রাজধানীর অলিগলিতে পশুর হাট, স্বাস্থ্য বিধির ছিটেফোঁটাও নেই।

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ রাজধানীতে পশুর হাট বসানোর শর্ত জনবসতি এলাকা থেকে দূরে ফাঁকা জায়গায়; আবাসিক এলাকায়তো প্রশ্নই ওঠে না। এছাড়া শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি পালনে হাটের প্রবেশপথে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, স্যানিটাইজার, মাস্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতে না দেওয়া কারও মাস্ক না থাকলে তাকে মাস্ক সরবরাহ করাসহ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা। বেপারি, খামারিদের থাকা-খাওয়ার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্থান নির্ধারণ করাও ছিল অন্যতম শর্ত। এসব শর্ত না মানলে তাৎক্ষণিকভাবে ইজারা বাতিল করে হাট বন্ধ করার ঘোষণা ছিল ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের। তদারকির জন্য থাকার কথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের। হাট বসার কথা ঈদের আগের দুই দিন। অথচ হাট বসা শুরু হয়েছে আগেই। গাদাগাদি করে আছে বেপারি ও খামারিরা। স্বাস্থ্যবিধির ছিটেফোঁটাও নেই কোথাও- কোনোখানে। ইজরাদারের লোকজন কেউই মাস্ক পরছেন না। প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি বন্ধ করে বসানো হয়েছে হাট। ওষুধের দোকান, আবাসিক বাসা-বাড়ির সামনে ‘সন্ত্রাসী কায়দায়’ ইজাদারের লোকজন জোর করে গবাদি পশুর হাট বসিয়েছে। বসতবাড়িতেও ঢুকতে পারছেন না বাসিন্দারা। স্থানীয়রা প্রতিবাদ করেও কোনো প্রতিকার পাননি। কোনো কোনো হাটে পুলিশের সামনেই স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন হলেও কেউ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বিগত বছরের চেয়ে এবার হাটের সংখ্যা কম হওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় বাড়ছে প্রতিদিন। এভাবে চলতে থাকলে করোনাভাইরাস মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। গতকাল সোমবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলা থেকে শনির আখড়া হয়ে মাতুয়াইল পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটারজুড়ে রাস্তার পাশে, আবাসিক এলাকার অলিগলিতে দেখা গেল গরুর হাট। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শনির আখড়া ভেতরে যাতায়াতের প্রধান সড়ক জিয়া সরণি বন্ধ করে রাখা হচ্ছে গরু। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে এ এলাকার সাধারণ বাজারও। শুধু মানুষের ভিড় নয়, রীতিমতো গরুর সঙ্গে ঠেলাঠেলি করে যাতায়াত করতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। স্থানীয় বাসিন্দা আলম মিয়া অভিযোগ করেন, সরকার ২৮ জুলাই থেকে হাটের অনুমতি দিলেও তিন দিন আগে থেকে হাটে পশু বিক্রি চলছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন অসংখ্য গরু নিয়ে হাটে আসছেন বেপারিরা। বাসার সামনে গরু নিয়ে বাসায় বের হতে পারছি না। দুর্গন্ধে বাসায় থাকা যাচ্ছে না। প্রতিবাদ করায় ইজরাদারদের লোকজন পাল্টা হুমকি দিচ্ছে। রীতিমতো লাঠিয়াল বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে যারা রাস্তার কিছু দূরে-দূরে হাতে লাঠি নিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় হাটের দেখভাল করছেন যেন কেউ কোনো প্রতিবাদ করতে না পারে। একই এলাকার সফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, দোকানপাটের বিশেষ করে ওষুদের দোকানের সামনেও আড়াআড়ি বেঁধে রাখা হয়েছে গরু।

বেপারিরাও সেখানেই গাদাগাদি করে থাকছেন। মাস্ক দূরে থাক কারো কোনো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বালাই নেই। ছোট তাঁবু টানিয়ে তার মধ্যেই রান্না করে খাচ্ছে। কারও মুখেই মাস্ক নেই। সামান্য বৃষ্টিতেই চারদিকে গোবর ছড়িয়ে রীতিমতো ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এ হাট ঘুরে দেখা গেছে, বেশকিছু যুবক হাতে লাঠি, মুখে বাঁশি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বসতবাড়ির সামনে গরুর রাখাতে কেউ প্রতিবাদ করলেই তারা ছুটে যান। বাড়ির মালিককে হুমকি দিলে বেপারিদের গরু নিয়ে বসিয়ে দেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এবার কোরবানির হাটে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশনা থাকলেও কিছুই মানা হচ্ছে না। বেপারিদের মধ্যে সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক বিতরণের কোনো কর্মসূচি চোখে পড়েনি এ হাটে। একই চিত্র দেখা গেছে মেরাদিয়া, আফতাবনগরসহ রাজধানীর সব হাটে। পোস্তগোলা শ্মশানঘাটে যাত্রাবাড়ীর মিরহাজারীবাগ এলাকার সুমন মিয়া বলেন, মাস্ক ভুলে বাসায় রেখে আসছি। মাস্ক পরে আসা দরকার ছিল। পোস্তগোলা শ্মশানঘাটের মাসুদ রানা বলেন, আমাদের কেউ এসব নিয়ে কড়াকড়ির কথা বলেনি। মাস্ক তো থাকেই; কিন্তু সবসময় পরে থাকতে পারি না। তাছাড়া যেমন পরিবেশে আমাদের থাকতে হয়, তাতে করোনা যেকোনো সময় ধরতে পারে। মাস্ক পরে থাকলেই বা কী আর না থাকলেই বা কী! শাহজাহানপুরে হাটে আসা ক্রেতা সাদ্দাম হোসেনকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করতে বলেন, আমার ইচ্ছা হয়নি মাস্ক পরিনি। আপনি বলার কে? মেরাদিয়া হাটে সিরাজগঞ্জ থেকে আসা মিন্টু মিয়া বলেন, ‘গরুর সাথে ময়লার মধ্যে ঘুমাই মাস্ক পরলেই বা কী? আর না পরলেই কী? একই হাটে কুষ্টিয়া থেকে আসা বেপারি জিয়া মাস্ক ছাড়াই গরুর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মাস্ক নেই কেন জিজ্ঞেস করতেই তিনি পকেট থেকে মাস্ক বের করে দেখান। পরেননি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা রাস্তার মধ্যে থাকতে হয়। কতক্ষণ মাস্ক পরে থাকা যায় প্রশ্ন রাখেন তিনি। এবার হাট ইজারার শর্তে বলা হয়েছে, পশুর হাট ঈদের দিনসহ পাঁচদিন চালু থাকবে। নির্ধারিত তারিখের বেশি দিন হাট পরিচালনা করা যাবে না। কোরবানির পশুর হাটের নির্ধারিত সীমানা বহাল থাকবে। সীমানার বাইরে কোনো হাট বসানো যাবে না। ইজারা গ্রহীতা নিজ ব্যবস্থাপনায় হাটের চৌহদ্দি সংরক্ষণপূর্বক চৌহদ্দির বাইরে যাতে পশুর হাট প্রসারিত না হয় তা নিশ্চিত করবে। করোনা রোধে অস্থায়ী পশুর হাটে বাধ্যতামূলকভাবে ইজারা গ্রহীতাকে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। ঢাকার দুই সিটির ১৭টি হাটে এসব মানা হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বিগত বছরের চেয়ে এবার হাট কম হওয়ায় অনুমোদিত হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় বাড়ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব হবে না। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) শাহ মো. ইমদাদুল হক আজকালের খবরকে বলেন, ইজারার শর্ত অনুযায়ী আগামীকাল থেকে (আজ মঙ্গলবার) হাট শুরু হবে। শুরুর দিন থেকেই কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে। স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

SHARE THIS ARTICLE