আইরিশ বাংলা পোষ্ট ডেস্কঃ সুদান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অনুষ্ঠিত চুক্তির অংশ হিসেবে, সন্ত্রাসী হামলার শিকার মার্কিনদের ৩৩.৫ কোটী ডলার প্রদান আর ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার শর্তে সুদানকে যুক্তরাষ্ট্র সৃষ্ট সন্ত্রাসী তালিকা থেকে অবমুক্ত করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। চুক্তির অংশ হিসেবে গত অক্টোবর মাসেই মার্কিন কংগ্রেসকে প্রয়োজনীয় ৪৫ দিনের নোটিশ প্রদান করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
১৯৯৩ সালে সুদানকে আল-কায়েদার ঘাটি হিসাবে ব্যবহার করার কারণ প্রদর্শন করে আমেরিকা এই সন্ত্রাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিলো। আজ এই তালিকা থেকে অপসারণ সুদানের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা করবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
আল-কায়েদা ১৯৯৮ সালে কেনিয়া এবং তানজানিয়ায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসগুলিতে বোমা হামলা চালিয়েছিল এবং সেই হামলায় ২২০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। সুদান সেই হামলায় মৃতদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে এই ৩৩.৫ কোটি ডলার প্রদান করলো।
১৯৯৩ সালে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার পরই প্রথম সুদানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যমতে সেই সময়ে সুদান বেশ কয়েকটি ইসলামবাদী জঙ্গি দল এবং আল-কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেনকে আতিথেয়তা দিয়েছিলো।
এই সন্ত্রাসী তালিকায় থাকার কারনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুদানকে ঋণ থেকে অবমুক্তি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং অন্যান্য বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান দেশটিকে কোন প্রকার অর্থ ঋণ দেওয়া থেকে বিরত ছিল।
২০০১ সালের ১১ ই সেপ্টেম্বর যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হামলা হয় তখন সুদান মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে তথ্য সরবরাহ করে সহায়তা করেছিল। তবুও সুদান সন্ত্রাসবাদ তালিকা থেকে মুক্ত হতে পারেনি কেননা কিছু মার্কিন রাজনীতিবিদ সুদানে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দারফুরে যুদ্ধ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন।
পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সুদান সম্পর্কে কিছুটা উন্নতি হলে ২০১৭ সালে অধিকাংশ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলি প্রত্যাহার করা নেয়া হয়, তারপরও সুদান প্রত্যাশিত অর্থনৈতিক উন্নতি করতে পারেনি। সুদানের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ওমর আল বশিরকে আন্দোলনের মাধ্যমে বহিষ্কারের পর যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক দ্রুত উন্নতি লাভ করে, যার ধারাবাহিকতায় চুক্তির মাধ্যমে মুচলেকা দিয়ে সুদানকে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে অবমুক্ত করে দিয়ে গেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
অক্টোবরে, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইনের একই ধরণের পদক্ষেপের কয়েক সপ্তাহ পরে সুদান ইস্রায়েলকে স্বীকৃতি দিতে রাজি হয় । গত সপ্তাহে, মরক্কো ইস্রায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে একমত হয়েছে । আমেরিকা এখনও উত্তর কোরিয়া, ইরান এবং সিরিয়াকে সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক হিসাবে সন্ত্রাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে রেখেছে।
সুদানী কর্তৃপক্ষ বহুদিন ধরেই এই তালিকা থেকে তাদের নাম প্রত্যাহারের চেষ্টা করে আসছিলো। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ওমর আল বশিরকে ক্ষমতায় রেখে কোনভাবেই সন্ত্রাসী তালিকা থেকে সুদানকে মুক্ত করতে রাজী ছিলনা। এই তালিকায় থেকে সুদান কোনভাবেই আর্থিক সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারছিলনা, দেশটি বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। এখন সুসান আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলির সাথে পুনরায় জড়িত হওয়া, ঋণ গ্রহণ এবং ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়ার আশা করতে পারে। অর্থনীতি হ্রাসপ্রাপ্ত হওয়ায় এই ধরণের সাহায্যের তীব্র প্রয়োজন সুদানের, তবে কোনও প্রভাব অনুভূত হওয়ার আগে সম্ভবত আরও কয়েক মাস বা বছর অপেক্ষা করতে হবে। সুদান এখন আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য অনেকের কাছে শত্রু থাকলো না। আশা করা যায়, আগামী বছরগুলিতে দেশটি অর্থনীতির ক্ষেত্রে একটি বড় পার্থক্য দেখতে পাবে। এতাকি যদি ইতিবাচক অর্জন ধরা হয় তাহলে এই অর্জনের কৃতিত্ব বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদোক এবং তার সরকারের প্রাপ্য হয়ে রইলো।