যুক্তরাজ্যে বিতর্কিত অভিবাসন বিল নিয়ে চলছে ‘পার্লামেন্টারি পিং-পং’

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঠেকাতে বিতর্কিত অভিবাসন বিলটি পার্লামেন্টে অনুমোদনের আশায় কিছুটা শিথিল অবস্থানে এসেছে যুক্তরাজ্য সরকার৷ কিন্তু পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসে বিরোধীদের শক্ত অবস্থানের কারণে, তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি৷

এই অভিবাসন বিলটি পাশ হলে ছোট নৌকা নিয়ে ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে যুক্তরাজ্যে আসা অভিবাসীদের অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করা যাবে এবং তাদের ডিপোর্ট করতে পারবে যুক্তরাজ্য৷

উত্তর ফ্রান্স থেকে ছোটো নৌকা নিয়ে যুক্তরাজ্যে আসা অভিবাসীদের থামানোকে অগ্রাধিকার হিসেবে নিয়েছে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের নেতৃত্বাধীন দেশটির রক্ষণশীল সরকার৷ গেল বছর, অন্তত ৪৫ হাজার অভিবাসী এই পথে যুক্তরাজ্যে এসেছেন৷ আসার পথে অনেকে মারাও গেছেন৷

যুক্তরাজ্যে অভিবাসন প্রত্যাশীদের শীর্ষ ৮-এ বাংলাদেশ

রক্ষণশীলদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় বিলটি হাউস অফ কমন্স বা নিম্নকক্ষে অনুমোদিত হয়েছে৷ কিন্তু, হাউস অফ লর্ডস বা উচ্চকক্ষে প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়েছে৷ উচ্চকক্ষ আইনটি আটকে দিতে না পারলেও সংশোধনের ক্ষমতা রাখে৷

ফলে গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ বাদ দিয়ে ২০টি সংশোধনী সহ বিলটি নিম্নকক্ষে ফেরত পাঠিয়েছে হাউস অব লর্ডস৷

বিলটিতে এমন একটি ধারা রাখা হয়েছিল, যার মাধ্যমে এটি আইন আকারে পাশ হওয়ার আগেই ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসা অভিবাসীদের জোর করে ফেরত পাঠানো বা ডিপোর্ট করা যাবে৷ এছাড়া, অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্কদের আটকের সময়সীমা ২৮ দিন থেকে কমিয়ে আট দিন করা হয়েছে৷

কিন্তু বেশিরভাগ পরিবর্তন প্রত্যাখ্যান করে, বিলটিকে আবারও উচ্চকক্ষে ফেরত পাঠানো হয়েছে নিম্নকক্ষ থেকে৷ এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত ‘পার্লামেন্টারি পিং-পং’ নামে পরিচিত৷ এক পক্ষ পিছু না হটা পর্যন্ত এই টানা হেঁচড়া কয়েকদিন ধরে চলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷

অভিবাসন মন্ত্রী রবার্ট জেনরিক বলেছেন, লর্ডসের উচিত বিষয়টি নিয়ে ‘‘আবার চিন্তা করা’’ এবং নির্বাচিত আইন প্রণেতাদের ইচ্ছাকে সম্মান করা৷

তিনি বলেন, ‘‘এই বিলটি দ্রুত আইনে পরিণত হওয়া উচিত, যাতে নৌকাগুলো থামানো সম্ভব হয়৷’’

বিলটি আইন আকারে পাশ হলে যুক্তরাজ্যে পৌঁছানো অভিবাসীকে আশ্রয় চাওয়ার অধিকার বঞ্চিত করবে৷ এমনকি তাদের আটক করে তাদের নিজ দেশে ডিপোর্ট করা যাবে কিংবা অথবা নিরাপদ কোনো তৃতীয় দেশে যেমন রুয়ান্ডায় স্থানান্তর করা হবে৷ যাদের একবার ডিপোর্ট করা হবে, তাদের পুনরায় যুক্তরাজ্যে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে৷

সরকার বলছে, এই আইনের মাধ্যমে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা যেমন বন্ধ করা যাবে, তেমনি এর পেছনে থাকা মানব পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে৷

সমালোচকেরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে বেশিরভাগ শরণার্থী এবং আধুনিক দাসত্বের শিকার মানুষেরা ব্রিটেনে আশ্রয় চাওয়ার অধিকার হারাবেন এবং যুক্তরাজ্যের যে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে সেটিও লংঘিত হবে৷

অভিবাসীদের নিজ দেশে না রেখে তৃতীয় নিরাপদ দেশ হিসেবে আফ্রিকার রুয়ান্ডায় স্থায়ীভাবে পাঠাতে একটি চুক্তিও করেছে যুক্তরাজ্য৷ কিন্তু জুনে সরকারের এই পরিকল্পনাকে অবৈধ বলে রায় দিয়েছে আপিল আদালত৷ তবে যুক্তরাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে আপিলের কথা জানিয়েছে৷

বিরোধী লেবার পার্টির অভিবাসন মুখপাত্র স্টিফেন কিনক বলেন, ‘‘এই বিলটি শুধু একটি ভয়ানক পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করবে৷’’

SHARE THIS ARTICLE