মনে করছি।’  

আবদুর রশীদ আরো বলেন, ‘সমপ্রতি আমরা একটি জিনিস দেখছি, করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে একটি ভূ-রাজনৈতিক খেলা চলছে। এ বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে হয়তো সোজাসাপ্টা আলোচনার মাধ্যমে সম্পর্কোন্নয়নে আরো জোর দেয়া হয়েছে।  

তবে আরেকটি বিষয়— চীন ও ভারতের মধ্যে যে যুদ্ধ চলছে সে বিষয়ে বাংলাদেশের নীরবতা ছিলো উল্লেখযোগ্য। এ বিষয়ে বাংলাদেশের ভূমিকা  কী,  বাংলাদেশের নীরবতা কেন— এ সমস্ত বিষয়ও  হয়তো ভারত বাংলাদেশ থেকে জানার চেষ্টা করেছে।’

SHARE THIS ARTICLE