জেনে নিন করোনা ভেক্সিন নিয়ে ১২ প্রশ্ন ও তার উত্তর

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ দেশে করোনার টিকা এসেছে। আগামী বুধবার টিকা দেওয়া শুরু হবে। তবে টিকা নিয়ে মানুষের মনে আছে নানা প্রশ্ন। অনেকের মনে টিকা নিয়ে সন্দেহ আছে। অনেকে টিকা নেবেন কি না, তা নিয়েও দ্বন্দ্বে আছেন।

কী কী প্রশ্ন মানুষের মনে আসতে পারে, তার কিছু নমুনা তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে সরকারের কোভিড-১৯ টিকাদান সহায়িকায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রশ্ন ও উত্তরগুলো প্রথম আলোর পাঠকের জন্য তুলে দেওয়া হলো।

১: কোভিড-১৯ টিকা কাদের দেওয়া হবে?

উত্তর: জাতীয় কোভিড-১৯ টিকাদান ও কর্মপরিকল্পনা অনুসারে অগ্রাধিকারভিত্তিক তালিকা অনুযায়ী সবাইকে টিকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে আছে: ১. সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী, ২. বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মী, ৩. বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা, ৪. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ৫. প্রতিরক্ষাকাজে নিয়োজিত বাহিনীর সদস্য, ৬. রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কর্মকর্তা, ৭. নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, ৮. গণমাধ্যমকর্মী, ৯. সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কর্মী, ১০. ধর্মীয় প্রতিনিধি, ১১. মরদেহ সৎকারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, ১২. জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি, ১৩. নৌ-রেল-বিমানবন্দরে কর্মরত ব্যক্তি, ১৪. মন্ত্রণালয় থেকে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সরকারি কার্যালয়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ১৫. ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী। চিঠিতে নির্দিষ্ট ছকে তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে। তাতে অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে নাম, পেশা ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিতে বলা হয়েছে।

২: করোনা মহামারির সময় কাদের টিকা দেওয়া যাবে না?

উত্তর: নিবন্ধন করেননি বা অগ্রাধিকারভিত্তিক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হননি, এমন কোনো ব্যক্তিকে কোভিড টিকা দেওয়া হবে না। ১৮ বছরের নিচে, অন্তঃসত্তা ও দুগ্ধ দানকারী মা, অসুস্থ ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ব্যক্তিকে আপাতত টিকা দেওয়া যাবে না। সুস্থ হলে পরবর্তী সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারিত টিকাদান কেন্দ্র থেকে টিকা নিতে অনুরোধ করা হবে। ব্যক্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে টিকা দেওয়া হবে না।

করোনাভাইরাস
করোনাভাইরাস

৩: কোনো অন্তঃসত্ত্বা নারী কি এই টিকা পাবেন?

উত্তর: অন্তঃসত্ত্বা নারীদের আপাতত কোভিড-১৯ টিকা দেওয়া হবে না।

৪: জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে কীভাবে করোনার টিকা পাওয়া যাবে?

উত্তর: এনআইডি বা জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে অনলাইন রেজিস্ট্রেশনে অন্তর্ভুক্ত করে এই কোভিড-১৯ টিকার আওতায় আনা হবে। কোভিড-১৯ টিকা পর্যায়ক্রমে সবাইকেই দেওয়া হবে। তাই পরবর্তী সময়ে এনআইডি বা জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহের পর টিকা নিতে হবে।

৫: টিকাদান কার্ড ছাড়াই একজন কেন্দ্রে এসেছেন। তবে মোবাইলে কোনো তথ্য দেখা যাচ্ছে না; এখন এই ব্যক্তি কী করবেন?


উত্তর: কোভিড-১৯ টিকাদান কার্ড ছাড়া টিকা প্রদান করা হবে না।

৬: এক ব্যক্তির কোভিড-১৯ হয়েছিল। এখন চিকিৎসার পর ভালো আছেন। ওই ব্যক্তি কি কোভিড-১৯ টিকা পাবেন?

উত্তর: কোভিড-১৯ পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসার ২৮ দিন পর টিকা দেওয়া যাবে।

৭: এক ব্যক্তি ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার বা সম্মুখসারির কর্মী। তিনি কাজ শেষে প্রতিদিন বাসায় যান। তাহলে বাসার সবাই কি এই টিকা পাবেন?

উত্তর: শুধু অগ্রাধিকারের তালিকার ভিত্তিতে টিকা প্রদান করা হবে।

৮: টিকাদান চলাকালে অন্য কেন্দ্রের বা অন্য এলাকার কোনো ব্যক্তি যদি টিকা নিতে আসে, তবে তাকে টিকা দেওয়া হবে?

উত্তর: ওই ব্যক্তি যদি নির্দিষ্ট ওই তারিখের টিকা প্রাপ্তির তালিকার অন্তর্ভুক্ত হন, তবে টিকা দেওয়া হবে। টিকাদানকর্মী অবশ্যই অনলাইনে চেক করে টিকা দেবেন এবং টিকা প্রদানের তথ্য হালনাগাদ করবেন।

৯: প্রতিদিন উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন করেন—এমন ব্যক্তি কি টিকা পাবেন?

উত্তর: অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত হলে কোভিড-১৯ টিকা দেওয়া হবে। অসুস্থ বা হাসপাতালে ভর্তি না থাকলে টিকা দেওয়া যাবে।

১০: পনেরো দিন আগে হৃদ্‌যন্ত্রে অস্ত্রোপচার হয়েছে—এমন ব্যক্তি কি করোনার টিকা পাবেন?

উত্তর: সুস্থ হলে এবং অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত হলে কোভিড-১৯ টিকা পাবেন।

১১: এই টিকার কি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে?

উত্তর: অন্য সব ওষুধ কিংবা টিকার মতো এই টিকারও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেগুলো খুবই মৃদু হয়ে থাকে, যেমন: টিকার স্থানে ব্যথা, ফোলা, লালচে ভাব, মাংসপেশি ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, দুর্বলতা, বমি বমি ভাব, জ্বর, ক্লান্তি ইত্যাদি। ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী এখন পর্যন্ত মারাত্মক কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানা যায়নি। তবে টিকা নেওয়ার পর যেকোনো সমস্যা হলে অবশ্যই দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যেতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

১২: এক ব্যক্তির বয়স ৭০ বছর। তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত, বিছানা থেকে উঠতে পারেন না, কীভাবে ওই ব্যক্তি টিকা পাবেন?

উত্তর: হাসপাতালে এসেই সবাইকে টিকা নিতে হবে। তবে জনবল ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ওপর ভিত্তি করে টিকাদানকারী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।

SHARE THIS ARTICLE