আইরিশ বাংলাপোষ্ট অনলাইন ডেস্কঃ লকডাউনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন ব্যবসায়ীরা। সোমবার (৫ এপ্রিল) চট্টগ্রাম নগরে বিভিন্ন শপিং মলের ব্যবসায়ী-কর্মচারী ও বিভিন্ন উপজেলায় লকডাউনের প্রতিবাদে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছেন শত শত ব্যবসায়ী। এ সময় ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীদের ‘অবৈধ লকডাউন মানি না-মানব না’ বলে শ্লোগান দিতে দেখা যায়।
সমাবেশ থেকে ব্যবসায়ীরা ক্ষোভপ্রকাশ করে বলেন, সরকার লকডাউন ঘোষণা করে ব্যবসায়ীদের মারার ব্যবস্থা করেছে। সব অফিস আদালত খোলা, গার্মেণ্টস খোলা, বইমেলা খোলা, খেলাধুলাও হচ্ছে, শুধু ব্যবসায়ীদের জন্য লকডাউন? সারাদেশে লক্ষ লক্ষ দোকানে কয়েক কোটি ব্যবসায়ী-কর্মচারী কাজ করে, তাদের পরিবার কিভাবে চলবে সে চিন্তা সরকারের নেই। করোনায় মরার চেয়ে না খেয়ে মরার কষ্ট অনেক বেশি।
জানা গেছে, বিকাল ২টার কিছু পর চট্টগ্রামের বৃহত্তম মার্কেট রেয়াজুদ্দিন বাজার, তামাকুমন্ডি লেনের ব্যবসায়ীরা তিনপুলের মাথার সামনে থেকে প্রতিবাদ মিছিল বের করেন। মিছিলটি হকার মার্কেটের সামনে দিয়ে নিউমার্কেট মোড়ে গিয়ে মানববন্ধনে মিলিত হয়। মানববন্ধনে নিউমার্কেট, মিমি সুপার মার্কেট, স্যানমার ওশান সিটি, আমিন সেন্টারসহ বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা যোগ দেন। মানববন্ধনে অংশ নেয়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিভিন্ন মার্কেটের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক পৃথকভাবে বক্তব্য প্রদান করেন।
সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দোকান-পাট খোলা রাখার দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবশে করেন তামাকুমন্ডি লেইন বণিক সমিতির নেতারা। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, তামাকুমন্ডি লেইন বণিক সমিতির সভাপতি আবু তালেব, সিনিয়র সহ সভাপতি সরওয়ার কামাল, সাধারণ সম্পাদক আহমদ কবির দুলাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুজাম্মেল হক প্রমুখ।
এ সময় ব্যবসায়ীরা বলেন, গত বছরের লকডাউনে আমরা শেষ হয়ে গেছি। এবারও এক সপ্তাহের লকডাউন। এমনিতে করোনার কারণে ব্যবসা কমে গেছে তার ওপর লকডাউন মরার উপর খাঁড়ার ঘা। আমরা ব্যাংক থেকে লোন, জমি, স্বর্ণ বন্ধক দিয়ে দোকানে মালামাল তুলেছি৷ রোজার মাসে যদি আমাদের ব্যবসা করতে না দেওয়া হয় তাহলে আমরা করোনার আগে দেউলিয়া হয়ে মারা যাব। তাই সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হলেও আমাদের দোকান খোলা রাখার সুযোগ দেওয়া হোক। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা করব।
তামাককুন্ডি লেইন বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ কবীর দুলাল বলেন, ‘এ সমিতির আওতায় ১১০টি মার্কেট রয়েছে। সেইসব মার্কেটের ব্যবসায়ীসহ নিউমার্কেট, স্যানমার, ওশানসহ অনান্য মার্কেটের সমিতির সদস্যরা মিলে প্রায় ৫ হাজার ব্যবসায়ী মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন। আমাদের দাবি দাওয়া এটাই, লকডাউনে মার্কেট খুলে দেয়া হোক। গতবছরের লক ডাউনে করোনার ক্ষতি আমরা পুষিয়ে উঠতে পারিনি। এবার ব্যাংক লোন, আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ধার করে দোকানে মালামাল তুলেছি। সেই মাল বিক্রি না হলে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো? ’
নিউমার্কেট বণিক সমিতির সভাপতি সাগির আহমেদ বলেন, ‘আমরাও মানববন্ধনে অংশ নিয়েছি। আমাদের পেটে লাথি না দিয়ে সরকারের প্রতি অনুরোধ আমাদের মত ব্যবসায়ীদের বাঁচান। লকডাউনে দোকান খুলতে না পারলে আমাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।’
টেরি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমরা মানববন্ধনে অংশ নিইনি। তবে আমরা জেলা প্রশাসক মাধ্যমে সরকারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছি। আমরা দাবি জানিয়েছি, লকডাউনে রাতে দোকান খোলা রাখতে না পারলেও সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখার অনুমতি দেয়া হোক।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সারাবছর অপেক্ষা করি এই ঈদ মওসুমের জন্য। এ মৌসুমে আমরা মালামাল বিক্রি করতে না পারলে আমরা অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে যাব।
লকডাউনে দোকান খোলা রাখার দাবিতে সকাল থেকে বিক্ষোভ করেছে হাটহাজারী উপজেলা পৌরসভার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। বিক্ষোভে ব্যবসায়ীরা বলেন, দোকান বন্ধ থাকলে তারা না খেয়ে মারা যাবেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে বৈঠক করে ব্যবসায়ীরা ফিরে যান। এছাড়া হাটহাজারীর চৌধুরী হাট ইস্টার্ন শপিং সেন্টারের সামনেও ব্যবসায়ীরা দোকান খোলা রাখার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।
হাটহাজারী পৌরসভা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, ‘লকডাউন আমাদের জন্য মৃত্যুর সমান৷ করোনাকালে এমনিতে ব্যবসা নেই৷ গত বছরের লস এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। ধার করে আবার দোকানে মাল তুলেছি। এখন যদি লকডাউন হয় তাহলে ব্যবসায়ীদের পথে বসা ছাড়া উপায় নেই। আমাদের অন্তত নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হলেও দোকান খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হোক৷’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো রুহুল আমিন বলেন, ‘লকডাউনে দোকান খোলা রাখার দাবিতে ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ শুরু করে। আমি ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে বৈঠক করে করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের ঘোষিত লকডাউন মানার ব্যাপারে প্রশাসনকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করেছি। ব্যবসায়ীরা আলোচনার পর শান্ত হয়ে ফিরে গেছেন।’
দক্ষিণ চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় লকডাউন প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ করেছেন ব্যবসায়ীরা। সোমবার লোহাগাড়ার দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীরা বটতলী মোটর স্টেশনে বিক্ষোভ করছেনে। এই সময় তারা ‘লকডাউন মানি না’ বলে শ্লোগান দেন। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, বণিক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরী বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মোস্তফা কামাল, সাংগঠনিক সম্পাদক খোরশদে আলমসহ ব্যবসায়ী নেতারা।
সমাবেশ চলাকালে দোকান কর্মচারীরা সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করেন।
ব্যবসায়ীরা বলনে, ‘আমরা ব্যবসায়ীদের সারা বছররে ব্যবসা হয় এই সময়, ঈদের আগের দুই মাস। গত বছর আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এবারও যদি এই সময় মার্কেট বন্ধ থাকে তাহলে তো আমাদের পথে বসতে হবে।
ব্যবসায়ীদের সমাবেশ ও সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে তাদের সাথে কথা বলেন লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান হাবিব জিতু, সহকারী কমিশনার (ভূমি) খোরশেদ আলম, লোহাগাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ জাকের হোসাইন মাহমুদ।
দুপক্ষের মধ্যে আলোচনার পর অবরোধ তুলে নেন ব্যবসায়ীরা। এর আগে রোববার নগরের জিইসি মোড়স্থ ইউনুস্কো সিটি সেন্টারের ব্যবসায়ীরাও রাস্তায়ি নেমে বিক্ষোভ করেন।