আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে দেশজুড়ে চলছে কঠোর লকডাউন। টানা ২২ দিন বন্ধ থাকার পর বিধি-নিষেধের মধ্যেই চালু হয়েছে গণপরিবহন। রাজধানীতে বেড়েছে যানজট। কমছে ভোগান্তি ও দুর্ভোগ। এতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। দীর্ঘদিন পর গণপরিবহন চালু হওয়ায় খুশি মালিক-শ্রমিকরা। তবে ঈদকে সামনে রেখে সড়কে বেড়েছে ব্যস্ততা। বিধি-নিষেধের মধ্যেই ঢাকা ছাড়ছেন অনেকে।
এতে গণপরিবহন চালু হওয়ার প্রথমদিন সকালেই ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা দিয়েছে যানজট। স্বাস্থ্যবিধি মেনে, বাসের অর্ধেক আসন খালি রেখে চলাচলের কথা বলা হলেও অনেকাংশে তা মানছেন না। গণপরিবহন চালুর ক্ষেত্রে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ মানাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে কাজ করলেও অনেকে মানছে না স্বাস্থ্যবিধি। এদিকে শর্ত সাপেক্ষে অর্ধেক যাত্রী এবং বর্ধিত ভাড়ায় রাজধানী ঢাকাসহ জেলায় জেলায় চলছে যাত্রীবাহী বাস। বন্ধ রয়েছে আন্তঃজেলার গণপরিহন। তবে বিধিনিষেধ মানছেন না বেশির ভাগ পরিবহনের কর্মীরা।
গতকাল সরজমিন দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে তৈরি হচ্ছে যানজট। বেড়েছে গণপরিবহনের সংখ্যাও। অর্ধেক আসন খালি রেখে গণপরিহন চলাচলের কথা থাকলেও বেশির ভাগ বাসে তা লক্ষ্য করা যায়নি। কোনো কোনো বাসে পাশাপাশি সিটে যাত্রী বসতে দেখা গেছে। স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না চালক- হেলপাররাও। অনেকের মাস্ক ঝুলতে দেখা যায় থুতনিতে। নেই হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার। দু’-একটি বাসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা হলেও যাত্রীদের হাতে তা ছিটানো হচ্ছে না। এছাড়া ট্রিপের শুরু ও শেষে জীবাণুনাশক দিয়ে গাড়ি জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে না।
দুপুরে কমলাপুরে স্টেশনে আয়াত বাস থেকে নামে কয়েকজন যাত্রী। এরপর বাসটি ঘুরে ফের মিরপুরে উদ্দেশ্যে যাত্রী উঠায়। এই সময়ে গাড়িটি জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। একাধিক কোম্পানির বাস এভাবেই চলাচল করতে দেখা গেছে। একটি বাসের চালকের সহকারী হিরণ জানান, সকালে জীবাণুনাশক দিয়ে গাড়ি পরিষ্কার করা হয়েছে। দুপুরের দিকে জীবাণুনাশক শেষ হয়ে যাওয়ায় সিটগুলো জীবণুনাশক করা হয়নি। মমতা বেগম নামের একজন জানান, বাসে এক সিট খালি রেখে যাত্রী উঠানো-নামানো করা হলেও বাসের সিটগুলো পরিষ্কার নয়। ময়লা- আবর্জনা সিটে পড়ে আছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার নেই। বাসে উঠা-নামার সময় স্বাস্থ্যবিধি পালন করা হয় না। হেলপারের মাস্ক থাকলে, চালকের নাই। আবার কিছু কিছু বাসে যাত্রী, হেলাপার ও চালকের মাস্ক থুতনিতে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। নামমাত্র মাস্কের ব্যবহার। বাস্তবতা সম্পূর্ণ উল্টো। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যাত্রীরা স্বাস্থ্যবিধি মানতে চান না।
স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা হয়নি বিআরটিসি বাসেও। দ্বিতল বাসে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত। মানছেন না সরকারের বিধি-নিষেধ। বাসের অর্ধেক আসনের চেয়ে বেশি যাত্রী উঠাতে দেখা গেছে। পাশাপাশি সিটে বসে যাতায়াত করতে দেখা গেছে অনেককে। বাসের দ্বিতীয় তলায় প্রায় প্রতিটি সিটে বসানো হয় যাত্রী। অধিকাংশ বাসে রাখা হয় না হ্যান্ড স্যানিটাইজার। এতে যাত্রীরা করোনায় সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিআরটিসি ঢাকা মেট্রো ব-১৫-৬৩৮৩ বাসের কন্ডাকটর জানান, যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা নেই। এখনো অনেকে পাশাপাশি সিটে বসতে চান। আমরা বাধা দিলেও অনেকে তা শোনে না। হ্যান্ড স্যানিটাইজারও তারা ব্যবহার করতে চান না। এতে আমরা বেশি দুশ্চিন্তায় থাকি। কখন গাড়ি আটকিয়ে জরিমানা করে পুলিশ। এছাড়া সকালে যাত্রীদের চাপ অনেক বেশি থাকে। যাত্রী সামাল দিতে আমাদেরকে হিমশিম খেতে হয়।
রাজধানীর মালিবাগের বাসিন্দা আল আমিন। কর্মস্থল উত্তরায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে মালিবাগ মোড়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি। তিনি বলেন, গণপরিবহন চালু হওয়ায় আমাদের মতো নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের ভোগান্তি কমেছে। দীর্ঘদিন পরিবহন সংকটের কারণে যাতায়াত করতে যেমন ভোগান্তি হয়েছে, তেমনি ১০ থেকে ১২ গুণ ভাড়া বেশির খবর হয়েছে। আজ থেকে ভাড়া কিছুটা বেশি গেলেও আগের মতো ভোগান্তি হবে না। এখন দেখতে হবে এভাবে কতদিন চলে। যাত্রী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের মধ্যে এখনো স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি রক্ষা হচ্ছে না। সরকারের নির্দেশনা তেমন একটা মানছেন না বাসের চালক ও হেলপার। বারবার গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণা করার পরেও কারো মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে না।