প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.)-কে যে কারণে ভালোবাসবো

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ মুহাম্মাদ নামের বাংলা অর্থ ‘প্রশংসনীয়’ এবং এই নামটি পবিত্র কোরআনুল কারিমে মোট চারবার এসেছে।

পবিত্র কোরআনে মুহাম্মাদকে বিভিন্ন উপাধির মাধ্যমে সম্বোধন করা হয়েছে। উপাধিগুলো হলো- নবী, রাসূাল, আল্লাহর বান্দা (‘আবদ’), ঘোষক (‘বশির’), [কোরআন ২:১১৯] সাক্ষী (‘শহিদ’), [কোরআন ৩৩:৪৫] সুসংবাদদাতা (‘মুবাশ্শীর’), সতর্ককারী (‘নাজির’), [কোরআন ১১:২] স্মরণকারী (‘মুজাক্কির’), [কোরআন ৮৮:২১] সৃষ্টিকর্তার বার্তাবাহক (‘দাঈ’) [কোরআন ১২:১০৮] আলোকিত ব্যক্তিত্ব (‘নূর’), [কোরআন ০৫:১৫] এবং আলো-প্রদানকারী বাতি (‘সিরাজ মুনির’)। [কোরআন ৩৩:৪৬]

I love prophet Muhammad(PBUH) - Inspirational Islamic Quotes

মুমিন হতে হলে মহানবী (সা.)-কে ভালোবাসতেই হবে। তিনি নিজেই বলেছেন, ‘মা–বাবা, সন্তান এমনকি সবার চেয়ে আমি তোমাদের কাছে প্রিয়তর না হওয়া অবধি তোমরা কেউ মুমিন হবে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৫)

হাদিসের ব্যাখ্যায় খ্যাতিমান মুহাদ্দিস কাজী আয়াজ (র.) বলেন, ‘নবী (সা.)-কে ভালোবাসা ইমান বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত।’ (ফাতহুল বারি: ১/৫৯)

প্রশ্ন হলো, ‘ভালোবাসতেই হবে’ এমন আদেশ অদ্ভুত কি না। কারণ, ভালোবাসা তো একটি মানবীয় আবেগ। আবেগ-অনুভূতি কখনো আদেশ-নিষেধের প্রাচীরে বেঁধে ফেলা যায় না। যেমন, মহানবী (সা.) প্রার্থনা করে বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ, এটা (অন্তর) আমার অংশ, যার মালিক তুমি। আর যার মালিক আমি নই-তুমি, তার ব্যাপারে আমায় তিরস্কার কোরো না। (যাওয়াইদুস সুনান আলাস সহিহাইন, হাদিস: ৪৫০৪)

Why 'Muhammad' is the most popular name among Muslims - Muslim Ink

এ ভালোবাসার ব্যাখ্যা কী

কাজী আয়াজ (র.) বলেন, ভালোবাসার প্রকৃতি হলো তরল, যা অনুকূল বিষয়ের দিকে ঝুঁকে পড়ে। ভালোবাসা কাম্য হতে পারে: ১. উপভোগের জন্য; যেমন সুন্দর চেহারা, চমৎকার কণ্ঠ, সুস্বাদু খাবার বা পানীয় ভালোবাসা। ২. উদ্বেল হৃদয়ের তৃপ্তি জন্য; যেমন সজ্জন, ওলামা, বরেণ্য ব্যক্তিদের ভালোবাসা। ৩. আবার কারো দান বা অনুগ্রহের কারণেও হৃদয় তার প্রতি ঝুঁকে পড়ে। এসব বিষয় এমন যে সুস্থ স্বভাব সেদিকে ধাবিত হবেই।

এবার বলুন, ভালোবাসা পাওয়ার জন্য মহানবী (সা.) এর মধ্যে ওপরের কোন গুণটির অভাব রয়েছে? তিনি তো বরং ছিলেন সততা, করুণা ও সৌন্দর্যের সব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।

যদি কোনো শাসককে তাঁর সফল নেতৃত্বের কারণে, কোনো সমাজনেতাকে তার সুষম সমাজসেবার কারণে, অথবা কোনো উপদেশদাতাকে তার অসাধারণ জ্ঞানের কারণে ভালোবাসা স্বাভাবিক হয়, তাহলে মহানবী মুহাম্মাদ (সা.) সবার আগেই ভালোবাসা পাওয়ার অধিকারী। (আশ-শিফা: ২/৫৭৯-৮১)

I LOVE PROPHET MUHAMMAD S.A.W - Samsung Members

ভালোবাসা কীভাবে হবে

যে কাউকে ভালোবাসার পূর্বশর্ত তাকে চেনা। ইমাম গাজালি (র.) বলেন, পরিচয় ও জানাশোনা ছাড়া ভালোবাসার কথা কল্পনা করা যায় না। মানুষ যাকে চেনেন না, তাকে ভালোবাসতে পারেন না। (আল-মুহাযযাব মিন ইহয়াই উলুমিদ দীন: ২/৩৬৪)

অর্থাৎ, যারা সে সময় তার সঙ্গে শত্রুতা করেছেন, অধিকাংশই করেছেন তাকে না জানার কারণে। কাছে থেকে জানার সুযোগ পেলে অবশ্যই তাদের অবস্থান ভিন্ন হতো।

একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। হোনাইফা গোত্রের সুমামাকে সাহাবিরা গ্রেপ্তার করে আনলেন। তাকে মসজিদের খুঁটিতে বেঁধে রাখা হলো। মহানবী (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কী চাও? সুমামা বললেন, মুহাম্মদ, আমি ভালো চাই। আমাকে মৃত্যুদণ্ড দিলে অপরাধ নেই, আমি তারই যোগ্য। তবে অনুগ্রহ করলে একজন কৃতজ্ঞকে অনুগ্রহ করবেন। আর সম্পদ চাইলে যা খুশি চাইতে পারেন। নবীজি (সা.) তাকে রেখে চলে গেলেন। পরদিন এবং তার পরদিনও অনুরূপ কথোপকথন হলো। নবীজি (সা.) বললেন, তাকে ছেড়ে দাও।

The greatest speech of all time by the best man of all time | The Asian Age  Online, Bangladesh

সুমামা কোথাও থেকে গোসল সেরে মসজিদে ফিরে এলেন। বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। খোদার কসম, মুহাম্মাদ, দুনিয়াতে আপনার চেয়ে ঘৃণার চেহারা আমার কাছে ছিল না। আপনার ধর্মও এত অপ্রিয়, আপনার শহরও এত নিকৃষ্ট লেগেছে যেমন আর কোনোটা নয়। এখন আপনিই সবচেয়ে প্রিয়, আপনার ধর্মই সবচেয়ে পছন্দের, আর এই শহরই সবচেয়ে ভালো। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৩৭২)

সিরাত গবেষকেরা বলেন, সুমামার এই পরিবর্তন ঘটেছে মসজিদের খুঁটিতে তিন দিন বাঁধা থাকার সময়ে। এই সময়ে তিনি মহানবী (সা.)-কে জানতে পেরেছেন খুব কাছ থেকে।

মক্কা বিজয়ের পর উতবার মেয়ে হিন্দাও বলেছিলেন, ‘আল্লাহর রাসূল (সা.), ভূপৃষ্ঠে আপনার শিবিরের সবাইকে অপমান করা আমার কামনা ছিল। কিন্তু এখন তাদের সম্মান করাই আমার সবচেয়ে প্রিয়।’ (সহিহ বোখারি, হাদিস: ৩৮২৫)

অথচ উহুদ যুদ্ধে তিনি ক্ষোভে নবীজির (সা.) চাচা হামজার কলিজা চিবিয়েছেন। তারপর মক্কা বিজয়ের পর দেখেছেন মহানবী (সা.) এর মহানুভবতা। যারা তাকে দেশছাড়া করেছেন, এমনকি যেখানে আশ্রয় পেয়েছেন, সেখানেও হামলা করেছেন, আজ তিনি বদলা নেননি, সমান আচরণও ফিরিয়ে দেননি। ক্ষমা করে দিয়েছেন।

হানবী (সা.)-কে জানতে হলে

সাহাবা প্রজন্ম তাকে জেনেছেন- দেখে এবং তার সঙ্গে ওঠাবসা করে। এই মর্যাদা আল্লাহ শুধু তাদেরই দিয়েছেন। অন্যরা, মানে আমরা তাকে জানতে পারি তার জীবন-চরিত পাঠ করে। যাইনুল আবেদিন (র.)- নবীজি (সা.) এর নাতি হোসাইন (রা.) এর ছেলে- বলেন, আমরা নবীজি (সা.) এর যুদ্ধজীবনের পাঠ ও দর্শন সেভাবে জেনেছি, যেভাবে জেনেছি কোরআনের সূরাগুলো। (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া: ৩/২৪২)

ইবনুল কাইয়িম (র.) বলেন, নবীজি (সা.)-কে যিনি নিজের শিক্ষক ও আদর্শ বানাবেন, তিনি নিশ্চয় তার জীবনী ও কর্মনীতি অধ্যয়ন করবেন। কীভাবে ওহি এসেছে, সাহাবিরা কেমন ছিলেন- সেসব পড়ে। এভাবে জানতে থাকলে একসময় যেন বা তিনি নিজেই হয়ে উঠবেন রাসূলের সঙ্গে থাকা সাহাবিদের একজন। (মাদারিজুস সালেকিন: ৩/২৬৮)

Special Intercession Of The Prophet Muhammad - Ariosan

সারকথা হলো প্রেম-ভালোবাসা কোনো ঐচ্ছিক কাজ নয় নিশ্চয়। কোনো আদেশ-নিষেধ তাই প্রেমের ক্ষতি বৃদ্ধি করতে পারে না। ইসলামও চায় না, অন্তরে এটা আদেশের মাধ্যমে আসুক। বরং মহানবীর (সা.) আচরণই যুগে যুগে মানুষদের বিস্ময়ে বিমুগ্ধ করেছে, তাদের ভালোবাসার পথে নিয়ে গেছেন। শুধু মনে রাখতে হবে, এই ভালোবাসা এমন এক সম্পর্ক, যা একজন মুমিন ও তার রাসূলের মধ্যে এবং একজন মুসলমান ও তার ধর্মের মধ্যে বন্ধন সৃষ্টি করে।

SHARE THIS ARTICLE