প্রতিবন্ধী বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্যে সরকারী সুবিধা এবং অধিকার

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ প্রতিবন্ধী বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্যে সরকারী সুবিধা এবং অধিকার:

একটি পরিবারে যখন কোনো প্রতিবন্ধী শিশুর রোগ নির্ণয় হয় বা একটি শিশু যখন বিভিন্ন ধরণের লক্ষণ উপস্থাপন করে তা পিতামাতার জন্যে অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় এবং পরিবারের জন্যে বিভিন্ন প্রশ্নের জন্ম দেয়, তাই সঠিক স্বাস্থ্যসেবা পেতে আপনার কাছের স্বাস্থসেবা কেন্দ্র, জিপির এবং কোয়ালিফায়েড প্রফেশানালদের সহায়তা নেয়া উচিত।প্রতিবন্ধী হিসাবে রেকর্ডকৃত সঠিক সংখ্যা সম্পর্কে জানা এবং কীভাবে এটি পরিমাপ করা হয় তা অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি বিষয়। একটি নতুন সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী চার বছরের মধ্যে (২০১৪-২০১৮) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের সংখ্যা ৬৩% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বাচ্চাদের স্বাস্থ্যসেবার বাহিরে অন্যান্য কি কি সুবিধা আয়ারল্যান্ড সরকার থেকে আমরা পেতে পারি তা নিয়ে আলোকপাত করবো।কোনও প্রতিবন্ধী বাচ্চার বাবা-মা বা কেয়ারার হিসাবে, আপনি সরকার থেকে এক বা একাধিক বেনিফিট বা অন্যান্য আর্থিক সহায়তার দাবিদার হতে পারেন। প্রাথমিকভাবে এটি আপনার শিশুর যত্ন এবং তার ব্যয়বার বহন করতে সহায়তা করতে পারে। আপনারা হয়তো অবগত আছেন যে আপনি স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি আর কি কি সহায়তা পেতে পারেন তা কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শিশুর কি ধরনের প্রতিবন্ধিতা রয়েছে, বাবা-মায়ের আয় এবং আপনার বর্তমান অবস্থান কোথায় ইত্যাদি ।

১) সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার বেনিফিট:ডমিসিলিয়ারি কেয়ার ভাতা:এই ভাতা ১৬ বছরের কম বয়সী বাচ্চা যাদের বিশেষ অক্ষমতা রয়েছে তাদের সাথে বসবাসকারী পিতামাতা বা কেয়ারারকে দেয়া হয়ে থাকে। এটা মিন টেস্টেড নয় বা আপনার ইনকাম এর উপর নির্ভর করে না কিন্তু আরো কিছু শর্ত রয়েছে।১ জুন ২০১৭ সাল থেকে এই ভাতা প্রাপ্ত শিশুরা সরাসরি মেডিকেল কার্ড পাওয়ার জন্যে আবেদন করতে পারবে।

কেয়ারার ভাতা:স্বল্প আয়ের লোক যাহারা এই শিশুদের দেখাশোনা করেন তাদের জন্য এই ভাতা/অর্থ প্রদান করা হয়। আপনার শিশুকে দেখাশোনা করার জন্যে যদি আপনার কাজ/চাকরি ছেড়ে দিতে হয় তাহলে আপনি ‘কেয়ারার বেনিফিট’ নাম আরেকটি ভাতা পেতে পারেন যাহা কেয়ারার ভাতা থেকে আলাদা।

কেয়ারারের সহায়তা অনুদান:কেয়ারারের ভাতা, কেয়ারার বেনিফিট বা ডমিসিলিয়ারি কেয়ার ভাতা প্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি বার্ষিক অর্থ প্রদান করা হয়।

২) হেলথ সার্ভিস এক্সেকিউটিভ স্কিম:দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা প্রকল্প:এই প্রকল্পটি বিভিন্ন ধরণের রোগের চিকিত্সার জন্য বিনামূল্যে ওষুধ, ওষুধ এবং চিকিত্সা এবং অস্ত্রোপচার সরঞ্জাম সরবরাহ করে। এটা পাওয়ার জন্যে বাবা-মায়ের আয় বা অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করা হয়না।কেয়ারার জিপি ভিজিট কার্ড:আপনার মেডিকেল কার্ড না থেকে থাকলে, আপনি যদি সম্পূর্ণ বা অর্ধ-হারে কেরিয়ারের বেনিফিট বা কেয়ারার ভাতা পান তবে আপনি বিনামূল্যে আপনার জিপিতে যেতে পারেন।

৩) ট্যাক্স ক্রেডিট:বিশেষ চাইল্ড ট্যাক্স ক্রেডিট:আপনার যদি এমন কোনও শিশু থাকে যারা স্থায়ীভাবে শারীরিক বা মানসিকভাবে অসুস্থ এবং নিজের দেখাশোনা করতে অক্ষম হয় তবে আপনি এই বিশেষ চাইল্ড ট্যাক্স ক্রেডিটএর আবেদন করতে পারেন।

আবাসন:শিশুর প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে আপনি আবাসনের জন্যে লোকাল কাউন্সিলে আবেদন করতে পারেন। এছাড়া প্রতিবন্ধী শিশু এবং ব্যক্তিদের জন্য আবাসন অভিযোজন অনুদান যা আপনার বাড়িকে পরিবর্তন করার অনুমতি দেয়, যার প্রধান উদ্দেশ্য আবাসন শিশুর জন্যে নিরাপদ এবং উপযোগী করে তুলা।

উষ্ণ হোমস্ স্কিম:আপনার বাড়ির এনার্জি রেটিং এবং উষ্ণতার উন্নতির জন্য অর্থায়ন দেয়া হয়ে থাকে আপনি যদি বাড়ির মালিক হন এবং ইতিমধ্যে ডোমিসিলারি কেয়ার ভাতা পান।

ট্রান্সপোর্ট এবং মোবিলিটি:প্রতিবন্ধী ড্রাইভার এবং যাত্রীদের জন্য একটি বিশেষভাবে নির্মিত বা অভিযোজিত গাড়ী কিনতে বা ব্যবহার করতে আপনাকে সহায়তা করার জন্য একাধিক কর ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে। শিশুদের প্রতিবন্ধীতার উপর ভিত্তি করে আপনি বিশেষ পার্কিং পার্মিট পেতে পারেন।আপনার শিশুর রোগের উপর ভিত্তি করে আপনি উপরোক্ত এক বা একাধিক সহায়তা পেতে পারেন, তাছাড়াও অনেক শিশু তাদের পেম্পারস বা নেপি নিকটস্থ হেলথ সেন্টারে পাবলিক হেলথ নার্সের মাধ্যমে পেতে পারেন। আপনি বিস্তারিত জানতে আপনার হেলথ সেন্টারে এ সোশ্যাল ওয়ার্কাএর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। যেকোনো আবেদনের জন্যে আপনাকে অবশই অনেকগুলো কাগজপত্র যেমন জিপি রিপোর্ট, এসেসমেন্ট অফ নিড রিপোর্ট, মাল্টিডিসিপ্লিনারি টীম রিপোর্ট ইত্যাদি প্রস্তত রাখতে হবে।আয়ারল্যান্ড এ বিভিন্ন পেরেন্টস গ্রুপ রয়েছে যেখানে আপনারা সংযুক্ত হয়ে অনেক ধরণের তথ্য আদান প্রদান করতে পারেন। আপনাদের কাছে আরো কোনো তথ্য থাকলে আমাদের এই ”হেলথ সাপোর্ট গ্রুপ বাংলাদেশ” এর মাধ্যমে শেয়ার করতে পারেন। আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণে এই গ্রুপ আমাদেরকে বিশেষ করে যাদের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু রয়েছেন তাদের মধ্যে থেকে অনেককেই সচেতন করতে অনন্য ভূমিকা পালন করতে পারে ।

লেখক:

সাইফুজ্জামান খান

সিনিয়র অকুপেশনাল থেরাপিস্টবিএসসি (অনার্স) ইন অকুপেশনাল থেরাপি, এম এস সি (লিডারশীপ ও হেলথকেয়ার মেনেজম্যান্ট-অধ্যয়ণরত UCC/ IMI)হেলথ সার্ভিস এক্সেকিউটিভ, আয়ারল্যান্ডসেন্সরি ইন্টিগ্রেশন থেরাপিস্ট, অটিজম পেরেন্টস ট্রেইনার (NAS লাইসেন্সড-UK)প্ৰাক্তন লেকচারার মেডিসিন ফ্যাকাল্টি অফ ইউনিভার্সিটি অফ ঢাকাবাংলাদেশ হেলথ প্রফেশন্স ইনস্টিটিউট, সি আর পি।

তথ্যসূত্র: হেলথ সার্ভিস এক্সেকিউটিভ ওয়েবসাইট

আর্টিকেল উৎস: “হেলথ সাপোর্ট গ্রুপ বাংলাদেশ

SHARE THIS ARTICLE