হিজাব নারীর নিরাপত্তা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ নারীর সামাজিক নিরাপত্তা ও শান্তির ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলোকে ইসলাম সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো হিজাব বা পর্দা। পর্দা নারীর জন্য ইসলামের একটি আবশ্যকীয় আদেশ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘হে নবী! আপনি আদেশ করুন আপনার স্ত্রীদেরকে, কন্যাসন্তানদেরকে এবং মুমিনদের স্ত্রীদেরকে, যেন তারা নিজেদেরকে জড়িয়ে নেয় হিজাব ও চাদর দিয়ে, এর মাধ্যমেই তারা মুমিন ও সতী নারী বলে চিহ্নিত হবে। ফলে দুষ্ট লোকেরা তাদেরকে কষ্ট দেবে না।’ (সুরা আহজাব : ৫৯) একজন নারী যখন ঘরে থাকে তখনও তার জন্য ইসলাম শান্তি নিশ্চিত করেছে। তার ভরণপোষণের দায়িত্ব হয়তো তার বাবা কিংবা স্বামী কিংবা সন্তানের ওপর। জীবিকা নির্বাহের কোনো কষ্ট তার নেই। আর তাকে যদি ছোটখাটো কোনো প্রয়োজনে বাইরে যেতেও হয় তখনও ইসলাম তার মর্যাদা ও সম্মানের প্রতি খেয়াল করেছে। তাই বলেছে- হে নারী! তুমি নিজেকে হিজাব দ্বারা আবৃত করো। পর পুরুষের চোখ থেকে নিজেকে আড়াল করো। যাতে নিম্ন লোকেরা তোমার দিকে মন্দ দৃষ্টির শূল নিক্ষেপ করতে না পারে এবং তোমার আত্মমর্যাদায় আঘাত হানতে না পারে। এক কথায় ইসলাম সর্বাবস্থায় চেষ্টা করেছে, নারীর জন্য তার প্রাপ্য মর্যাদা সুনিশ্চিত করতে।

একজন নারীকে হয়তো স্কুলে, কলেজে বা কাজের সূত্রে বাইরে যেতে হয়। তাই প্রতিদিন হিজাব পরা কষ্টকর বলে কখনই অজুহাত পেশ করা যায় না। কারণ প্রতিদিনই তো কাঁধে করে কতগুলো বই বহন করতে হয়, সেটা তো কষ্টকর মনে হয় না। তাহলে চেহারায় একটি মাত্র হিজাব পরে নিতে এত কিসের কষ্ট! সুতরাং নারীর সতর আবৃত রাখার মধ্যেই প্রকৃত মর্যাদা। অনেকের প্রশ্ন চেহারা কি হিজাবের অন্তর্ভুক্ত? চেহারা হিজাবের অন্তর্ভুক্ত হওয়া না হওয়ার বিষয়ে ইমামদের সামান্য ইখতিলাফ থাকলেও অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতেই চেহারা ও দুই হাতও হিজাবের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন- ‘মহিলারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে’। আর আমরা সবাই জানি, মানুষের সকল সৌন্দর্যের মূল কেন্দ্রই হলো চেহারা। সুতরাং চেহারা হিজাবের অন্তর্ভুক্ত হবে না, এটা হতেই পারে না। তাই মুখ খোলা রেখে সারাশরীর ঢেকে রাখা হিজাবের সামান্য অংশ মাত্র। পরিপূর্ণ এবং শরিয়তসম্মত হিজাব কখনই নয়। হাদিসে এসেছে- একবার নবী (সা.) নারী সাহাবীদেরকে ঈদের নামাজে যাওয়ার আদেশ করলে তারা বলল, আমাদের অনেকের তো চেহারা ঢাকার মতো চাদর নেই। তখন নবী (সা.) বললেন- অন্যরা যেন তাদেরকে ব্যবস্থা করে দেয়। (মুসলিম : ৮৮৩) ঠিক কত বছর বয়স থেকে হিজাব অবলম্বন করতে হয়? মূলত হিজাব আবশ্যক হওয়ার মূল সময় হলো বালেগ হওয়া। হজরত আসমা (রা.) যখন হায়াজের (নারীর মাসিক অসুস্থতা) বয়সে পৌঁছলেন তখন থেকেই নবী (সা.) তাকে পর্দার আদেশ করেছিলেন।

শ্রীলঙ্কায় নিষিদ্ধ হলো বোরখা-হিজাব ...

তবে মা-বাবার অবশ্যই কর্তব্য, ১০ বছর থেকেই সন্তানদেরকে পর্দার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা। হিজাবের ক্ষেত্র কিছু লক্ষণীয় বিষয় আছে। হিজাবের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য ও রাসুলের ভালোবাসা অর্জিত হয়। তাই অবশ্যই কিছু বিষয় লক্ষ রাখতে হবে। যেমন- ১. হিজাব হতে হবে ঢিলেঢালা। টাইটফিট যে পোশাক শরীরের গঠন আরও স্পষ্ট করে তোলে সেটা কখনই হিজাব নয়। বরং সেটা হলো গোনাহের পোশাক। তাই হিজাব ঢিলেঢালা হওয়া আবশ্যক। ২. হিজাব হবে মোটা কাপড়ের। এমন পাতলা কাপড়ের কখনই হবে না, যা ভেদ করে ভেতরের পোশাক দেখা যায় এবং চুল ঢেকে রাখা হিজাবের অন্তর্ভুক্ত। কোনো একজন নারীও যদি পর্দার প্রতি যত্নশীল হয় তাহলে তার কাছ থেকে হয়তো আরেকজন শিখবে। তার কাছ থেকে শিখবে অন্য কোনো বোন। তাহলে প্রথম নারী সবার সওয়াবই পাবে এবং তার মাধ্যমেই নেমে আসবে সমাজে শান্তির ছায়া। তাই এখন থেকেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন! সব অজুহাতকে পিছে ফেলে একটি পবিত্র ও নিরাপদ জীবন গড়ার জন্য নেমে পড়া এখন সময়ের আহ্বান। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন, আমিন

SHARE THIS ARTICLE