শান্তির সনদ

শান্তির সনদ
সাজেদুল চৌধুরী রুবেল

ছেলেবেলায় ভাবতাম এইতো আর ক’টা দিন মাত্র
লেখাপড়ার পাট চুকানোর পর
গায়ে যখন লাগবে শিক্ষাবীরের তকমা
কে ঠেকাবে মোরে রচিতে শান্তির নীড়!
মাথার উপরে ঘুরবে বৈদ্যুতিক পাখা
কিংবা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ, সাহেবের
সাহেবি ভবন, পাইক-পেয়াদা, সরকারি গাড়ি
স্ত্রী-সন্তান-সংসার আহ্! কী শান্তি ……. !
তারপর অর্জিত সব শিক্ষাসনদ বগলে নিয়ে
ব্যস্ত সড়কের ফুটপাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে
একসময় হাঁপিয়ে উঠলাম, চেহারায় উঁকি দিলো স্পষ্ট ক্লান্তির রেখা,
বুঝলাম নিরর্থক সব। বুকের ভেতরে পুষে রাখা
এতোদিনের স্বপ্ন তাই মনে হতে লাগলো
গাঁজার নেশাতে বুঁদ হয়ে যাওয়া অলীক স্বপ্নের মতো।

রিক্সার টুংটাং শব্দ শুনতে শুনতে মধ্যরাতে বাড়িফেরা
এক বিমূর্ত জীবনে দাড়ালাম আমি একসময়।
দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা মোনালিসার হাসিটি দেখতে
দেখতে ঘুমিয়ে পড়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টার মাঝেই খূঁজে পেতাম
অনিশ্চিত বেঁচে থাকার এক মাদকীয় শান্তির ঘ্রাণ।

এভাবে যাপিত জীবনের কোনো একদিন
ছোট মামার বিয়েতে দেখা হয়ে গেলো শান্তির ফেরেশতার সঙ্গে
টাকার কুমির হাতে লোভনীয় ব্রেসলেট, গলায়
ডোরাকাটা দড়ির মতো মোটা স্বর্ণের চেইন, চিক চিক চেহারা
সাক্ষাৎ শান্তির দূত অনেক বলে কয়ে রাজি করালাম তাকে
তাঁর ডানায় ভর করে শান্তির হাঁটে
পাড়ি জমাবো বলে। দুর্ভাগ্য আমার
পৌছাতে পৌছাতেই হাওয়াই মিঠার মতো
হাওয়ায় মিশে গেলো কাঙ্খিত আমার শান্তি।

নিভু নিভু করে জ্বলছিলো যখন আমার শান্তির প্রদীপ
ঠিক এমোন সময় ফুফাতো ভাই জহির
শান্তির পতাকা হাতে নিয়ে কাছে ডাকলো, এগিয়ে গেলাম বিমুগ্ধ চিত্তে
সবুজ তারকাখচিত পাহাড়ে ঘেরা ওই দ্বীপময় দেশে।

এক দুই তিন এভাবে প্রায় আটারোটি বছর ধরে
জীবনের সোনালী সময়টা কাটিয়ে দিলাম ওখানেই।
স্ত্রী সন্তান সংসার সবই হলো, সবই পেলাম
তবু মনে হয় অশান্ত বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দুতে এখনো দাড়িয়ে।
প্রৌঢ়ত্বের এ ধাপে এসে তাই ছেলেবেলার মতো ভাবি
মাত্র তো আর ক’টা দিন
ওপারে পাড়ি জমালেই ছোঁয়া যাবে শান্তির তুলতুলে দেহ।
পরক্ষণেই ভর করে কিছু সংশয়, কিছু ভয়
জীবনের কতোটুকু সময় বিলিয়েছি অর্জিতে ওপারে শান্তির সনদ!

SHARE THIS ARTICLE