শেখ হাসিনার পতনের পর ঘটনাবহুল দুই মাস

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ ছাত্র-আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কেটে গেল দুই মাস। ঘটনাবহুল এই ৬০ দিনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সামলে ওঠার চেষ্টা করছে অনেক ঝক্কি। কয়েকটি ঘটনায় বিব্রতও হয়েছে। এর মধ্যে প্রশাসনের শীর্ষ পদে রদবদল করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ইউনিটগুলোতে এসেছে বড় পরিবর্তন। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেককে বিতর্কিত উল্লেখ করে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। পোশাক খাত ও পাহাড়ে অস্থিরতা সরকারের জন্য ছিল বিব্রতকর। মব জাস্টিসের নামে দুই মাসে বিচারবহির্ভূত ৪৯ হত্যাকাণ্ড দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে সমালোচনার ঝড় তুলেছে।

ছাত্র-জনতার হত্যার ঘটনায় গণমামলা ও নির্বিচারে আসামি করার ঘটনা সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে হুঁশিয়ারি দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে দুই শতাধিক খুনের মামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক মন্ত্রী-এমপি সবার নামেই মামলা হয়েছে। অনেকে গ্রেপ্তার হয়ে করাগারে আছেন। অনেকে আছেন রিমান্ডে। অনেক সাংবাদিককে হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রথম সারির চারজন সাংবাদিককে।

এর মধ্যে গঠন করা হয়েছে সংস্কার কমিশন। আন্তর্জাতিক নদীর পানির নায্য হিস্যা নিয়ে ভারত সরকারের আচারণ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনী, সিলেট-চট্রগ্রাম ও উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি সরকারকে বিচলিত করেছে। নিরাপত্তার দাবিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করায় আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি কেড়েছে। সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন জায়গা থেকে একের পর এক দাবির ঝড় ওঠে। আনসার সদস্যরা সচিবালয়ের সামনে ও ভেতরে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে এবং সচিবালয়ের সামনে সব ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ করে ডিএমপি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতিকল্পে যৌথ অভিযান পরিচালনা ও সশস্ত্র বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর জনপ্রত্যাশার চাপও অনেক। পটপরিবর্তনের পর অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের অধিবেশনে অংশ নিয়ে বিশ্বনেতাদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন, তার সফর ফলপ্রসূ হয়েছে। আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় তার খ্যাতি ও পরিচিতিতে আশার আলো দেখছে দেশবাসী। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাব মেলাতে শুরু করেছেন অনেকে।

৫ আগস্টের তাণ্ডবে মেট্রোরেলের ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর কাজীপাড়া স্টেশন দ্রুত সময়ে সংস্কার ও চালু হয়েছে। মিরপুর-১০ নম্বরে স্টেশন শিগগিরই চালু হবে। পলিথিন ব্যবহার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। ঢাকায় বিমানবন্দর ও আশপাশ এলাকা হর্নমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ৫ টাকা কমানো হয়েছে পেট্রোল ও অকটেনের দাম। তবে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির যোগ বিয়োগ মেলাতে পারছেন না কেউ কেউ।

এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত দুই মাসে মূল্যস্ফীতিতে কিছুটা নিম্নযাত্রা দেখা গেলেও জনসাধারণের স্বস্তির জায়গা এখনো অনেক দূর। গত দুই মাসেও ভোগ্যপণ্যের গড় দাম বেড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ। বিশেষ করে ডিম, আটা, ডাল, পেঁয়াজের মতো নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে অনেকটা বেপরোয়াভাবে। এতে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

অপরদিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে সারা দেশে গণপিটুনিতে প্রাণ গেছে ৪৯ জনের। পুলিশ সদর দপ্তরের দাবি, তারা এই বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। তবে সারা দেশে কমপক্ষে ৪৯ জনকে পিটিয়ে মারা হলেও তিনটি ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ সেপ্টেম্বর দেশের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিয়ে মারা হয় দুজনকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল হোসেন নামের এক যুবককে চোর অপবাদে দিয়ে রীতিমতো পরিকল্পনা করে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে। এর আগে ৮ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা পঙ্গু আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে। চট্টগ্রামে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নাচ-গান করে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার এক মাস পর সেই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

অন্যদিকে তৈরি পোশাক খাতে নতুন করে অস্থিরতার পেছনে প্রতিবেশী দেশের ইন্ধনে পোশাক খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেছেন, পোশাক খাতে অস্থিরতা চলতে থাকলে ক্রয়াদেশ অন্য দেশে চলে যেতে পারে। ষড়যন্ত্রকারীরা সে লক্ষ্যেই পোশাকশিল্পে বিশৃঙ্খলা তৈরিতে সচেষ্ট রয়েছে। তবে সরকারের যথাযথ উদ্যোগে অসন্তোষ অনেকটাই দূর হয়েছে।

SHARE THIS ARTICLE