পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে শেষ হাসি কার মুখে?

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ আজ রোববার (২ মে) গণনা সম্পন্ন হবে আট দফায় অনুষ্ঠিত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফল। চরম উত্তেজনাকর হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের নির্বাচনে জিতে শেষ হাসি কার মুখে দেখা যাবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস এবং ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), উভয়েই সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজয়ী হয়ে রাজ্যের ক্ষমতা দখলের ক্ষেত্রে আশাবাদী। তবে, কোনও কোনও সমীক্ষায় কারোই এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার বদলে বাম-কংগ্রেসের সমর্থনে আগামী সরকার গঠনের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

রাজনৈতিক দলগুলো অবশ্য বিভিন্ন জরিপ ও সমীক্ষাকে নস্যাৎ করে নিজেদের জয়ের পক্ষে হুঙ্কার দিচ্ছে। ‘তৃণমূলের জয় নিশ্চিত। সরকারে আসব আমরাই। ২০০ আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরছি’—ভোটগণনার কয়েক ঘণ্টা আগে আত্মবিশ্বাসী, প্রত্যয়ী ভাষায় বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

দলের প্রার্থীদের তৃণমূল নেত্রী স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন, ‘দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফিরছি। নির্বাচন পর্বে সবাই দারুণ লড়াই করেছেন। আজ শেষ লড়াইয়ের দিন। ফলে সেই দিনটাতেও গণনাকেন্দ্রে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হবে’, এমনটিই নেতা, কর্মী, সমর্থকদের বলেছেন তৃণমূলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

দীর্ঘ সময় নিয়ে এবার নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। চলেছেব২৭ মার্চ থেকে ২৯ এপ্রিল। ২০২১ সালের নির্বাচনে আট দফার ভোটপর্ব মিটে গেছে এবং আজ একযোগে ফল ঘোষণা হবে সকল কেন্দ্রের।

ইতিমধ্যে বুথফেরত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে মিশ্র মতামত। কোনও সমীক্ষা বলছে, বাংলা থাকছে তৃণমূলেরই হাতে। ৭০টার কাছাকাছি আসন পাবে বিজেপি। তৃণমূলকে হারাতে পারবে না। আবার কোনও সমীক্ষায় ২৯৪ আসনের বিধানসভায় বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে বলেও বলা হয়েছে।

সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে উত্তেজনা ও রক্তারক্তি ছাড়াও ছিল শক্তির মহড়া। ভাঙা-পা নিয়ে লড়েছেন মমতা। বিজেপি দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহকে সামনে রেখে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে বিজয়ের লক্ষ্যে। অস্ত্র, কালোটাকা, পেশিশক্তি ইত্যাদির পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতার উস্কানি ও সংখ্যালঘু নির্যাতন ঘটনা ঘটেছে নির্বাচনে। পশ্চিমবঙ্গের অপেক্ষাকৃত শান্ত ও সম্প্রীতির রাজনীতিতে চরমভাবে উগ্র ধর্মান্ধতার ভিত্তিতে মেরুকরণ করার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনাও ঘটেছে।

শুধু তাই নয়, করোনার বিস্তৃতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের নিষেধ ও পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখেও ক্ষমতা দখলে মরিয়ে হয়েছিল নেতৃত্ব। করোনায় জনগণের বিপদের বিষয়ে মুখ ফিরিয়ে নেতারা সভা, সমাবেশ, মিছিল করেছেন অবাধে। ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে তারা মানুষের বিপদের বিষয়ে ভ্রূক্ষেপ করেন নি। ভারতের চরম ও সীমাহীন করোনা বিপদের পেছনে ভোটের উৎসব, কুম্ভমেলার হিন্দু মহোৎসবকে দায়ী করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে নেতাদের অদূরদর্শিতা, অদক্ষতা ও শাসনের অক্ষমতার কারণেই ভারতে করোনায় ভয়ঙ্কর মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে।

অবস্থা যা-ই হোক, নির্বাচনের ফলে স্পষ্ট হবে, সাধারণ মানুষ কোন দিকে মত দিয়েছেন। মমতার উন্নয়নের পক্ষে নাকি বিজেপির সাম্প্রদায়িকতার পক্ষে? তদুপরি, বিজেপি জিতলে পশ্চিমবঙ্গে তণমূলের অস্তিত্বে টান পড়বে। দল আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না। অন্যদিকে, তৃণমূল জিতলে বাংলার বিজয়ের শক্তিতে সর্বভারতীয় পর্যায়ে মোদি ও বিজেপি বিরোধিতার মুখপাত্রে পরিণত হবেন মমতা।

তবে, এসবই ধারণা মাত্র। আসলে পরিস্থিতি কেমন হবে, সেটা জানা যাবে নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পরেই। আর তখন স্পষ্ট হবে, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে শেষ হাসি কার মুখে উদ্ভাসিত হবে।

SHARE THIS ARTICLE