আইরিশ বাংলা পোস্ট ডেস্ক: কোভিড-১৯ ভাইরাসের পরিবর্তিত একটি নূতন রূপ ধরা পড়ে যুক্তরাজ্যে আর তা নিয়ে বিশ্বব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে, সৃষ্টি হয়েছে আতংক। কোভিডের দ্রুত সংক্রমণে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ড জুড়ে সর্বোচ্চ মাত্রার লকডাউন ঘোষণা করেছেন, নাম দিয়েছেন টিয়ের-৪। এই ঘোষণার পূর্ব পর্য্যন্ত টিয়ের-৩ ছিল সর্বোচ্চ বিধিনিষেধ, টিয়ের-৪ যোগ করে মূলতঃ তিনি লক ডাউন জারি করলেন বলেই অনেকের ধারনা। গত রোববার এই ঘোষণা দেয়ার পর থেকে বৃটেনের সাথে বিমান যোগাযোগ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে এ পর্য্যন্ত ৪০টিরও বেশি দেশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, পর্তুগাল, সুইডেন, বেলজিয়াম, ফিনল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, পোল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া ও তুরস্ক। ইউরোপের বাইরের দেশ ভারত, কানাডা, ইরান, সৌদি আরব, ইসরাইল, কুয়েত এল সালভাদর, আর্জেন্টিনা, চিলি ও মরক্কো এমন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সৌদি আরব ত সারা বিশ্বের সাথে সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।
বড়দিন উপলক্ষে ব্রিটেনে যখন বিধিনিষেধ শিথিল করার চিন্তা ভাবনা চলছিল, ঠিক সেই সময়ে দ্রুত সংক্রমণ ঘটতে থাকলে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেন সরকারকে। এর প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী জনসন ওই বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন। শীর্ষ স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, এই নবরূপী এন ৫০১ ওয়াই ভাইরাসটির সংক্রমণের হার সাধারণ কোভিড থেকে ৭০% বেশী।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কার্য্যতঃ যুক্তরাজ্য বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সারা যুক্তরাজ্য জুড়ে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে জনসাধারণের মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে গেছে। অনেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সংগ্রহ করার জন্য বাজারে এবং দোকানপাটে হুমড়ি খেয়ে পড়েন, বিভিন্ন দোকানে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন লেগে যায়। বড়দিনের আগে অনেক যাত্রীরা ব্রিটেনে আটকা পড়ে, বিভিন্ন দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করছেন অন্যদিকে ব্রিটেনে যাবার জন্য অনেক যাত্রী আটকে গেছেন বিভিন্ন দেশে।
বৃটিশ সরকারের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রোববার থেকে বৃটেনের সকল যাত্রীবাহী ফ্লাইট আগামী ১লা জানুয়ারি পর্যন্ত নিষিদ্ধ করেছে নেদারল্যান্ডস। দিনশেষে তারা আরো বলেছে, বৃটেন থেকে জলপথে যাওয়া সব যাত্রীর ক্ষেত্রেও তারা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তবে ফ্রেইট চলাচল অব্যাহত থাকবে। উল্লেখ্য, রোববার বৃটেনে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে ১৩০০০ মানুষ। এটা একদিনে বৃটেনে আক্রান্তের সর্বোচ্চ রেকর্ড। এ অবস্থায় বৃটেনের সঙ্গে ফ্রেইট লরিসহ সব রকম ট্র্যাভেল রোববার মধ্যরাত থেকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য সাময়িক স্থগিত করেছে ফ্রান্স। এ দু’টি দেশের মধ্যে শত শত লরি চলাচল করে প্রতিদিন। এরই মধ্যে পরবর্তী নোটিশ না দেয়া পর্যন্ত ডোভারে ফেরি টার্মিনাল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ নিয়ে এতোই চাপ সৃষ্টি হয়েছে যে, এ ইস্যুতে সোমবার জরুরি কোবরা কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করার কথা বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের।
বছরের এ সময়টাতে বিপুল পরিমাণ যাত্রী সফর করেন আয়ারল্যান্ড ও বৃটেনের মধ্যে। কিন্তু আয়ারল্যান্ড কর্তৃপক্ষ ইংল্যান্ড, ওয়েলস এবং স্কটল্যান্ড থেকে রোববার মধ্যরাত থেকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য সব রকম যাত্রীবাহী ফ্লাইট নিষিদ্ধ করেছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে বৃটিশ জনস্বাস্থ্যের জন্য বৃটিশদের উচিত হবে না এ সময় আয়ারল্যান্ডে সফরে যাওয়া। সেটা আকাশপথে হোক বা জলপথে হোক।
জার্মানির পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, রোববার মধ্যরাত থেকে বৃটেন থেকে যাওয়া কোনো বিমানকে জার্মানিতে অবতরণ করতে দেয়া হবে না তবে এক্ষেত্রে কার্গো হবে ব্যতিক্রম। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেনস স্পাহন বলেছেন, বৃটেনে করোনার যে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে সেই অবস্থা জার্মানিতে সৃষ্টি হয়নি। পূর্ব সতর্কতা হিসেবে রোববার মধ্যরাত থেকে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টার জন্য বৃটেন থেকে সব রকম ফ্লাইট এবং রেল যোগাযোগ স্থগিত করেছে বেলজিয়াম। আগামী ৬ই জানুয়ারি পর্যন্ত সব রকম ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে ইতালি। বৃটেন থেকে ফ্লাইট বন্ধ করছে অস্ট্রিয়াও। রোববার মধ্যরাত থেকে সব রকম ফ্লাইট সাময়িক স্থগিত করেছে বুলগেরিয়া। তুরস্ক এবং সুইজারল্যান্ডও বৃটেন থেকে অস্থায়ীভিত্তিতে সব রকম ফ্লাইট নিষিদ্ধ করেছে। কানাডা রোববার মধ্যরাত থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার জন্য বৃটেন থেকে যাওয়া সব যাত্রীবাহী ফ্লাইট সাময়িক স্থগিত করেছে। বৃটিশ ভ্রমণকারীদের জন্য নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে হংকং, ইসরাইল, ইরান, ক্রোয়েশিয়া, আর্জেন্টিনা, এল সালভাদর, মরক্কো, কুয়েত। অন্যদিকে করোনা মহামারির কারণে এক সপ্তাহের জন্য শুধু বৃটেন নয়, আন্তর্জাতিক সব ফ্লাইট বন্ধ করেছে সৌদি আরব।
ইতিমধ্যে ডেনমার্কে এই পরিবর্তিত ভাইরাস ধরা পড়ায় সুইডেন ডেনমার্ক থেকে সকল বিদেশীদের আগমনে নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইমের্জেন্সী দফতরের প্রধান মাইক রাইয়ান ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মেট হ্যানককের মন্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন, মহামারীতে ভাইরাসের পরিবর্তন অত্যন্ত স্বাভাবিক এবং এটা কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়নি।
বরিস জনসন বলেছেন, তিনি ফরাসী প্রধানমন্ত্রী ইমানুয়েল ম্যাক্রনের সাথে যোগাযোগ করে জরুরী পণ্য আমদানির ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন দ্রুত এই সমস্যার সমাধান আনা সম্ভব হবে। ইইউ নেতৃবৃন্দ একটি সমন্বিত ব্যাবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। আলোচনা চলছে, বিকল্প ব্যাবস্থা হিসেবে ব্রিটেন থেকে আগত সকল যাত্রী কোভিড পরীক্ষা করে ফলাফল নিগেটিভ নিয়ে আসার ব্যাপারে আলোচনা চলছে।