আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ স্কটল্যান্ডের নির্বাচনে স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (এস এন পি) টানা চতুর্থ বারের জন্য হলিরুড সংসদ নির্বাচনে বিজয় অর্জন করেছে। এস এন পির এই বিজয় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সাথে এক সাংবিধানিক লড়াইয়ের সূচনা করে দ্বিতীয় বারের মত স্কটিশ স্বাধীন গণভোটের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন স্কটিশ ফাস্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজন।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ভোট গণনা শেষ হওয়ার পরে, দেখা যায় এসএনপি ৬৪ টি আসনে জয়লাভ করেছে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য তাদের আর একটি আসনের প্রয়োজন ছিল। স্বাধীনতা বিরোধী কৌশলগত ভোটের পরও রেকর্ড সংখ্যাক আসনে এস এন পি বিজয় ছিনিয়ে এনেছে।
নিকোলা স্টারজেন বলেছেন, স্কটল্যান্ডের ভোটাররা হলিরুড পার্লামেন্টে গতবারের চেয়ে বেশী আসনে ভোট দিয়ে স্বাধীনতার পক্ষে একটি সুস্পষ্ট মেন্ডেট প্রদান করেছেন। এই নির্বাচনে এস এন পি ছাড়াও স্বাধীনতার পক্ষের গ্রিন পার্টিকে আরও ৮টি আসনে নির্বাচিত করেছে। নিকোলা স্টার্জন বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ের মাধ্যমে জনসাধারণ হলিরুডকে একটি স্পষ্ট ম্যান্ডেট দিয়েছে। এটি একটি “অসাধারণ” ফলাফল।
গ্লাসগোতে বিজয় বক্তৃতায় ফাস্ট মিনিস্টার বলেন, গণভোটের বিপক্ষে যুক্তরাজ্য সরকারের যে কোনও প্রচেষ্টা গণতন্ত্রের বিপক্ষে কার্য্যক্রম বলে বিবেচিত হবে। তিনি বলেন, এবারের হলিরুড নির্বাচনে রেকর্ড ৬৪% ভোট গ্রহণের মাধ্যমে তারা সাফল্য পেয়েছেন। তিনি বলেন, “এই নির্বাচনে দেশের জনগণের ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়েছে”। স্টারজন আরও বলেন, “এই নির্বাচনের ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে, আমাদের জনগণের ভবিষ্যৎ বেছে নেবার অধিকারকে বাধাগ্রস্থ করার কোন অধিকার বরিস জনসনের নেই। যদি টোরিরা এরকম প্রচেষ্টা গ্রহণ করে, তবে তা পরিপূর্ণভাবে প্রমাণ করবে যে যুক্তরাজ্য সমতার অংশীদার নয় এবং – আশ্চর্যজনকভাবে – ওয়েস্টমিনস্টার আর যুক্তরাজ্যকে স্বেচ্ছাসেবী ইউনিয়ন হিসাবে দেখেনা। এধরনের কার্য্যক্রম, স্কটল্যান্ড একটি স্বাধীন দেশ হওয়ার পক্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী যুক্তি হতে পারে।”
শেষ পর্য্যন্ত এবারের নির্বাচনে এস এন পি পেয়েছে ৬৪টি, টোরি দল পেয়েছে ৩১টি, লেবার পেয়েছে ২২টি, গ্রিন পেয়েছে ৮টি আর লিবারেল ডেমোক্রেট দল পেয়েছে ৪টি আসন।
নিকোলা স্টারজন ইংগিত করেন যে, তার সরকার বরিস জনসনের সাথে একটি সাংবিধানিক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। তার সরকার স্কটল্যান্ডে স্বাধীনতার ব্যাপারে একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেবে। যুক্তরাজ্য সরকারের আইনি পদক্ষেপ স্কটিশ সংসদের বিপক্ষে গেলে, স্বাধীনতার পক্ষে জনসমর্থন আরও বৃদ্ধি পাবে। তিনি মনে করেন, “বিশ্বের অধিকাংশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যে কোন সরকার জনগণের ইচ্ছার বিরোধিতা করা থেকে বিরত থাকত আর জনগণ যেহেতু স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে বিজয়ী করেছে তাই এর বিরোধিতা করার কোন শক্তি রাজনীতিবিদদের নেই।”
গতকালের এই নির্বাচন আবারো প্রমাণ করেছে, যুক্তরাজ্যের ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত কতটা অদূরদর্শী হয়েছে। স্কটল্যান্ডের জনগণ এই নির্বাচনের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য থেকে আলাদা করার পক্ষে একটি সুস্পষ্ট মতামত প্রদান করে বিভাজনকে প্রস্ফুটিত করে দিলো। যদি সত্যি নিকোলা স্টারজন স্কটল্যান্ডকে যুক্তরাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হন তাহলে যুক্তরাজ্যের বৈশ্বিক শক্তি অত্যন্ত দুর্বল হবে এবং অর্থনৈতিক ভাবে দেশটি মারাত্নক ঝুঁকিতে পতিত হবে বলে অনেকেই মনে করছেন।
সংবাদসূত্রঃ দা ডেইলি গার্ডিয়ান, আর টি ই, বিবিসি