আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ খুলনা সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক আবারো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল অনুষ্ঠিত ভোটে নৌকা প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮২৫ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আব্দুল আউয়ালের চেয়ে ৯৪ হাজার ৭৬১ ভোট বেশি পেয়েছেন আবদুল খালেক। খুলনা শিল্পকলা একাডেমিতে গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন ২৮৯টি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করেন।
আবদুল খালেক ১৯৭৭ সাল থেকে টানা জনপ্রতিনিধিত্ব করছেন। ৪৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনে একবার ছাড়া প্রতিবারই হয়েছেন বিজয়ী। জয়ের পর তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, ‘আওয়ামী লীগের হাত ধরেই খুলনা সিটির আধুনিকায়ন শুরু হয়েছে। ২০০৮ সালের পর যে উন্নয়ন হয়েছে তা কখনো হয়নি। এর পরের পাঁচ বছর কোনো প্রকল্প নিতে পারেননি তৎকালীন মেয়র মনিরুজ্জামান মনি। ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত আড়াই হাজার কোটি টাকার কাজ হয়েছে, যা দৃশ্যমান। খুলনার উন্নয়নে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে উন্নয়নমূলক কাজগুলো শেষ করাই আমার প্রধান লক্ষ্য।’
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। তবে কিছু কিছু কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিত থাকায় ৪টার পরও ভোট নেয়া হয়। নির্বাচন নিয়ে তৎপর ছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগারগাঁওয়ের নির্বাচন অফিসে বসে সিসিটিভি ক্যামেরায় ভোট পর্যবেক্ষণ করা হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বিকালে জানান, খুলনার নির্বাচনে ৪২-৪৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে কোথাও ভোট বাতিল বা কোনো কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়নি।
তালুকদার আবদুল খালেকের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আব্দুল আউয়াল হাতপাখা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৬০ হাজার ৬৪ ভোট। এছাড়া জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধু পেয়েছেন ১৮ হাজার ৭৪, জাকের পার্টির এসএম সাব্বির হোসেন ৬ হাজার ৯৬ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম শফিকুর রহমান পেয়েছেন ১৭ হাজার ২১৮ ভোট।
জাপার মেয়র প্রার্থী এসএম শফিকুল ইসলাম মধু অবশ্য ইভিএমে ভোট নিতে অনেক সময় লেগেছে বলে দাবি করেন। এতে ভোট কারচুপিরও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা আব্দুল আউয়াল অভিযোগ করেন, ইভিএমে হাতপাখায় চাপ দিলে ভোট চলে যাচ্ছে নৌকায়। তবে সবকিছুকেই ভিত্তিহীন বলে জানান নির্বাচনসংশ্লিষ্টরা।
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাধারণ ৩১টি ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে ১৩৬ জন ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এর মধ্যে নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে এসএম খুরশিদ আহমেদ টোনা ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে জেডএ মাহমুদ ডন আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
বরিশাল ফলাফল
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত)। তিনি ৫৩ হাজার ৯৮০ ভোটের ব্যবধানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল করিমকে হারিয়েছেন। বরিশাল শিল্পকলা একাডেমিতে স্থাপিত ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র থেকে গতকাল রাতে ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির।
রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ পেয়েছেন ৮৭ হাজার ৮০৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ফয়জুল করিম ৩৩ হাজার ৮২৮ ভোট পেয়েছেন। তৃতীয় হওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান ৭ হাজার ৯৯৯ ভোট পেয়েছেন।
কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে বলে দাবি করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির। তবে সুষ্ঠুভাবে ভোট চললেও দুপুরের দিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল করিমের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে। এতে তিনিসহ দলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। এ ঘটনায় নগরের বিভিন্ন এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কয়েকশ নেতাকর্মী শহরের দুটি স্থানে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা একসময় লাঠিসোঁটা নিয়ে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কও অবরোধ করেন। পরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
হামলা, মারধর, হয়রানি, পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়া, কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়া, ভোটারদের বাধা দেয়া, জোরপূর্বক ভোট দেয়ারও অভিযোগ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ফল প্রত্যাখ্যান করে গতকাল রাতে এক সংবাদ সম্মেলন করেন দলটির আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিম। সেখানে তিনি ২৫ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটির ভোটও বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি দলীয় প্রার্থী ও কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আগামী শুক্রবার বাদ জুমা সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এদিকে নৌকার কর্মীদের ওপর হামলা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন নৌকা প্রতীকের প্রধান এজেন্ট আফজালুল করিম। বেলা ২টার দিকে বরিশাল জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরের কাছে তিনি এ অভিযোগ দেন। অভিযোগে ছয়টি ওয়ার্ডে হাতপাখার লোকজন নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের মারধর, ভোট কেন্দ্রে আসতে বাধা, ভোট দিতে আসা নারীদের ধর্মীয়ভাবে বুঝিয়ে নৌকায় ভোট দিতে নিষেধ করা, কেন্দ্রে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের লাঠি ও তলোয়ার নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ করা হয়।
কাউন্সিলর হলেন যারা: বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩০ সাধারণ কাউন্সিলর ও ১০ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে ১ নং ওয়ার্ডে আউয়াল মোল্লা, ২ নং ওয়ার্ডে মুন্না হাওলাদার, ৩ নং ওয়ার্ডে ফারুক মিরা, ৪ নং ওয়ার্ডে সৈয়দ আবি, ৫ নং ওয়ার্ডে কেফায়েত হোসেন রনি, ৬ নং ওয়ার্ডে জামাল হোসেন, ৭ নং ওয়ার্ডে রফিকুল ইসলাম খোকন (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত), ৮ নং ওয়ার্ডে সেলিম হাওলাদার, ৯ নং ওয়ার্ডে হুমায়ন কবির লিঙ্কু, ১০ নং ওয়ার্ডে জয়নাল আবেদিন, ১১ নং ওয়ার্ডে মজিবর রহমান, ১২ নং ওয়ার্ডে আনোয়ার হোসেন রয়েল, ১৩ নং ওয়ার্ডে মেহেদি পারভেজ খান আবির, ১৪ নং ওয়ার্ডে শাকিল আহমেদ পলাশ, ১৫ নং ওয়ার্ডে সামজিদুল কবির বাবু, ১৬ নং ওয়ার্ডে সাহিন সিকদার, ১৭ নং ওয়ার্ডে আক্তরুজ্জান হিরু, ১৮ নং ওয়ার্ডে জিয়াউল হক মাসুম, ১৯ নং ওয়ার্ডে গাজী নঈমুল হোসেন লিটু, ২০ নং ওয়ার্ডে জিয়াউর রহমান বিপ্লব, ২১ নং ওয়ার্ডে সাঈদ আহমেদ মান্না, ২২ নং ওয়ার্ডে আনিসুর রহমান, ২৩ নং ওয়ার্ডে এনামুল হক বাহার, ২৪ নং ওয়ার্ডে ফিরোজ আহমেদ, ২৫ নং ওয়ার্ডে সুলতান মাহামুদ, ২৬ নং ওয়ার্ডে হুমায়ন কবির, ২৭ নং ওয়ার্ডে মনির তালুকদার, ২৮ নং ওয়ার্ডে হুমায়ন কবির, ২৯ নং ওয়ার্ডে ইমরান মোল্লা ও ৩০ নং ওয়ার্ডে খায়রুল শাহিন।
এছাড়া সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচিত হয়েছেন ১, ২, ৩ নং ওয়ার্ডে ডালিয়া পারভিন, ৪, ৫, ৬ নং ওয়ার্ডে আলম তাজ, ৭, ৮, ৯ নং ওয়ার্ডে কোহিনূর বেগম, ১০, ১১, ১২ নং আয়েশা তৌহিদ লুনা, ১৩, ১৪, ১৫ নং ওয়ার্ডে ইসরাত জাহান লাভলি, ১৬, ১৭, ১৮ নং মজিদা বোরহান, ১৯, ২০, ২১ নং ওয়ার্ডে শিলা আক্তার, ২২, ২৩, ২৭ নং ওয়ার্ডে রেশমি বেগম, ২৪, ২৫, ২৬ নং ওয়ার্ডে সেলিনা আক্তার ও ২৮, ২৯, ৩০ নং ওয়ার্ডে রাশিদা পারভিন।