ড. মো. শাহজাহান কবীর: হজ অনুষ্ঠিত হয় আরবি শেষ মাস জিলহজে। তার আগের মাস জিলকদ। এখন জিলকদের প্রথম সপ্তাহ। এবার যাঁরা হজের নিয়ত করেছেন, ইতোমধ্যে তাঁদের অনেকেই মক্কা-মদিনার পথে হজের সফর শুরু করেছেন। পবিত্র কোরআনের ভাষ্যমতে, ইসলামী সনের তিনটি মাস হলো হজের জন্য। হাদিসে সেই তিন মাসের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে: শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ। হজের মূল কাজগুলো জিলহজ মাসে সম্পাদিত হলেও আগের দুই মাসকে হজের মাস এ জন্য বলা হয়েছে, যাতে হজ আদায়ে ইচ্ছুক লোকেরা হজের প্রস্তুতি নিতে পারেন। যাঁরা হজে যাওয়ার নিয়ত করেছেন, তাঁদের জন্য পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
প্রথমত, মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করা। হজে যাওয়ার সামর্থ্য ও সক্ষমতা লাভ মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ও নেয়ামত। সুতরাং এ নেয়ামতের ওপর আল্লাহতায়ালার প্রতি শুকরিয়া আদায় করা একান্ত কর্তব্য।
আল্লাহতায়ালা সুরা ইব্রাহিমের ৭ আয়াতে এরশাদ করেন, ‘যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তাহলে তোমাদের আরও বাড়িয়ে দেব।’
দ্বিতীয়ত, বিশুদ্ধ নিয়ত করা। কেননা, নিয়তের ওপরেই কাজের ফল নির্ভর করে। হাদিসে বর্ণিত, রাসুলে পাক (সা.) ইরশাদ করেন, ‘প্রতিটি কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (বুখারি)
সুতরাং হজে গমনেচ্ছু ব্যক্তিদের এ নিয়ত করতে হবে যে, হজ শুধু আল্লাহতায়ালার হুকুম পালন ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য; পার্থিব কোনো উদ্দেশ্য থাকা চলবে না। আল্লাহতায়ালা সুরা বায়্যিনাত-এর ৫ আয়াতে এরশাদ করেন, ‘তাদেরকে এ ছাড়া কোনো নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে।’
সুরা কাহাফ-এর ১১০ আয়াতে এরশাদ হয়েছে, ‘অতএব যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরিক না করে।’
এ আয়াতের মর্মার্থ হলো, যে কোনো ইবাদত শুধু মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য করা। অন্য কোনো উদ্দেশ্য যেন না থাকে।
তৃতীয়ত, হজ আদায়ে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে হজের গুরুত্ব, তাৎপর্য উপলব্ধি করা। হজের মধ্যে শরিয়তের অনেক মৌলিক বিষয় শামিল। আল্লাহতায়ালা সুরা হজের ২৭-২৮ আয়াতে নবী ইব্রাহিম (আ.)-কে বলেছিলেন, ‘মানুষের মধ্যে হজের জন্য ঘোষণা প্রচার করো। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সর্বপ্রকার কৃশকায় উটের পিঠে সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে। যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত পৌঁছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাঁর দেওয়া চতুষ্পদ জন্তু জবেহ করার সময়।’
চতুর্থত, হজের ফজিলত সম্পর্কে রাসুলে পাক (সা.) ইরশাদ করেন, ‘এক ওমরাহ পরবর্তী ওমরাহ পর্যন্ত গুনাহগুলো মুছে দেয় আর হজে মাবরুরের প্রতিদান জান্নাত ব্যতীত কিছু নয়।’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
হজ যেহেতু একটি আর্থিক ও শারীরিক ইবাদত, তাই এর জন্য আর্থিক প্রস্তুতির সঙ্গে শারীরিক প্রস্তুতিও জরুরি। কারণ শারীরিক সক্ষমতা না থাকলে হজের বিধানগুলো যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব নয়।
হজে গমনের আগেই বান্দার উচিত আল্লাহতায়ালার কাছে খালেস নিয়তে তাওবা করা এবং পাওনাদারের প্রাপ্য পরিশোধ করা। হজের প্রস্তুতি গ্রহণের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে হজের মাসায়েল সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করা। হজ যেমন ফরজ, তেমনি হজ আদায়ে প্রয়োজনীয় মাসায়েল জানাও ফরজ।
হজের সফরে কখন, কোথায়, কোন কাজ সম্পাদন করতে হবে, তা সঠিকভাবে জানা। হজের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়ে সম্যক জ্ঞান লাভ করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা। অন্যথায় এটি নিছক ভ্রমণ ছাড়া আর কিছুই হবে না।
সুতরাং আমাদের উচিত হজ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে এ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সম্পন্ন করা। আল্লাহতায়ালা আমাদের সামর্থ্যবান সবাইকে এর গুরুত্ব ও ফজিলত অনুধাবনপূর্বক সঠিক নিয়ম মেনে পবিত্র হজ করার তাওফিক দান করুন!
ড. মো. শাহজাহান কবীর: চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি