আইরিশ বাংলাপোস্ট ডেস্কঃ অল্প কিছুদিন আগেও সাইয়েদ আহমেদ সাদাত ছিলেন আফগান সরকারের যোগাযোগ এবং প্রযুক্তি মন্ত্রী। দুই বছর মন্ত্রী থাকার পর আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনীর সাথে মতানৈক্য হলে তিনি পদত্যাগ করেন ২০২০ সালে এবং একই বছর ডিসেম্বরে উন্নত ভবিষ্যতের আশায় জার্মানিতে পাড়ি দেন।
জার্মানীর পূর্বাঞ্চলীয় শহর লিপজিগে “লিফেরান্ডোতে” এখন তিনি একজন পিজা ডেলিভারি ম্যান হিসেবে কাজ করছেন। সাইকেলে করে বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেয়া তার কাজ।
সাইয়েদ সাদাত জানান, “তিনি একজন আইটি এবং টেলিযোগাযোগ ডিগ্রিধারী। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইটি এবং টেলিযোগাযোগ বিষয়ে তার দুটি স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) ডিগ্রি রয়েছে। মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেবার পর আফগানিস্তানে থাকা সমীচীন মনে করেন নি। যদিও তিনি ব্রিটিশ-আফগান দ্বৈত নাগরিক এবং দীর্ঘদিন ব্রিটেনে ছিলেন তবুও জার্মানীতে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ভেবেছিলেন আইটি এবং টেলিকম খাতে কাজ পেয়ে যাবেন এবং উন্নত অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবেন।”
তিনি দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে বিশ্বের ১৩টি দেশে ২০ টির বেশী আই টি কোম্পানিতে কাজ করেছেন যার মধ্যে আছে সৌদি টেলিকোম এবং আরামকোর মত কোম্পানি। ২০১৬-১৭ সালে তিনি লন্ডনে আরিয়ানা টিলিকমের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবেও কাজ করেছেন। ২০০৫-২০১৩ সাল পর্য্যন্ত তিনি আফগানিস্তান টেলিকমিনিকিউশন এন্ড ইনফরমেশন মন্ত্রয়ানলয়ে টেকনিক্যাল উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।২০১৮ সাল থেকে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
৪৯ বছর বয়স্ক এই সাইয়েদ সাদাত তার কমলা রঙের কাজের পোশাক পরা অবস্থায় তার বাহন বাইসাইকেলের পাশে দাঁড়িয়ে জানান, তার আত্নীয়-স্বজন বন্ধু বান্ধব অনেকেই এই কাজ নেয়ায় তার সমালোচনা করছেন কিন্তু তিনি এতে দোষের কিছু দেখছেন না।
তিনি বলেন, “আমি আশা করি অন্যান্য রাজনীতিবিদরাও একই পথ অনুসরণ করবেন। লুকিয়ে থাকার পরিবর্তে সাধারণ জনগনের সাথে কাজ করবে।”
তিনি আরও বলেন, “আইটি সেক্টরে কোন কাজ খুঁজে পাই নি তার মূল কারণ “ভাষা”। জার্মান ভাষা জানা না থাকায় আইটি সেক্টরে জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও এখনো কোন কাজ পাই নি।”
এখন তিনি প্রতিদিন সকালে ৪ ঘণ্টা একটি স্কুলে ভাষা শিখছেন আর বিকেলে ৬ ঘন্টা সাইকেল চালিয়ে খাবার ডেলিভারি দেয়ার কাজ করছেন। তিনি বলেন, “প্রথম প্রথম সাইকেল চালিয়ে ডেলিভারি দেয়া সহজ ছিলনা। ধীরে ধীরে রাস্তাঘাট চিনছেন, সাইকেল চালানো সহজ বোধ করছেন।”
তিনি বলেন, “যত বেশী বাইরে যাবেন, সাইকেল চালাবেন ততবেশী মানুষকে চিনবেন আর শিখবেন।”
আফগানিস্তানে তালেবান দখলের পর সেখানে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়েছে। এই সময়ে তার গল্প দেশে বিদেশে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। তার পরিবার এবং বন্ধুরাও দেশ ছেড়ে চলে আসতে চায় – হাজার হাজার মানুষের সাথে কাবুল বিমান বন্দরে অনেকেই সুযোগ খুঁজছেন আবার কেউ কেউ অন্য পথে দেশত্যাগের চেষ্টায় আছেন।
জার্মান অভিবাসন ও উদ্বাস্তু ফেডারেল অফিসের এক তথ্যে প্রকাশিত হয়েছে যে, আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের শুরু থেকেই, এই বছর জার্মানিতে আফগান আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা ১৩০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।
তথ্যসূত্রঃ আল জাজিরা, স্কাই নিউজ