আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ করোনা ভাইরাসের পাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার পর থেকেই আতংকিত সরকারী বেসরকারী হাসপাতাল গুলো। করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ভোগান্তির নানা অভিযোগ উঠতে শুরু হয়। আর সেই ভোগান্তি এখনো রয়েছে বলে অভিযোগ করছেন রোগীরা। চিকিৎসা না দিয়ে সাধারণ রোগীদের ফেরত পাঠানোর ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত আদেশে বলেছেন, কোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ কোনো রোগীকে চিকিৎসাসেবা প্রদানে অনীহা দেখালে এবং এতে ওই রোগীর মৃত্যু ঘটলে ‘তা অবহেলাজনিত মৃত্যু’ হিসেবে বিবেচিত অর্থাৎ ‘ফৌজদারি অপরাধ’ হিসেবে বিবেচিত হবে। দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা যথাযথভাবে দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।
এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে যাতে কভিড ও নন-কভিড সব রোগীকে পরিপূর্ণ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয় সে বিষয়টি সার্বক্ষণিক মনিটর করতে আদালত একটি মনিটরিং সেল গঠনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট-২০১২-এর ধারা অনুসারে গঠিত কমিটির সুপারিশের আলোকে বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিক রিকুইজিশন করতে পারবে।
আদালতের নির্দেশনা ও অভিমতগুলো
আদালতের আদেশে বলা হয়, ১। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারীকৃত উপরোক্ত নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কি না এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন আগামী ৩০ জুনের মধ্যে এই আদালতে দাখিলের জন্য স্বাস্থ্যসচিব (স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ) ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।
২। সরকারি নির্দেশনাগুলো পালনে ব্যর্থ ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত কোনো ধরনের শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কি না তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে হবে।
৩। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২৪ মে জারি করা নির্দেশনা অনুসারে ওই তারিখের পর ৫০ শয্যার অধিক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো ১৫ জুন পর্যন্ত কতজন কভিড এবং নন-কভিড রোগীর চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে তা উল্লেখিত তারিখের মধ্যে জমা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। তৎসঙ্গে ৫০
শয্যার অধিক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর একটি তালিকা পাঠাতে হবে।
৪। বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনাগুলো বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো যথাযথভাবে প্রতিপালন করছে কি না সে বিষয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর কর্তৃপক্ষকে ১৫ দিন পর পর একটি প্রতিবেদন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। ওই সব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৫ দিন পর পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।
৫। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর বিশেষত ঢাকা মহানগর ও জেলা, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলাসহ বিভাগীয় শহরের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো যাতে কভিড ও নন-কভিড সব রোগীকে পরিপূর্ণ চিকিৎসাসেবা প্রদান করে সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠন করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।
৬। কোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ কোনো রোগীকে চিকিৎসাসেবা প্রদানে অনীহা দেখালে এবং এতে ওই রোগীর মৃত্যু ঘটলে ‘তা অবহেলাজনিত মৃত্যু’ হিসেবে বিবেচিত অর্থাৎ ‘ফৌজদারি অপরাধ’ হিসেবে বিবেচিত হবে। দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার প্রদত্ত নির্দেশনা যথাযথভাবে দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।
৭। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে অধিকতর জবাবদিহিমূলক ও বিস্তৃত করতে হবে। ভুক্তভোগীরা যাতে এ সেবা দ্রুত ও সহজভাবে পেতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। কোন হাসপাতালে আইসিইউতে কত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে এবং কতটি আইসিইউ শয্যা কী অবস্থায় আছে, তার আপডেট প্রতিদিনের প্রচারিত স্বাস্থ্য বুলেটিন এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচারের ব্যবস্থা নিতে হবে। আইসিইউ ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং সেলে ভুক্তভোগীরা যাতে সহজেই যোগাযোগ করতে পারে সে জন্য ‘আইসিইউ হটলাইন’ নামে পৃথক হটলাইন চালু এবং হটলাইন নম্বরগুলো প্রতিদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিশেষত টেলিভিশন মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা নিতে হবে।
৮। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন কভিড-১৯ রোগী চিকিৎসার ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো মাত্রাতিরিক্ত বা অযৌক্তিক ফি আদায় না করতে পারে সে বিষয়ে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
৯। অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা মূল্য এবং রিফিলিংয়ের মূল্য নির্ধারণ করে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। খুচরা বিক্রেতাদের সিলিন্ডারের নির্ধারিত মূল্য প্রতিষ্ঠান/দোকানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃত্রিম সংকট রোধে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র এবং রোগীর পরিচয়পত্র ছাড়া অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা বিক্রয় বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করতে পারে। অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ ও বিক্রয় ব্যবস্থা মনিটরিং জোরদার করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।
১০। সরকার ইতিমধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ কভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় লাল, হলুদ ও সবুজ জোনে বিভক্ত করে পর্যায়ক্রমে লকডাউনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। এমতাবস্থায় বর্তমান পর্যায়ে লকডাউনের বিষয়ে কোনো আদেশ দেওয়া সংগত হবে না মর্মে আদালত মনে করেন।
১১। দেশে বিদ্যমান সামগ্রিক পরিস্থিতি অর্থাৎ বর্তমানে দেশে বিরাজমান করোনা পরিস্থিতি একটি ‘দুর্যোগ’ বিবেচনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গৃহীত কার্যক্রমের পাশাপাশি সরকার ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট-২০১২-এর ধারা-১৪ অনুসারে ‘ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অরডিনেশন গ্রুপ’ এর কার্যক্রমকে সক্রিয় করার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে। ওই কমিটি কার্যকর হলে কমিটির সুপারিশের আলোকে উপরোক্ত আইনের ধারা-২৬ অনুযায়ী বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিক রিকুইজিশন করা যেতে পারে।