এবার দেবর-ভাবি একসঙ্গে বললেন, জাপায় বিভক্তির প্রশ্নই ওঠে না

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ জাতীয় পার্টিতে (জাপা) দেবর-ভাবির সমঝোতা হয়েছে। আজ সোমবার যৌথ বিবৃতিতে দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ এবং চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, ‘জাতীয় পার্টিতে বিভক্তির প্রশ্নই ওঠে না। আমরা দুজনেই ঐক্যবদ্ধভাবে প্রয়াত নেতা পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে বদ্ধপরিবকর।’ জাপা সূত্রের খবর, দুই পক্ষকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারি মধ্যস্থতায় এ সমঝোতা হয়েছে।

জিএম কাদের সমকালকে জানান, গত শনিবার তিনি বিরোধীদলীয় নেতা রওশনের বাসায় যান। ঐক্যের বিষয়ে কথা হয়। রওশন এরশাদ এতে সম্মত হন। পরেরদিন রোববার যৌথ বিবৃতিটি তৈরি হয়। ওই দিনই সই করেন জি এম কাদের। কিন্তু সেদিন রওশন সংসদে না আসায় তাঁর সই নেওয়া যায়নি। আজ সোমবার তাঁর গুলশানের বাসায় পাঠালে বিবৃতিতে সই দেন।

বিবৃতিতে রওশন ও জি এম কাদের বলেছেন, ‘ জাতীয় পার্টিকে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। সংবিধান অনুযায়ী অনুষ্ঠিতব্য আগামী সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করবে এবং ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে দলকে সুসংহত করার প্রত্যয় ঘোষণা করছি।’ জিএম কাদের সমকালকে বলেছেন, এরপর জাপায় আর কোনো সংশয় নেই।

রওশনের পক্ষ নিয়ে জাপা থেকে যারা বাদ পড়েছেন তারাও দলে ফিরবেন। তবে জিএম কাদেরপন্থীদের ঘোর আপত্তি রয়েছে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা ও সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধাকে দলে ফেরাতে। সরকারি মধ্যস্থতায় সমঝোতা করাতে রাঙ্গার ‘হাত’ থাকায়, তাঁকে ঠেকানো বা আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়া কঠিন হবে।

জি এম কাদের বলেছেন, রওশন এরশাদকে ব্যবহার করে কিছু মানুষ জাপাকে ভাঙতে চেয়েছিল। এসব লোকজন আগে বিদিশার সঙ্গে ছিল। তাঁদেরকে দলে ফেরানো তো খুব জরুরি কিছু নয়। মসিউর রহমানর রাঙ্গার বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘দেখা যাক।’

রওশনপুত্র রাহগির আলমাহি সাদ এরশাদকে দলের রাজনীতিতে সক্রিয় হতে বলেছেন জি এম কাদের। জাপা সূত্রের খবর, চাচা-ভাতিজার সমঝোতায় দেবর-ভাবির মিলমিশ সহজ হয়। আগামী নির্বাচনে সাদ ফের রংপুর-৩ আসনে প্রার্থী হবেন, দলে তাঁকে বড় দায়িত্ব দেওয়া হবে- ছেলের জন্য এসব সুবিধা নিশ্চিত করেই সমঝোতা করেছেন রওশন।

জাপায় দেবর-ভাবির বিরোধ কয়েক দশকের। জিএম কাদের বিএনপির সুরে কথা বলছেন, এমন কারণ দেখিয়ে তাকে নেতৃত্ব থেকে সরাতে রওশন গত ৩১ আগস্ট সম্মেলন ডাকলে জাপা ফের ভাঙনের মুখে পড়ে। পাল্টা হিসেবে রওশনকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ ছাড়া করার চেষ্টা করেন জি এম কাদের। ১ সেপ্টেম্বর দলের ২৬ এমপির ২৪ জনের সমর্থন নিয়ে স্পিকারকে চিঠি দেন। কিন্তু চার মাসে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পাননি। বরং প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ও স্পিকারের কথায় জাপা নিশ্চিত হয়, রওশনকেই বিরোধীদলীয় নেতার পদে চায় সরকার। তাঁরা ৩০ অক্টোবর সংসদ বর্জনের ঘোষণা দিলে আধাঘণ্টার মাথায় কাউন্সিল স্থগিত করেন রওশন। সূত্রের ভাষ্য, রওশনকে থামিয়ে জাপাকে সংসদে নেয় সরকার।

তবে ৩১ অক্টোবর রওশনপন্থী নেতা জিয়াউল হক মৃধার মামলায় দলীয় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনে আদালতের নিষেধাজ্ঞা পান জি এম কাদের। হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট ঘুরে সোমবার জেলা জজ আদালতে শুনানি হয়েছে এ মামলার। আদেশ হবে ১৫ জানুয়ারি। ভাবির সঙ্গে সমঝোতার পর নিষেধাজ্ঞা উঠবে কিনা- এমন প্রশ্নে জি এম কাদের বলেছেন, ‘এসব মামলা কিচ্ছু না। আমাকে হাইকোর্ট দেখাল আর কী। যাই হোক, এতে (নিষেধাজ্ঞায়) কোনো কিছু আটকে থাকেনি।’

জাপা সূত্রের খবর, গত আগস্টে থেকে যা চলছে তা সবকিছু ছিল সরকারের নিয়ন্ত্রণে। নিজেদের মধ্যে বিরোধ থাকলেও সরকারের নির্দেশনায় চলছে দুই পক্ষ। সরকার বিরোধীদলীয় নেতার পদে রওশনকে চাইলেও তাঁকে একতরফা সমর্থন দেয়নি। বছরখানেক ধরে সরকারের সমালোচনায় মুখর জি এম কাদেরকে চাপে রাখলেও ‘বন্ধুত্ব’ ভাঙেনি। সরকারের সমর্থনে রওশন জাপা বিভক্ত করলে জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন বড় অংশ বিএনপির দিকে চলে যাওয়ার ঝুঁকি ছিল। সে কারণেই দুই পক্ষকেই নিয়ন্ত্রণে রাখে সরকার।

থাইল্যান্ডে পাঁচ মাস চিকিৎসা শেষে গত ২৭ নভেম্বর দেশে ফেরেন রওশন। ২৯ নভেম্বর তাঁর সঙ্গে দেখা করেন জি এম কাদের। ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন রওশন। বৈঠকে জি এম কাদেরকেও ডেকে নেন সরকার প্রধান। ১৪ ডিসেম্বর আকস্মিক রওশনকে জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন তাঁর অনুসারীরা। কিন্তু পৌনে এক ঘণ্টার মাথায় এ ঘোষণা স্থগিত হয়। জি এম কাদেরের আমন্ত্রণে গত ১ জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে ছেলে সাদসহ অংশ নিয়ে ঐক্যের ডাক দেন রওশন। এরপর থেকেই নীরব রওশনপন্থীরা। 

SHARE THIS ARTICLE