আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ গতকাল সবার দৃষ্টি ছিল নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার দিকে। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী আবদুল কাদের মির্জার সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ, নিজ দলের এমপি-সিনিয়র নেতাদের অবিরাম সমালোচনা আর অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে তির্যক কথাবার্তা- ওই পৌর নির্বাচনের প্রতি মানুষকে কৌতূহলী করে তোলে। দেখা গেল, অন্য যে কোনো পৌরসভার চেয়ে শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে বসুরহাটে। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীসহ বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীও স্বীকার করে নিয়েছেন ভোট সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। ব্যতিক্রমী এ নির্বাচনে মেয়র পদে হ্যাটট্রিক বিজয় অর্জন করলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই আবদুল কাদের মির্জা। রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল আলমের দেওয়া ঘোষণা অনুযায়ী, আবদুল কাদের মির্জা ১০ হাজার ৭৩৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির কামাল উদ্দিন চৌধুরী পেয়েছেন ১ হাজার ৭৭৮ ভোট আর জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশাররফ হোসাইন ১ হাজার ৪৫১ ভোট। কোনো গোলযোগ ছাড়াই ভোট গ্রহণ হয়। ২১ হাজার ১১৫ ভোটারের এ পৌরসভায় কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতিও ছিল ব্যাপক।
উৎসবমুখর পরিবেশে প্রথমবারের মতো ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটাররা ভোট দেন। সহিংসতা, সংঘাতের সব জল্পনা-কল্পনা পাশ কাটিয়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হওয়ায় সব দলের প্রার্থী খুশি। এর আগে কাদের মির্জা একের পর এক পথসভায় দলীয় কয়েকজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলেন। ভাইকেও ছেড়ে কথা বলেননি তিনি। দলের অন্য সিনিয়র নেতাদের উদ্দেশেও বাক্যবাণ ছুড়ে দেন। সংসদ নির্বাচন নিয়ে তাঁর বক্তব্য জাতীয় রাজনীতিতে বিরোধী দলগুলো অনিয়মের নজির হিসেবে তুলে ধরলে জাতীয় অঙ্গনেও আলোচনায় আসেন তিনি। গতকাল অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর তিনি বলেন, ‘অপরাজনীতি’র বিরুদ্ধে তিনি আগের মতোই কথা বলে যাবেন।ফল ঘোষণার পর সমর্থকদের নিয়ে বসুরহাট রূপালী চত্বরে তাৎক্ষণিক বিজয় সমাবেশ করে সবাইকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি সে প্রসঙ্গেও কথা বলেন কাদের মির্জা। তিনি বলেন, আজকের এ বিজয় অন্যায়-অবিচার-জুলুমের বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার বিজয়। বাঙালি জাতির স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের বিজয়, এ বিজয় জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের বিজয়। এ বিজয় জননেতা ওবায়দুল কাদেরের উন্নয়নের বিজয়। তিনি বলেন, আমি আমৃত্যু অন্যায়, অবিচার, অপরাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলে যাব। যেসব ওয়াদা আপনাদের সঙ্গে করেছি জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও তা পূরণ করব।
বক্তব্যে তিনি স্থানীয় প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব বাহিনী, গণমাধ্যমকর্মী, দলীয় নেতা-কর্মী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীসহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। এ সময় তিনি সারা দেশে দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের প্রতি বিজয়কে উৎসর্গের ঘোষণা দেন। বলেন, আমি আমৃত্যু অন্যায়, অবিচার, অপরাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলে যাব। যেসব ওয়াদা আপনাদের সঙ্গে করেছি জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও তা পূরণ করব।
এ নির্বাচনে জয় পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দলের নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিয়ে তাঁকে বরণ করে নেন। জবাবে আবদুল কাদের মির্জা তাদের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান। এ সময় কিছু কর্মীর নাম উল্লেখ করে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
এর আগে সকাল ৮টায় শুরু হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। ভোটার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে নারী ভোটারের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে জমে ওঠে এবারের বসুরহাটের পৌর নির্বাচন।
নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে মাঠে ছিলেন পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসারের ৪০০ সদস্য, র্যাবের তিনটি টিম, বিজিবির চার প্লাটুন, পুলিশের মোবাইল টিম নয়টি, স্ট্রাইকিং টিম দুটি, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নয়জন ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট একজন। এ নির্বাচনে প্রধান দুই দলের প্রার্থীসহ মেয়র প্রার্থী তিন, সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ২৫ ও সংরক্ষিত (নারী) কাউন্সিলর প্রার্থী সাতজন। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত বসুরহাট পৌরসভায় মোট ভোটার ২১ হাজার ১১৫ জন। এর মধ্যে নারী ১০ হাজার ৪৯, পুরুষ ১০ হাজার ৬২১ জন।