বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারী সংক্রমণের চূড়ায়, সেপ্টেম্বরে-একদিনে ১০,০০০ মৃত্যুর সম্ভাবনা। লন্ডন ইম্পেরিয়েল কলেজ প্রতিবেদন

ডাঃ জিন্নুরাইয়ান জাইগিরদারঃ লন্ডন ইম্পেরিয়েল কলেজের কোভিড-১৯ মহামারির দৃশ্যচিত্র বর্ননায় এক সপ্তাহের আগের তুলনায় বর্তমানে এক সম্পূর্ন ভিন্ন এক ভয়াবহ চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। ইম্পেরিয়েল কলেজের এই হিসেব বাংলাদেশ সরকারের প্রদত্ত কোভিড-১৯ শনাক্তের সংখ্যা এবং প্রতিদিনের মৃত্যুর প্রদত্ত পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করেই নির্ধারন করা হয়েছিলো। এই পরিসংখান অনুসারে যদি বাংলাদেশ সরকার মহামারী প্রশমনের কোন ধরনের পদক্ষেপ না নিত তাহলে এই সংক্রমন দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেয়ে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে চূড়া অতিক্রম করত এবং সেই হিসেবে একদিনে প্রায় এক কোটি মানুষ আক্রান্ত হতে পারত এবং চূড়ায় এক দিনে মৃত্যুর সংখ্যা হতে পারত এক লক্ষের কাছাকাছি। ইম্পেরিয়েল কলেজের হিসেব অনুসারে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত প্রাথমিক লকডাউন এই সংক্রমণ ৭৫% প্রশমিত করতে সক্ষম হয় যার কারণে তারা মনে করছিলো যে সংক্রমনের চুড়া পরিবর্তিত হয়ে জুনের পরিবর্তে অক্টোবর মাসে যাবে এবং সেই সময় চূড়ান্ত দিনে এক দিনে ৬৫০০ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। কিন্তু সরকার প্রদত্ত সর্বশেষ ৭ই জুনের হিসাব পুনরায় পর্য্যালোচনা করে দেখা যায় যে এই সম্ভাবনা পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিলো এবং সংক্রমন সংকুচিত হয়ে চূড়ান্ত সংক্রমণ জুন মাসের শেষের দিকে হতে পারত এবং চূড়ান্ত দিনে মৃত্যুর সম্ভাবনা ৮২ জন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এই প্রদর্শিত হিসাব একটা চূড়ান্ত সফলতার হিসাব হতে যাচ্ছিলো।


কিন্তু বিধি বাম হয়ে দৃশ্য পুনরায় পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে, দেখুন ইম্পেরিয়েল কলেজ এখন কি হিসেব দেখাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের লক ডাউন শিথিল করে দিয়ে সারা দেশে বিভিন্ন ধরনের কার্য্যকলাপ খুলে দেবার বদৌলতে এই হিসেবে এক বিরাট পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। ইম্পেরিয়েল কলেজের এই হিসেব অনুসারে প্রাথমিক লক ডাউনে সংক্রমণ কমে এসেছিলো ৭৭% এর মত কিন্তু মে মাসের শেষে বাংলাদেশ সরকারের নীতিগত পরিবর্তনের কারণে দেশের জনগণ সংক্রমণ প্রশমন ৭৭% থেকে কমে গিয়ে এই মুহূর্তে ৪১% এসে দাঁড়িয়েছে (ইম্পেরিয়েল কলেজের গুগল কোভিড-১৯ বাংলাদেশের সামাজিক তৎপরতা প্রতিবেদন অনুসারে) ।
যদি বর্তমান এই অবস্থার কোন রকম পরিবর্তন না হয় অর্থাৎ সরকারের এই শিথিলতা অপরিবর্তিত থাকে তাহলে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ বৃদ্ধি সেপ্টেম্বর মাস পর্য্যন্ত অব্যাহত থাকবে যার চূড়ান্ত দিনে মৃত্যু এক দিনে ১০,২০০ এর মত হতে পারে এবং এর পর কমতে শুরু করে এই মহামারী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অন্তিম মুহূর্ত দেখবে। �নেত্র নিউজ নামক এই নূতন অনলাইন মেডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয় যে, এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, বাংলাদেশ সরকার কোনভাবেই এই ভয়াবহ অবস্থায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর এই সংখ্যায় পৌঁছাতে দিতে পারেনা। আশা করা যায় যে, সরকার দ্রুত শিথিলতা পরিহার করে দেশ ও জাতিকে রক্ষা কল্পে পুনরায় কঠিন লক ডাউন প্রবর্তন করবে। তারা মনে করে যে, যদি পুনরায় লক ডাউন আরোপ করে সংক্রমণ প্রশমিত করার বর্তমান হার ৪১% থেকে কমিয়ে এমনকি ৬০% পর্য্যন্ত আনা যায় তাহলে সংক্রমণের বর্তমান বৃদ্ধি হ্রাস পেয়ে আগস্ট মাসে চুড়া অর্জন করে চূড়ান্ত দিনে মৃত্যু সংখ্যা ৯০০ পর্য্যন্ত নামিয়ে আনা সম্ভব। �এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয় যে, এই ধরনের গাণিতিক হিসাব অনেক ধরনের সম্ভাবনা ও ধারনার উপর ভিত্তি করে করা হয় বলে এই পরিসংখ্যানের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে। �১। এটা হতে পারে যে, গুগলের সামাজিক তৎপরতা প্রতিবেদন সঠিকভাবে মানুষের চলাচলের গতিবিধি নির্ধারন করতে ব্যার্থ হয়েছে তার ফলে এই সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সম্ভাবনার হিসেব যথেষ্ট সংখ্যায় কমে আসবে।


২। বাংলাদেশ সরকার যদি তাদের নীতিতে পরিবর্তন এনে সংক্রমণ প্রশমিত করতে সক্ষম হয় তাহলে এই হিসেব অন্য রকম হতে বাধ্য। �৩। ইম্পেরিয়েল কলেজের এই মডেল শুধুমাত্র বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত মৃত্যুর সংখ্যার উপর ভিত্তি করে নির্নয় করা হয়েছে কিন্তু এই মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা যথেষ্ট বেশী এটা মোটামুটি নিশ্চিত করে বলা যায় কিন্তু কত বেশী সেটা নিরূপণ করা এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। তাই এই পরিসংখ্যান এই রোগে মৃত্যুর প্রকৃত পরিসংখ্যান বেশ কম প্রদর্শনের সম্ভাবনা প্রচুর। �৪। যখন নূতন সরকারী পরিসংখ্যান এই মডেলে যুক্ত করা হয় তখন প্রতিদিন কিছু না কিছু পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকে।
৫। যেহেতু ইম্পেরিয়েল কলেজ ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশনের প্রদত্ত পরিসংখ্যানের উপর নির্ভরশীল তাই ৭ই জুনের এই পরিসংখ্যান বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত ৬ই জুনের প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। �
মন্তব্যঃ আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এই প্রতিবেদন সঠিক হতে পারেনা কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত যে চিত্র নিজেরা সংবাদপত্র এবং বন্ধুমহল থেকে পাচ্ছি সেই পরিসংখ্যান ও ভয়াবহ। আমি এই প্রতিবেদনটিকে বাংলায় অনুবাদ করলাম যদি উপর মহলের কারো নজরে আসে তাহলে এই পরিসংখ্যান বাংলাদেশ সরকারের উচ্চমহলে যেন সতর্কভাবে পর্য্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় সেই প্রত্যাশায়। আল্লাহ আমাদের সহায় থাকুন। �

সূত্রঃ “নেত্র নিউজ”

SHARE THIS ARTICLE