কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে, স্থানীয়রা দূরে

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভীর পক্ষে মাঠে সক্রিয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল। নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করে একাধিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সে তুলনায় আন্তরিকতা নিয়ে মাঠে নামছেন না দলের জেলা ও মহানগরের পরিচিত নেতা ও তাঁদের অনুসারীরা।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর সঙ্গে এক দশকের বেশি সময় ধরে রাজনৈতিক বিরোধ চলছে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের। নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে প্রভাবশালী ভূমিকায় আছে শামীম ওসমানদের পরিবার। তবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আইভীর কর্মী-সমর্থকরা মনে করছেন, স্থানীয় কয়েকজন নেতার পূর্ণ সহযোগিতা না পেলেও নির্বাচনে নৌকার জয়ে সমস্যা হবে না।

নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, দলের পক্ষে মাঠে নামছে না আওয়ামী লীগের একটি অংশ। আবার কোনো কোনো স্থানীয় নেতা কেন্দ্রীয় নেতাদের চাপে দায়সারাভাবে দু-একটি কর্মসূচিতে অংশও নিচ্ছেন। তাঁরা মন থেকে চান না আইভী নির্বাচনে জয়ী হোন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম নিয়মিত নারায়ণগঞ্জে এসে নির্বাচনী কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। পাশাপাশি দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরসনেরও চেষ্টা করছেন। সাধারণত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রচারের মূল ভূমিকায় থাকেন দলের স্থানীয় নেতারা।

শামীম ওসমানের অনুসারী কয়েকজন নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, আইভী মনে করেন শামীম ওসমানের অনুসারীদের সমর্থন ছাড়াই তিনি মেয়র নির্বাচিত হতে পারবেন। সে কারণে তিনি এখনো শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে নানা মন্তব্য করে যাচ্ছেন। তাঁর কথাবার্তা দলীয় ঐক্যের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

এই নেতাদের অভিযোগ, ১০ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে নৌকার পক্ষে মাঠে নামার ঘোষণা দেন শামীম ওসমান। ওই ঘোষণাকে স্বাগত জানাননি আইভী। উল্টো ওই দিনই বন্দর থানার ২১ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচারকালে শামীম ওসমানকে ইঙ্গিতে গডফাদার বলে মন্তব্য করেন আইভী।

অবশ্য শামীম ওসমানের সমর্থনের বিষয়ে জানতে চাইলে আইভী গণমাধ্যমকে বলেন, দল যখন আমাকে নমিনেশন দিয়েছে, আমার দলের লোকেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা নৌকার পক্ষেই থাকবেন। এর মধ্যে দু-একজন ব্যতিক্রম হলে আলাদা ব্যাপার। ভোটারদের কাছে এটা অপরিহার্য নয়, কে সমর্থন দিল কে দিল না। তৃণমূলের কিছু নেতা হয়তো এটায় গুরুত্ব দেবেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ, আমার মা-বোনদের মাথা ব্যথা নেই কে সমর্থন দিল, আর কে দিল না। তাঁদের কাছে বড় ব্যাপার দল কাকে নমিনেশন দিয়েছে।

তবে শামীম ওসমানের কর্মী-সমর্থকদের চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। নৌকার পক্ষে মাঠে না নামায় শামীম ওসমানের অনুগত নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদের বাসায় পুলিশ পাঠানোর কথাও শোনা যায়। গতকাল বুধবার দুপুরে তাঁর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নগরের ২ নম্বর রেলগেটের পাশে আইভীর নির্বাচনী কার্যালয়ে মিছিল নিয়ে আসতে দেখা যায়।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, কেন্দ্রীয় নেতাদের চাপে কৌশলী অবস্থান নিয়েছেন আইভী বিরোধীরা। স্থানীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা নিশ্চুপ না থেকে মাঝেমধ্যে আইভীর প্রচারে যুক্ত হচ্ছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের চাপে এইটুকু কাজ হয়েছে।

আইভীর প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় আছেন নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শঙ্কর রায়। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি দলীয় রাজনীতিতে যুক্ত নই। রাজনৈতিক দলের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব থাকেই। তবে আইভী এমন একজন প্রার্থী, যিনি দলীয় পরিসীমার বাইরেও সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে জনপ্রিয়। সাধারণ মানুষের বক্তব্য হলো, আমরা ব্যক্তি আইভীকে চিনি, আমরা দল নয় ব্যক্তি দেখেও ভোট দেব।’

তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম কালের কণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ আছেন। আর সেলিনা হায়াত আইভী গত দুই মেয়াদের মেয়র থাকাকালে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এতে তাঁর প্রতি সাধারণ মানুষের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। ফলে তিনি অবশ্যই জয়লাভ করবেন।

SHARE THIS ARTICLE