৪টি ঔষুধ ও কয়েকটি ঔষুধের সমন্বিত প্রয়োগ নিয়ে কাজ চলছে করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

এ,কে,আজাদ- আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ গত বুধবার জেনেভায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউওইচও) প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রোয়াসুস বলেছেন, নতুন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সব মিলিয়ে ৪টি ঔষুধ ও কয়েকটি ঔষুধের সমন্বিত প্রয়োগ নিয়ে কাজ চলছে। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য সব দেশকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তেদরোস আধানোম গেব্রোয়াসুস।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯-কে প্রতিরোধ করতে মোট চারটি ঔষুধ ও কয়েকটি ওঔষুধের সমন্বিত প্রয়োগ নিয়ে কাজ চলছে। অনেক দেশ এসব ঔষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে এগিয়ে এসেছে। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ৭৪টি দেশ এই কাজে অংশ নিয়েছে বা অংশ নেওয়ার প্রক্রিয়াতে আছে। বুধবার সকালের মধ্যে ২০০-এরও বেশি রোগীকে বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। কোভিড-১৯ প্রতিরোধে কোন ওঔষুধ কার্যকর হবে, সেটি জানতে প্রত্যেক রোগীই আমাদের সহায়তা করছেন। আমাদের এক ধাপ করে এগিয়ে দিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য সব দেশকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তেদরোস আধানোম গেব্রোয়াসুস।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান জানিয়েছেন, তিন মাস আগে নতুন করোনাভাইরাস সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা ছিল না কারও। সমন্বিতভাবে কাজ করার কারণে এখন এ সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা সম্ভব হয়েছে। প্রতি দিনই নতুন নতুন তথ্য জানা যাচ্ছে। সারা বিশ্ব থেকে জানা নানান তথ্য পর্যালোচনা করেই নতুন নতুন গাইডলাইন তৈরি হচ্ছে। তথ্যের ভিত্তিতে নেওয়া বিশেষজ্ঞ মতামত এ ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব পাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে হাত ধোয়া কর্মসূচী ও এর কার্যকারিতা নিয়েও কথা বলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে ইউনিসেফ ও ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রসের সঙ্গে যৌথভাবে একটি গাইডলাইন প্রকাশ করা হয়েছে। এই গাইডলাইন অনুযায়ী, সব দেশকে তাদের বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় হাত ধোয়ার বিশেষায়িত স্থান স্থাপনের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। বিভিন্ন ভবন, অফিস, বাস স্টপ ও ট্রেন স্টেশনে হাত ধোয়ার জায়গা রাখতে হবে।
বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে মাস্ক ব্যবহারের বিধি নিয়েও কথা বলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান। তিনি বলেছেন, মাস্কের ব্যবহারবিধি ও কার্যকারিতা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের মধ্যে মাস্কের ব্যবহার নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, শুধু আক্রান্ত ব্যক্তি ও যারা তাদের দেখভালের দায়িত্বে আছেন, তাদের মাস্ক ব্যবহার প্রয়োজনীয়। আর মাস্ক তখনই কার্যকর হয়, যখন অন্যান্য সুরক্ষা পদক্ষেপও গ্রহণ করা হবে। মাস্ক ব্যবহারের বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ করছে ডব্লিউএইচও।

মাস্ক ব্যবহারের বিধি নিয়েও বিশ্বে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আবোল তাবোল কথা বলছে, মাস্ক ও সামাজিক দূরত্ব সম্পর্কে ওদের নিয়মনীতির সাথে বাস্তবের মিল নেই । এশিয়ার দেশগুলি (কোরিয়া, জাপান, চীন) মাস্ক দিয়েই করোনা-জীনকে বোতল-বন্দি করেছে । বোস্টনের MIT গবেষক অধ্যাপক লিডিয়া বূর্জোয়াইবা বলেছেন সামাজিক দূরত্ব সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৬ ফিট (২ মিটার) ১৯৯০ সালের রিকমেন্ডেশনের উপর ভড় করে; করোনাভাইরা ২৭ ফুট (৮ মিটার) পর্যন্ত যেতে পারে, এবং বাতাসে ঘন্টার পর ঘন্টা সক্রিয় থাকতে পারে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়মনীতি ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ লোককে ধোকা দিয়েছে। অধ্যাপক বূর্জোয়াইবা গবেষণায় ভুল থাকতে পারে; তবে সবাই মাস্ক পরে এশিয়ানরা যে ভালো আছে, এতেতো সন্দেহ নেই ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেছেন, নতুন করোনাভাইরাস এখনও বেশ নতুন। প্রতিনিয়তই নতুন নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ফলে যত সময় যাচ্ছে, তত মহামারির পরিস্থিতি বিবর্তিত হচ্ছে। ফলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া পরামর্শেও পরিবর্তন আসছে।
চীনের উহানে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর ভাইরাসটি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। এখনো পর্যন্ত এর কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার করা যায়নি। বারবার সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঘরে থাকা এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের বিস্তার রোধে সবচেয়ে কার্যকর বলে বলা হচ্ছে।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। বৈশ্বিক মহামারী করোনার ছোবলে প্রাণ হারিয়েছেন বিশ্বের ৫১ হাজারের বেশি মানুষ। বৃহস্পতিবার রাতে আন্তর্জাতিক জড়িপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডওমিটারস এ তথ্য জানায়।
বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া ১২টার দিকে সংস্থাটির ওয়েবসাইটে দেখা যায়, বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ লাখ ১ হাজার ৬৯ জন। আর ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়ে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৫১হাজার ৩৭৮ জন।
)
SHARE THIS ARTICLE