নববর্ষ ২০২১: শুভেচ্ছা-প্রার্থনা


ডাঃ জিন্নুরাইন জায়গীরদার- আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ আস সালামু আলাইকুম,
স্বদেশে এবং প্রবাসে, বিশ্বের সকল প্রান্তে অবস্থানরত বাংলা ভাষাভাষি সকলের জন্য নূতন বছর ২০২১ সালের শুভেচ্ছা এবং সুস্থতা প্রার্থনা। সাধারণতঃ এসকল শুভেচ্ছা প্রদান এক ধরনের রীতি, সংস্কৃতির অংগ, তবে এবারের শুভেচ্ছায় আমি চলিত রীতিতে কিছুটা পরিবর্তন আনলাম। পরিবর্তনটা হচ্ছে শুভেচ্ছা-প্রার্থনা। আমি ছন্দে লিখলাম,

আনিলাম
পরিবর্তীত শুভেচ্ছা-প্রার্থনা ধরনীতে

নব-বরষে আমি তুললাম দুটো হাত
স্রষ্টা সমীপে,
দুটো হাত একে একে রূপান্তরিত হলো লক্ষ কোটি হাতে
জানেন অন্তর্য্যামী,
কি কামনা শুভেচ্ছা-প্রার্থনায় আমার! 

বিধাতার কাছে, এ নূতন বছরে কামী
কোভিডের ধ্বংস দানি,
শুভেচ্ছা-প্রার্থনাকে স্বীকার করো হে স্রষ্টা নিরাকার।।  

আমার মনে হয় আপনারা সকলেই আমার সাথে একমত হবেন যে, ২০২০ সাল একবিংশ শতাব্দীর অনন্যসাধারণ একটি বছর আমরা পার করেছি।  যারা বেঁচে আছি তারা দেখতে পারছি, শুনতে পারছি, বলতে পারছি, লিখতে পারছি কিন্তু অসময়ে, অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অপ্রাত্যাশিতভাবে  যারা আমাদের মধ্য থেকে বিদায় নিয়েছেন তাদের সাথে সকল যোগাযোগ আমরা হারিয়ে ফেলেছি, তাদের আমরা দেখতে পারছিনা, তাদের  সাথে কথা বলতে পারছিনা, তাদের স্নেহমমতা থেকে আমরা বঞ্চিত। তাই আমাদের সকলের সুস্থতা এবং যারা বিদায় নিয়েছেন তাদের সকলের প্রশান্তি কামনায় স্রষ্টার কাছে দয়া প্রার্থনা এবছরের শুরুতে আমাদের ঐকান্তিক কামনা। 

দুর্যোগপূর্ন মহামারী এখনো চলছে, আমরা সকলে এখনো নিরাপদ বোধ করতে পারছিনা, সংকট এবং সংক্রমণ চলছে। পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশে লক ডাউন তৃতীয়বারের মত পুনরায় আরোপ করা হয়েছে।  আমরা অনেকেই ঘরে বন্দী হয়েছি, অনেকেই চাকুরী হারিয়েছি, ব্যাবসা হারিয়েছি, শিক্ষাব্যাবস্থা বিপর্য্যস্ত, সামাজিকতা হতচকিত। এই অবস্থায় শুধুমাত্র শুভেচ্ছা আমাদের জন্য যথেষ্ট নয়, প্রার্থনা এবং প্রার্থনা আমাদের জন্য অত্যাবশ্যক।

মাতৃভূমি বাংলাদেশেও মহামারি চলছে, সংক্রমণ বাড়ছে, জীবন ঝরে যাচ্ছে কিন্তু জীবন সেখানে বন্দী নেই, নেই কোয়ারেন্টাইন, নেই আইসোলেশন কিংবা গন টেস্টিং-ট্রেকিং। নানা কারণে সেখানে লক ডাউন নেই, মাঝে মাঝে মনে হয় মহামারী সেখানে বোধ করি পরাজিত, যদিও সংক্রমণ আর মৃত্যুও চলছে পাশাপাশি, ব্যাতিক্রম শুধু শিক্ষাঙ্গন। শিক্ষাঙ্গনে এই ব্যাতিক্রমের যৌক্তিকতা কি সেটা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও সরকার এব্যাপারে দৃঢ় চিত্ত।

আপনাদেরকে একট গল্প বলি, গল্পটি আব্বাসি খলিফা হারুনুর রশিদের শাসনকালীন সময়ের কথা, সত্যি না হলেও অসত্য নয়, শুনুন তাহলে, হারুনুর রসীদের শাসনকালে বাগদাদে একজন স্বনামধন্য পাগল ছিলেন যার নাম ছিল বহলুল পাগল। একদিন বহলুলকে দেখে খলিফা বললেন, বহলুল তুমি কি আমাকে কিছু বলবে? বহলুল বললেন, হ্যাঁ আমি আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে চাই। খলিফা বললেন, ঠিক আছে করো।

বহলুল বললেন, মনে করো তুমি মরুভূমি দিয়ে যাচ্ছ পথে পানি না পেয়ে তুমি পিপাসায় কাতর, মনে হচ্ছে পানি না পেলে মৃত্যু অনিবার্য্য। এমন সময়ে কেউ পানি নিয়ে এগিয়ে এলে, তার বিনিময়ে তুমি তাকে কি দেবে? খলিফা বললেন, আমি তাকে সহস্র স্বর্নমূদ্রা দেবো।

বহলুল বললেন, কিন্তু সে যদি সহস্র স্বর্নমূদ্রার বিনিময়ে পানি দিতে রাজী না হয়? খলিফা বললেন, তাহলে আমি তাকে আমার রাজ্যের অর্ধেক দিয়ে দেবো।

বহলুল বললেন, আচ্ছা মনে করো তুমি অর্ধেক রাজত্বের বিনিময়ে সেই পানি পান করলে কিন্তু এরপর তোমার প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেলো, এখন যে লোক তোমার প্রস্রাব বন্ধের রোগ সারাতে পারবে তাকে তুমি কি দেবে? খলিফা বললেন, রাজত্বের অপর অর্ধেক দিয়ে দেবো।

তখন বহলুল বললেন, খলিফা! দেখো যে রাজত্বের মূল্য শুধুমাত্র এক গ্লাস পানি তার জন্যে তুমি কি না আস্ফালন করছ? অত্যচার অবিচার করছ। বরং এই মূল্যহীন রাজত্ব দিয়ে আল্লাহ’র সৃষ্টির সেবা করাই কি উত্তম নয়। খলিফা বললেন, হুম!!

আজ পৃথিবীতে মহামারী চলছে আর এই মহামারী থেকে বাচার জন্য পৃথিবী ব্যাপী শাসক শ্রেণীরা কি না করছে। কোটী কোটী ডলারের বিনিময়েও মানবজাতি আজ এই মহামারী থেকে মুক্তি চায়। কিন্তু একটু ভেবে দেখুন এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য আজ সকল সম্পদই মূল্যহীন যদিনা সফলতা আসে। আমাদের ভেবে দেখা উচিত কেন আজ এই মহামারী? এর পিছনে কি কোন অতিজাগতিক কিংবা অতিপ্রাকৃত কোন কারণ আছে কি না? দেশে দেশে বিশ্ব শাসকশ্রেণীর অত্যচার, অনাচার আর অবিচারের কাহিনী ত আমাদের অজানা নয়।

আইরিশ-বাংলা পোস্ট আপানদের সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করছে। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ঘরে থাকুন! দূরত্বে থাকুন! মুখোশ পরিধান করুন আর বারে বারে হাত ধৌত করুন।

সর্বোপরি প্রার্থনা করুন স্রষ্টা সমীপে, স্রষ্টার ক্ষমা ও প্রার্থনা আমাদের সকলের জন্যে এই মুহূর্তে অত্যাবশ্যক।।

SHARE THIS ARTICLE