আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ নানা নাটকীয়তা শেষে দীর্ঘ নয় মাস পর টেকনাফ থেকে ৬১০ যাত্রী নিয়ে প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন গেল পর্যটকবাহী দুটি জাহাজ এমভি পারিজাত ও এমভি রাজহংস। গতকাল সকাল ১০টার দিকে টেকনাফের দমদমিয়া জেটিঘাট থেকে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে পর্যটকবাহী জাহাজ দুটি ছেড়ে যায়। দুপুর ১২টার দিকে জাহাজগুলো দ্বীপে পৌঁছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় জাহাজ চলাচলের সিদ্ধান্ত দেন জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান।
জেলা প্রশাসক জানান, বুধবার নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও দপ্তরের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সভায় টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচলের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়। তারই আলোকে গতকাল সকাল থেকে দুটি জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। আজ থেকে লাইসেন্স ও ফিটনেস আছে—এমন সব জাহাজ চলাচল শুরু হবে। এক্ষেত্রে জাহাজ কর্তৃপক্ষকে কিছু শর্ত দেয়া হয়েছে। তা না মানলে জাহাজ চলাচলের অনুমতি বাতিল করা হবে।
শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া যাবে না। জাহাজে পর্যাপ্ত ঝুড়ি রাখতে হবে, যাতে যাত্রীরা চিপস বা কোনো পলিথিন ও প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্য সাগরে না ফেলে। প্রতিটি জাহাজে এ বিষয়ে সতর্কতামূলক প্ল্যাকার্ড দিতে হবে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের প্লাস্টিক বর্জ্য জাহাজে করে এপারে নিয়ে আসতে সাহায্য করতে হবে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য যাতে ধ্বংস না হয় এ বিষয়ে সচেতন করতে জাহাজে প্রচারণা চালাতে হবে। এ রকম আরো কয়েকটি অবশ্যই পালনীয় শর্তসাপেক্ষে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
সেন্ট মার্টিনগামী রাজহংস ও এমভি পারিজাত জাহাজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সভাপতি তোফাইল আহমদ জানান, প্রশাসনের অনুমতির পর গতকাল ৬১০ পর্যটক নিয়ে চলাচল শুরু হয়েছে। জাহাজ চলাচলের পর দ্বীপবাসী ও পর্যটনসংশ্লিষ্টদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, ‘পর্যটন মৌসুমের আর মাত্র দুই মাস বাকি আছে। এ দুই মাসে আমরা পর্যটককে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করানোর মাধ্যমে আনন্দ দিতে চাই। টেকনাফ-সেন্ট মার্টিনে অনেক শিক্ষার্থী ভ্রমণ করে। আবার অনেক অসচ্ছল লোকজনও সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে চায়। জাহাজমালিকদের আমরা অনুরোধ করব যারা অক্ষম তাদের টিকিটমূল্য বিবেচনা করতে। সর্বোপরি আমরা আশা রাখছি, পর্যটকরা নিরাপদে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারব।’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান জানান, গতকাল সকালে দুটি জাহাজ টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন উদ্দেশে গেছে। তবে জাহাজের যাত্রী ধারণক্ষমতা বেশি ছিল না। আজ থেকে অনুমতি দেয়া বাকি জাহাজগুলো চলাচল করবে।
উল্লেখ্য, নাফ নদে নাব্যতা সংকট ও মিয়ানমারে চলমান সংঘর্ষের কারণ দেখিয়ে চলতি পর্যটন মৌসুমে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌ-পথে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখে প্রশাসন। এ কারণে টেকনাফ থেকে কোনো জাহাজ এতদিন সেন্ট মার্টিন নৌ-পথে চলাচল করেনি।