আইরিশ বাংলাপোস্ট ডেস্কঃ বি বি সি থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ সংবাদে জানা যায় প্রতিবাদী জনতা জেল থেকে সাদির জাপারভকে মুক্ত করলে তাকে দেশটির অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্ট সুরনোবাই জীনবেকভ বি বি সি প্রতিনিধির নিকট শক্তিশালী ব্যাক্তির হাতে দায়িত্ব প্রদানের ইংগিত করলেও কাকে তিনি শক্তিশালী ভাবছেন তা প্রকাশ করেন নি।
গত রোববার কিরগিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে সোমবার দেশটি প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠে, বিরোধী সমর্থক গোষ্ঠী রাস্তায় নেমে আসে। এই প্রতিবাদ সহিংস রূপ ধারণ করলে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের ফলাফল স্থগিত ঘোষণা করেছে।
কিরগিস্তানের রাজধানী বিশেক এবং অন্যান্য শহরে বিরোধীদের প্রতিবাদে একজন নিহত, ২ শত আহত এবং বেশ কিছু গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। মারমুখী জনতা সংসদ ভবনের অভ্যন্তরে ঢুকে লুটপাটে লিপ্ত হলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস এবং গ্রেনেড ব্যাবহার করে। মঙ্গলবার সকালের দিকে বেশ কয়েকজন হাই প্রোফাইল নেতাকে জেল থেকে মুক্ত করা হয় এদের মধ্যে সাদির জপারভ এবং প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আলমাজবেক আতামবায়েভ উভয়েই ১১ বছরের সাজা ভোগ করছিলেন।
নির্বাচনে মোট ষোলটি দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। সরকারী ফলাফলে প্রেসিডেন্ট সুরনবায় জিনকভকের সমর্থক দুটি দলকে অধিকাংশ আসনে বিজয়ী ঘোষণা করলে, বিরোধী ১২ দলীয় জোট নির্বাচনে ভোট কেনাবেচা ও বিভিন্ন ধরনের কারচুপির অভিযোগ তুলে ফলাফল বর্জন করে।
বর্তমানে স্বাধীন কিরিগিস্তান পর্বতবেষ্টিত মধ্য এশিয়ার একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র। কিরগিস্তানের সীমানার চারদিকে তাজাকিস্তান, কাজাকিস্তান, উজবেকিস্তান ও চীন দ্বারা পরিবেষ্টিত। ঐতিহাসিকভাবে দেশটি বিভিন্ন সময়ে বিদেশী শক্তির করতলগত ছিল। ১৩ শতকে মোগলদের করতলগত থাকার পর স্বাধীনতা পেলেও আবার উজবুক, কালমিক ও মাঞ্চুদের করতলগত হয়। ১৮৭৬ সালে রুশ সাম্রাজ্যের অংশে পরিণত হয়, রুশ বিপ্লবের পরে কির্গিজ সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসাবে ইউ এস এস আরে অন্তর্গত ছিল। ইউ এস এস আর এ মিখাইল গর্বাচেভের গণতান্ত্রিক সংস্কারের পর, ১৯৯০ সালে স্বাধীনতাপন্থী প্রার্থী আসকার আকায়েভ এস এস আর-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের ৩১ আগস্ট কিরগিস্তান মস্কো থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পরে কিরগিস্তান একটি জাতি-রাষ্ট্র হিসাবে সার্বভৌমত্ব অর্জন করে।
১৯৯১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে কিরগিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে একক সংসদীয় প্রজাতন্ত্র হিসেবে পরিচালিত হলেও বারে বারে অব্যাহত জাতীয় কোন্দল, বিদ্রোহ, অর্থনৈতিক সমস্যা, অন্তর্বর্তী সরকার এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে দেশটির যাত্রা বারে বারেই ব্যাহত হয়েছে।
৬০ লক্ষ নাগরিক অধ্যুষিত এই দেশের অধিকাংশ জনগণ জাতিগতভাবে কিরগিজ তবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক উজবেক এবং রাশিয়ানও আছে। মূল ভাষা কিরগিজ যা তুর্কি ভাষার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত, দীর্ঘদিন রাশিয়ার অন্তর্গত থাকার কারণে রাশিয়ান ভাষাও প্রচুর ব্যাবহৃত হয়। জনসংখ্যার নব্বই শতাংশ মানুষ সুন্নি মুসলমান।
বর্তমানে দেশটি গভীর রাজনৈতিক সংকটে পতিত হয়েছে। জনগণের আন্দোলনে নূতন অস্থায়ী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করলে কি হবে বলা দুষ্কর।