মানবাধিকার কমিশন জেগে জেগে ঘুমাচ্ছে, বলেছেন হাইকোর্ট ।

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ মানবাধিকার কমিশন চরম অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে এবং জেগে জেগে ঘুমাচ্ছে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়ে সাত বছর আগে রাজধানীর মিরপুরে গৃহকর্মী খাদিজা নির্যাতনের ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ৬০ দিন সময় বেঁধে দিয়েছেন হাইকোর্ট। খাদিজার মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার অভিযোগে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিরুদ্ধে দায়ের করা রিটের পূর্ণাঙ্গ রায়ে পর্যবেক্ষণ ও সময় বেঁধে দেওয়াসহ বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত ১৮ জুন পূর্ণাঙ্গ এ রায়ে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিল স্বাক্ষর করেন। বুধবার এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ প্রকাশ করা হয়েছে। হাইকোর্ট মানবাধিকার কমিশনের প্রতি বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। সেগুলো হলো: ১. খাদিজা নির্যাতন মামলার অভিযোগে কমিশন মানবাধিকার রক্ষায় এবং প্রতিকার দিতে মারাত্মকভাবে ব্যর্থ এবং আইনি অবহেলার পরিচয় দিয়েছে। ২. কমিশন যেভাবে আদেশ দিয়েছে তাতে কোনোভাবেই পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায় না যে, এ আদেশগুলো কমিশনের আদেশ নাকি কোনো সদস্যের আদেশ এবং ওই সদস্য এমন আদেশ আদৌ দিতে পারে কিনা। মানবাধিকার কমিশন আইনের ১১(৩) এবং ২৮ ধারার বিধানে এ ধরনের আদেশের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ। ৩. কমিশনকে এ মর্মে নির্দেশনা দেওয়া যাচ্ছে যে, কমিশন যেন সঠিক বিধি মেনে সদস্য বা সদস্যদের পূর্ণ নাম উল্লেখ করে আদেশ পাস করে এবং আদেশের সই মুহুরি (নকল কপি) যাতে ভুক্তভোগী পেতে পারেন তার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ৎ ৪. কমিশন যে খসড়া বিধিমালাটি তৈরি করে রেখেছে তা অতি দ্রুত মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত করে গেজেটের মাধ্যমে প্রকাশ করবে। ৫. আইনের ১৬ এবং ১৮ ধারার বিধান অনুযায়ী মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে অনুসন্ধান বা ক্ষেত্রমতো তদন্ত করে যথাযথ সুপারিশ করার ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য কমিশনকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। ৬. কোনো সরকারি কর্তৃপক্ষ বা কর্মকর্তা কমিশনের আদেশ-নির্দেশ কর্ণপাত/বিবেচনা না করলে বা অবহেলা করলে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের কাছে আবেদন (রিট মামলা) করার জন্য কমিশনকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। ৭. কমিশন আইনগতভাবে একটি আধা-বিচারিক কর্তৃপক্ষ। সুতরাং, এটি অবশ্যই ন্যায়বিচারের সব নীতি মেনে চলতে বাধ্য। এ রায় প্রাপ্তির ৬০ দিনের মধ্যে খাদিজা নির্যাতনের বিষয়ে শুনানি সম্পন্ন করে কী প্রতিকার, ক্ষতিপূরণের সুপারিশ বা অন্য যেসব সুপারিশ প্রস্তাব করা যায় তা করতে কমিশনকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। যদি শুনানিতে খাদিজার মানবাধিকার লঙ্ঘনের সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে আইনের ১৯ ধারা মতে খাদিজা বরাবর যথাযথ ক্ষতিপূরণের সুপারিশ কমিশন করবে। যথাযথ ব্যবস্থা এবং সাময়িক কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে একের পর এক পত্র দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর। পাঁচ বছর ধরে মানবাধিকার কমিশন ২৬টি অর্থহীন তাগিদপত্র দিয়েছে। অথচ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি পত্রেরও জবাব দেয়নি। এ বিষয়ে সিসিবি ফাউন্ডেশন মানবাধিকার কমিশনকে আইনি নোটিস পাঠায়। পরে কমিশনের সর্বশেষ আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে ২০১৮ সালে একটি রিট দায়ের করে সিসিবি ফাউন্ডেশন। সিসিবি ফাউন্ডেশের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ব্যরিস্টার মো. আব্দুল হালিম, অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান ও জামিউল হক ফয়সাল। মানবাধিকার কমিশনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভাকেট ফৌজিয়া করিম ফিরোজ। ওই রিট মামলায় মানবাধিকার কমিশনের প্রতি রুল জারি হয় এবং শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর হাইকোর্ট রায় প্রদান করেন যে, মানবাধিকার কমিশন আইনে অর্পিত তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না। গৃহকর্মী খাদিজা নির্যাতনের মতো মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে মানবাধিকার কমিশন যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে পরিষ্কার যে, তারা দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ-সচেতন নয়। দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনে প্রতিকার দিতে মানবাধিকার কমিশন আইনে অর্পিত দায়িত্ব পালনে অবহেলার পরিচয় দিয়েছে। আদালত রায়ে স্পষ্টভাবে মত দেন যে, ‘মানবাধিকার রক্ষায় কমিশন চরম অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে এবং কমিশন জেগে জেগে ঘুমাচ্ছে। পাঁচ বছর ধরে কীভাবে কমিশন এতটা অদক্ষতা, অকার্যকর ও দায়িত্বহীনতার কাজ করে অভিযোগটি ঝুলিয়ে রেখেছে। কমিশনকে আইনে দেওয়ানি আদালতের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে কিন্তু সেই ক্ষমতাও কমিশন প্রয়োগ করেনি এবং এ পাঁচ বছরে খাদিজা ও তার পরিবার কমিশনের দায়িত্বহীনতার কারণে পুরো সিস্টেমের ওপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। খাদিজার একটিমাত্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে পর্যালোচনায় আমাদের সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই যে, কমিশন, কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা তাদের ওপর অর্পিত আইনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে।’ এনএমএস।

SHARE THIS ARTICLE