আইরিশ বাংলাপোষ্ট অনলাইন ডেস্ক: বাংলাদেশ সরকার সে দেশে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। উচ্চ আদালতে একটি রায় অনুযায়ী এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আদালত এই রায়ে বলেছে যে বাংলাদেশে বসবাসরত আগ্রহী পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের নাগরিক হতে পারবেন। আদালত বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের শরনার্থীর মর্যাদা বাতিল করেছে। তবে উচ্চ আদালতের রায়ের পরও অনেকেই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নেননি। আবার অনেকে নিয়েছেন। ভোটার তালিকায়ও তাদের নাম উঠেছে। ২০০৩ সনে বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়, যে সব পাকিস্তানি বা বিহারী নাগরিক এদেশে রয়েছেন তারা ইচ্ছে করলে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিতে পারেন।জিনিভা ক্যাম্পে বসবাসকারী ১০ জন অবাঙালি ভোটার হওয়ার অধিকার চেয়ে আদালতে মামলা করেন। এই মামলার রায়ে তাদেরকে ভোটার হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়। এর পর থেকে আইনগতভাবে তাদেরকে আর শরণার্থীও বলা যাচ্ছে না। সৌদি ভিত্তিক রাবেতা আল ইসলামের জরিপ অনুযায়ী, ৬৬টি ক্যাম্পে দুই লাখ ৭৫ হাজার অবাঙালি রয়েছেন। পাকিস্তানে যাদের জন্ম তাদের মধ্যে নাগরিকত্ব নেয়ার ব্যাপারে অনাগ্রহ বেশি। তারা ক্যাম্পে কথা বলে উর্দূতে। আর যাদের জন্ম বাংলাদেশে তারা নাগরিকত্ব নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী। তারা উর্দূ নয়, বাংলায় কথা বলে। ঢাকার জিনিভা ক্যাম্পে ৩০ থেকে ৪০ হাজার মানুষ বসবাস করেন। এর মধ্যে ভোটার হয়েছেন ১১ হাজার। স্বাধীনতার পর থেকে এই অবাঙালিদের পাকিস্তানে ফিরিয়ে নেয়ার একাধিক উদ্যোগ নেয়া হয়। ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৪৩ জন পাকিস্তানি নাগরিককে ফিরিয়ে নেয়ার পর থেমে যায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া।জেনারেল জিয়াউল হক যখন ক্ষমতায়, তখন একাধিক উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান এগিয়ে আসেনি।
আন্তর্জাতিক চাপে ১৯৮৮ সনে রাবেতা ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠার পর পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে বিহার থেকে আসা অভিবাসীদের জন্য ৪০ হাজার ঘর তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ৬৩টি পরিবারকে নেয়ার পর হঠাৎ করেই এটা বন্ধ হয়ে যায়। এর জন্য অনেকেই পাকিস্তানের ঘন ঘন রাজনৈতিক পট পরিবর্তনকে দায়ী করেন। উচ্চ আদালতের রায়ের পর থেকে ত্রাণ সামগ্রী দেয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে যাদের চাকরি-বাকরি নেই, কোনো কাজ নেই, তারা খুব দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। ক্যাম্পে পানীয় জলের অভাব, নোংরা পরিবেশ, কাজের সুযোগও সীমিত।এর মধ্যেই বেঁচে থাকার লড়াই।ক্যাম্পের ভেতর গাদাগাদি করে এক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ছেলে-মেয়েরা বেড়ে উঠছে। এদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। স্বাস্থ্য সেবা থেকেও তারা বঞ্চিত।
স্ট্র্যান্ডেড পাকিস্তানি জেনারেল রিপ্যাট্রিয়েশান কমিটির সাধারণ সম্পাদক শওকাত আলী বলেছেন, নাগরিকত্ব দেয়ার সুযোগ এসেছে ঠিকই।কিন্তু আমরা সব ধরণের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। স্বাধীনতার পর থেকে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ক্যাম্পগুলোতে ত্রাণ বিরতণ করা হতো। পুণর্বাসনের দাবি তখন থেকেই ছিল জোরালো।
নাগরিকত্ব দেয়ার ঘোষণার পর ২০১৬ সনে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় একটি তালিকা তৈরি করে। তখন বলা হয়েছিল, ঢাকার মোহাম্মদপুরেই ১৪ হাজার ২১২ টি পরিবার রয়েছে। যেখানে বসবাস করেন ১ লাখ ৮ হাজার ১৯ জন। দুর্যোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ তালিকার ভিত্তিতে পরিবার প্রতি ৩ শতাংশ হারে পুনর্বাসনের জন্য ৫২৬ একর জমি বরাদ্দের কথা বলা হয়। কিন্তু ‘পরিকল্পনার মধ্যেই’ আটকে যায় সে উদ্যোগ। এর পর বিহারী বাংলাদেশি পরিবারের তরফে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর একাধিক চিঠি দেয়া হয়। এক পর্যায়ে ২০১৯ সনে পরিকল্পনা কমিশন ৬ হাজার ১০১ কোটি ২৩ লাখ টাকার একটি পুনর্বাসন প্রকল্প তৈরি করে। এরই অংশ হিসেবে পাঁচটি ২০ তলা ভবন নির্মাণ করার কথা বলা হয়। সে সময় ১৫২টি পরিবারকে দীর্ঘমেয়াদে মাসিক কিস্তিতে ফ্ল্যাট দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়।