লেবাননের প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা আদিবের পদত্যাগ

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ নির্দলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে লেবাননের মনোনীত প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা আদিব ২৬ দিনের মাথায় পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল শনিবার একটি টেলিভিশন ভাষণে আদিব বলেন, রাষ্ট্রপতি মিশেল আউনের সাথে বৈঠকের পর তিনি “সরকার গঠনের কাজ” থেকে সরে যাচ্ছেন।বিগত ৪ঠা আগস্ট বৈরুত বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরনে ২০০ জনের অধিক নাগরিকের মৃত্যু ও কয়েকশত নাগরিক আহত হবার পর, গণদাবীর প্রেক্ষাপটে হাসান দিয়াবের নেতৃত্বে বিগত সরকার পদত্যাগ করার পর বার্লিনে নিযুক্ত প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মোস্তফা আদিবকে ৩১ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ গঠনের জন্য বেছে নিয়েছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। ��মোস্তাফা আদিব, মন্ত্রিসভা গঠনের উদ্যোগ নিলে ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ এবং তার মিত্র আমল আন্দোলন-এই দু’টি প্রভাবশালী দল-শিয়া মন্ত্রীদের অন্তর্ভূক্তির দাবী উত্থাপন করার মধ্য দিয়ে মতপার্থক্যের সূচনা হয়। আদিব একজন সুন্নি মুসলমান হওয়ার কারণে মন্ত্রীসভায় শিয়া প্রতিনিধিত্ত্বের ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে এই ধারনা থেকেই শিয়া গোষ্ঠীদের দাবী উত্থাপিত হয়, বিশেষ করে গত কয়েক বছর ধরে সরকার একই গোষ্ঠী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়া একটি কারণ বলে অনেকেই মনে করেন।১৯৭৫-১৯৯০ সালের গৃহযুদ্ধের পর সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় সাম্প্রদায়িক নেতাদের ঐক্যবদ্ধ করার জন্য ফরাসী চাপ সত্ত্বেও লেবাননে সরকার গঠনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো। ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন ৪ঠা আগস্টের দুর্ঘটনার পর ইতিমধ্যে দুবার লেবানন সফর করেছেন। ম্যাক্রন বারে বারে সম্প্রীতি এবং ঐক্যের কথা বলে, ঐক্যবদ্ধ সরকার গঠিত হলে অব্যাহত আন্তর্জাতিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। মোস্তফা আদিবকে দায়িত্ব প্রদান করা হলে, জনমনে একটি আশার সঞ্চার হয়েছিলো কিন্তু বিবদমান গোষ্ঠীগুলোকে একীভূত করার প্রয়াস যে সহজ নয় সেটা বিশেষ করে লেবাননের বেলায় ঐতিহাসিক সত্য, তা আবারো প্রমাণিত হলো। অর্থনৈতিক ভাবে বিপর্য্যস্ত লেবাননকে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে সরকার গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন মোস্তফা আদিব কিন্তু শিয়া গোষ্ঠীগুলোর অনড় দাবী ছিল অর্থমন্ত্রীর পদ শিয়া প্রতিনিধির হাতে ছেড়ে দিতে হবে। এই সাম্প্রদায়িক চেতনায় সরকার গঠনের দাবীর মুখে আদিবের সরকার গঠনের প্রক্রিয়া হোঁচট খেল, তিনি পিছিয়ে গিয়ে পদত্যাগ করলেন, আন্তর্জাতিক বলয়ের উদ্যোগ আপাতদৃষ্টে ব্যার্থ হলো। ��বিগত গত ১১ মাসে, লেবাননের মুদ্রার মান প্রায় ৮০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, দারিদ্র্য বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি, রাস্তায় অস্থিরতা বেড়েছে ব্যাপক। ৪ঠা আগস্টের বোমা বিস্ফোরণ দেশটিকে আরও ঝুকিতে ফেলে দিয়েছে, এরমধ্যে কোভিড-১৯ এগিয়ে দিয়েছে তার করাল থাবা। এমতাবস্থায় একটি নতুন সরকারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য্য। একটি গ্রহণযোগ্য সরকার ছাড়া আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহায়তা আশা করা যায়না । বিভক্ত সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো ঐক্যবদ্ধ সরকারের গঠনের প্রধান অন্তরায়। গোষ্ঠী স্বার্থের আগে জাতীয় স্বার্থ প্রাধান্য পাবে সেটাই সকলে কামনা করেন কিন্তু লেবাননের বেলায় বাস্তব অত্যন্ত ভিন্ন। রাজনৈতিক অব্যাবস্থা পুনরুদ্ধারে ইমানুয়েল ম্যাক্রনের উদ্যোগ আগস্টে কিছুটা সাফল্য দেখা গেলেও সেপ্টেম্বরের শেষে তা মুখ থুবড়ে পড়লো। ভবিষ্যৎ আপাততঃ অন্ধকার তবে আশা নিয়ে এগিয়ে যেতে যাবার প্রত্যয় ব্যাক্ত করেছেন ইমানুয়েল ম্যাক্রন, সমাধানের কিছু একটা পথ খুঁজে পাওয়া ছাড়া কোন গত্যন্তর নেই।

সূত্রঃ সি এন এন, বি বি সি, আল জাজিরা

SHARE THIS ARTICLE