গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলা সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কুয়েত সফরের গুরুত্ব

রউফ মাওলা, কুয়েতঃ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. এ কে আবদুল মোমেন গত ৫ অক্টোবর কুয়েতে আসেন ২ দিনের সফরে । তিনি বাংলাদেশের মহামান্য রাস্ট্রপতি আবদুল হমিদের বিশেষ বার্তা নিয়ে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত হিসাবে কুয়েত সফর করে গেলেন । বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সফর সঙ্গী ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও এফএমও পরিচালক এমদাদুল হক চৌধুরী । মন্ত্রী মহোদয় কুয়েতে পৌছার পর ওঁনাকে সার্বক্ষণিক সময় দেন কুয়েতে নব নিযুক্ত মাননীয় রাস্ট্রদূত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান , দূতাবাসের ডিফেন্স অ্যাটাচে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আবু নাসের ও দূতাবাসের রাজনৈতিক সচিব নিয়াজ মোর্শেদ , দূতাবাসের লেবার কাউন্সিলর ( পাসপোর্ট ) জহিরুল ইসলাম খাঁন । বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কুয়েতর এ সফর ছিল বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ৫ অক্টোবর সকালে কুয়েতের মহামান্য নতুন আমির শেখ নওয়াফ আল আহমেদ আল জাবের আল সাবাহ সঙ্গে দেখা করে কুয়েতের প্রয়াত মহামান্য আমির শেখ সাবাহ আল আহমেদ আল জাবের আল সাবাহ’র বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন বাংলাদেশ সরকার ও জনগনের পক্ষ থেকে ।

প্রয়াত আমিরের শোক বইয়ে শ্লোক গাঁথা লিখেন ও শোক বই’য়ে স্বাক্ষর করেন । তিনি বাংলাদেশের মহামান্য প্রসিডেন্ট আবদুল হামিদের বিষেশ ২ টি চিঠি হস্তান্তর করেন । মহামান্য আমিরকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রন জানান । তিনি নতুন আমিরকে বাংলাদেশের জনগন ও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানান ও উনার সুস্বাস্থ্য ; দীর্ঘায়ু কামনা করেন । তারপর তিনি দু’দেশের দ্বি-পাক্ষিক ব্যপার নিয়ে কিছু সময় কথা বলেন । তিনি মহামান্য আমিরকে স্বরণ করিয়ে দেন , ১৯৭৪ সালে প্রয়াত আমির শেখ সাবাহ আল আহমেদ আল জাবের আল সাবাহ বিশেষ বিমানে বাংলাদেশে গিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে ওআইসি সন্মেলনে গিয়েছিলেন ; জাতির পিতা মহামান্য আমিরকে শর্ত দিয়েছিলেন পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলে তিনি ওআইসি সন্মেলনে যোগ দেবেন । মহামান্য প্রয়াত আমির বাংলাদেশে বসে ঠিকই পাকিস্তানের স্বীকৃতি আদায় করেছিলেন এবং এর পরপরই অনেক মুসলিম দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় । তিনি বলেন , জাতির পিতার সাথে প্রয়াত আমিরের অন্তরঙ্গ ও সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক ছিল । এর পর বাংলাদেশের মাননীয় পররাস্ট্রমন্ত্রী কুয়েতের মাননীয় পররাস্ট্রমন্ত্রী ডা. আহমেদ আল জাবের আল সাবাহ’র সঙ্গে সাক্ষাত করেন এবং দু’দেশের দ্বি-পাক্ষিক ব্যপার নিয়ে ব্যপক আলোচনা করেন ।

মন্ত্রীমহোদয়দের আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি সংক্ষেপে তুলে ধরা হল :-

১ ) যাত্রিদের দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে কর্মাশিয়াল ফ্লাইট রেগুলার খোলার অনুরোধ করেন ডা. আবদুল মোমেন । উত্তরে কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন ২ দিনের মধ্যে এ ব্যপারে সুস্ঠ পদক্ষেপ নেবেন ।

২ ) বাংলাদেশ থেকে দক্ষ শ্রমিক আনার ব্যপারে সুপারিশ করলে কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের শ্রমিকদের কাজের প্রশংসা করেন এবং শ্রমিক আনার ব্যপারে যথেস্ট উৎসাহ প্রকাশ করেন ।

৩ ) আমেরিকাতে বাংলাদেশ থেকে উন্নতমানের ৬৫ লক্ষ পিপিই রপ্তানির কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ থেকে ঔষধ সামগ্রী ও পিপিই আমদানীর জন্য প্রস্তাব করলে কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ ব্যপারে যথেস্ট আগ্রহ প্রকাশ করে আমদানির আশ্বাস দেন ।

৪ ) GGC ও YC মধ্যে বিভিন্ন দিকের টানাপোড়নের অবস্থার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশে কুয়েত সরকারের ব্যবসা সম্প্রসারন করতে বাংলাদেশে কুয়েতের তেল শোধনাগার স্খাপনের প্রস্তাব দিলে কুয়েতের পররাস্ট্রমন্ত্রী তা গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেন ।

৫ ) বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সমস্যা উল্লেখ করলে কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন , এ ব্যপারে কুয়েতের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে ।

৬ ) কুয়েতের বিভিন্ন কোম্পানীর বাংলাদেশী শ্রমিকদের বহু-মাত্রিক সমস্যার কথা উল্লেখ করলে কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন , শ্রমিক সমস্যার উত্তরণের জন্য ইতিমধ্যেই আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি । এরপর মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন দুপুর ১২-৩০ মিনিটে মেসিলা এলাকায় কুয়েতস্ত বাংলাদেশ দূতাবাসে বাংলাদেশ কমিউনিটির সাথে এক মত বিনিময় সভায় মিলিত হন । তিনি কুয়েতের মহামান্য নতুন আমির ও কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাথে মিটিং এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মতবিনিময় সভায় এবং বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন । কমিউনিটির সাথে মতবিনিময় সভার পূর্বে তিনি কুয়েতস্থ বাংলাদেশী মিডিয়ার সাথে দূতাবাসে সময় দেন ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন অত্যন্ত ধৈর্য্যের সাথে ।

বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে পররাস্ট্রমন্ত্রী মহোদয় আশাবাদ ব্যক্ত করে যা বলেছেন তা সংক্ষেপে উল্লেখ করা হল :-

## করোনার কারণে দেশে আটকা পড়া কুয়েত প্রবাসীদের ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের বিভিন্ন ভূমিকার কথা তিনি উল্লেখ করেন । যাদের আকামা আছে তারা ফেরত আসতে পারবেন কিন্তু যাদের আকামা নেই তারা যার যার কফিলের অনুমতি সাপেক্ষে ভিসা নবায়ন করে অথবা কফিল নতুন ভিসা ইস্যু করলে ওরা ফেরত আসতে পারবে । তা’ছাড়া , যারা চাকরি হারানোর কারণে সার্ভিস বেনিফিট পাবেনা বা যাদের দোকান-পাঠ , ব্যবসা-বানিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ঐগুলি সুস্ট ভাবে আদার করার জন্য দূতাবাসে নিবন্ধন চলছে । আমরা যথাসাধ্য চেস্টা চালিয়ে যাব ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার জন্যে ।

## যারা দেশ থেকে ফিরতে পারবেনা তারা হয়রানি ছাড়া প্রবাসী ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে দেশে কিছু করে খেতে পারে এর ব্যবস্থা আমরা ইতিমধ্যেই নিয়েছি ।

# দূতাবাসের মান আধুনিকায়ন ও সেবার মান আরও বাড়ানোর জন্য সমস্ত দূতাবাসগুলিতে App চালু করা হবে । ইতিমধ্যে কিছু কিছু দূতাবাসে তা চালু করা হয়েছে । এই App এ গ্রাহকরা ৩৪ ধরনের সেবা ঘড়ে বসেই ভোগ করতে পারবেন । এতে দূতাবাসের কাজের চাপ যেমন কমবে তেমনি গ্রাহকদেরও বিভিন্ন হয়রানি থেকে পরিত্রাণ পাবে ।

# প্রবাসীদের দাবী ১০ বৎসর মেয়াদী পাসপোর্ট খুব শীগ্রই চালু হবে কুয়েতে । করোনা না আসলে এ কাজে আমরা আরও অগ্রসর হতে পারতাম । # ন্যাশনাল আইডি কার্ড আপনারা কুয়েতে বসেই পাবেন – এর কথাবার্তা চলছে । কারণ প্রবাসীরা স্বল্প ছুটিতে দেশে গিয়ে ন্যাশনাল আইডি কার্ড বানাতে যথেস্ট সময় পায় না।

# পাসপোর্ট ডেলিভারী ৩ মাস থেকে কমিয়ে ১ মাসের মধ্যে আনা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন ।

# প্রবাসে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিভক্তি নিয়ে সবাইকে অনুরোধ করে ঐক্যমত্যের ভিত্তিত্বে সহমর্মিতা নিয়ে চলার আহব্বান জানান ।

# তিনি প্রবাস জীবনের নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন , আমিও ৩৪ বৎসর প্রবাসে ছিলাম । তাই প্রবাসীদের দু:খ কস্টের জীবন ; পরিবার -পরিজন ছাড়া , আত্মীয়-স্বজন ছাড়া প্রবাসে কাটানোর জীবন তা আমিও হৃদয় দিয়ে অনুভব করি । পরিশেষে অনুস্ঠানে ফুল এবং ক্রেস্ট দেওয়া নিয়ে গাড়িতে উঠতে উঠতে তিনি বলেন , এমন বিসৃঙ্খলা তিনি আশা করেননি ; ধাক্কা-ধাক্কি করে সন্মান জানাতে গিয়ে যা হয়েছে তাতে আমি বিব্রত হয়েছি এবং অসম্মান বোধ করেছি । তিনি দু:খ প্রকাশ করে এসব কথা বলেন । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বিষেশ দূত হিসাবে তিনি কুয়েত সফর করে গেলেন ।

SHARE THIS ARTICLE