সিলেটের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া আরাবিয়া ইসলামিয়া উমেদনগর মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদিস আল্লামা হাফেজ তোফাজ্জল হক হবিগঞ্জী (৮২)রোববার বিকাল ৪ টা ৩৫ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তোকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আল্লামা হজিগঞ্জীর মৃত্যুতে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা আলেম-ওলামা, ছাত্র-শিক্ষকসহ অসংখ্য গুণগ্রাহীর মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। তিনি রোববার হৃদরোগে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে নেয়ার পথে ইন্তেকাল করেন।
আল্লামা তোফাজ্জল হক হবিগঞ্জী ছিলেন ইলমে হাদিসের খাদেম এবং দ্বীন ইসলামের এক অতন্দ্র প্রহরী। তিনি আল্লামা আহমদ শফী’র একান্ত প্রিয় শাগরেদ ছিলেন।
তিনি জামিয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গা সিলেটের শাইখুল হাদিস ও হবিগঞ্জ উমেদনগর জামেয়ার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল, ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ছিলেন। দ্বীনের প্রচার, ইলমে হাদিস চর্চা, দ্বীন সম্প্রসারণ ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অত্যন্ত ত্যাগী একজন ব্যক্তি ছিলেন আল্লামা হবিগঞ্জী।
তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের ইসলামি অঙ্গনের অসংখ্য আলেম ও ইসলামি সংগঠন। তাদের মধ্যে অন্যতমরা হলেন-
আল্লামা আহমদ শফীর শোকআল্লামা তোফাজ্জল হক হবিগঞ্জীর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন দারুল উলূম হাটহাজারীর মহাপরিচালক, হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, আল্লামা তোফাজ্জল হক দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় আলেম ও প্রখ্যাত আলোচক ছিলেন। তাঁর যোগ্যতা ও দক্ষতা তাঁকে সম্মান ও মর্যাদার সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন করেছিল। এ মহান আলেমের মৃত্যুতে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। মহান রব্বুল আলামীন তাঁকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করুন।
আল্লামা আহমদ শফী আরও বলেন, মাওলানা তোফাজ্জল আমার প্রিয় শাগরিদ। মাইবুযীসহ কয়েকটি কিতাব আমার নিকট পড়েছেন। হাটহাজারীতে দীর্ঘদিন পড়াশুনা করেছেন। এত বড় ব্যক্তি হওয়ার পরও উনার বিনয় ছিলো অনুসরণীয়। আমাকে উস্তাদের চেয়ে বেশি সম্মান ও মুহাব্বত করতেন। তার মৃত্যুতে দেশের ইসলামী অঙ্গণ একজন যোগ্য ও দরদী অভিভাবক হারালো। এ শূন্যতা কখনো পূরণ হবার নয়।
মুফতি ফয়জল্লাহর শোকখ্যাতিমান আলেম ও শীর্ষ ইসলামী চিন্তাবিদ, আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর,ঈমানি সকল আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব, আল্লামা তোফাজ্জল হক হবিগঞ্জী বহু গুণে গুণান্বিত ছিলেন। তিনি মুজাহিদে মিল্লাত মুফতী আমিনীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তাঁর যেকোন ডাকে তিনি নির্দিধায় সাড়া দিতেন। আমি আমার জীবনে তাঁকে দেশে, দেশের বাহিরে, রাজপথে, আন্দোলন সংগ্রামে খুব কাছ থেকে অসংখ্যবার দেখেছি, দেখে অভিভূত হয়েছি,তাঁর আন্তরিকতাপূর্ণ দোয়া লাভ করেছি। তাঁর হাস্যোজ্জল মুখের আন্তরিকতাপুর্ণ ডাক আমি এখনো যেনো শুনতে পাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যা হারালাম তার সাথে কোনো কিছুর তুলনা চলেনা। আল্লাহভীরু, মুখলিস, নূরানী মুখাবয়বের অধিকারী, সাহসী, বাস্তবিক অর্থে দ্বীনের দাঈ- এই আলেম মনিষীর ইন্তেকালে আমি গভীর ভাবে শোকাহত। আমি তাঁর মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার, আত্মীয়,স্বজন, তাঁর ছাত্র, মুরীদ এবং সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমাবেদনা জানাচ্ছি। আল্লাহ তাআলা তাকে তার রহমতের চাদরে আবৃত করে চিরস্থায়ী জান্নাতের মেহমান করে নিন। আমীন।
ইয়াহইয়া মাহমুদের শোকআল্লামা তোফাজ্জল হক হবিগঞ্জীর ইন্তেকালে প্রখ্যাত আলেম মাওলানা ইয়াহইয়াহ মাহমুদ বলেন, দ্বীনের এ দাঈর মৃত্যুতে আমরা খুবই মর্মাহত। তার শূণ্যস্থান পূরণ হবার নয়। তিনি আজীবন দ্বীনের খেদমত করে গেছেন। আল্লাহ তাআলা তার খেদমত ও নেকির ধারা অব্যাহত রাখুন এবং তাকে জান্নাতের সুউঁচ্চ মাকাম দান করুন। আমিন।
ছাত্র মজলিসের শোকশায়খুল হাদিস আল্লামা হাফেজ তোফাজ্জল হক হবিগন্জীর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মনসুরুল আলম মনসুর ও সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ মনির হোসাইন এক যৌথ বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করে মরহুমের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
সিলেট মহানগর ছাত্র আন্দোলনের শোকশায়খুল হাদিস মাওলানা তোফাজ্জল হক হবিগঞ্জীর ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন সিলেট মহানগর সভাপতি এম. ইসমাইল আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আরাফাত। এক যৌথ শোকবার্তায় আল্লামা হবিগঞ্জীর রূহের মাগফিরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
জানাজাশায়খুল হাদিস আল্লামা তোফাজ্জল হক হবিগঞ্জীর জানাজা সোমবার সকাল ১০টায় সিলেটের ঐতিহ্যবাহী জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া উমেদনগর মাদরাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। লাখো মানুষ মরহুমের জানাযায় অ গশ গ্রহ্ন করেন।
আল্লাহ তাআলা ইলমে হাদিসের খাদেমকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন। আমিন।