সূরা আর রাহমানে ‘ফাবিআইয়্যি আলা-ই রব্বিকুমা তুকাযযিবান’ বারবার বলার কারণ

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ পবিত্র কোরআনুল কারিমের ২৭তম পারার ৫৫ নম্বর সূরা হলো সূরা আর রাহমান। এর আয়াত সংখ্যা ৭৮। মুফাসসিরদের কেউ কেউ এই সূরাটিকে মাদানী সূরা বলেছেন। আবার কেউ একে মাক্কী সূরাও বলেছেন। (ফাতহুল কাদীর)

শানে নুযুল: মহানবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুয়াত লাভের পর মক্কার কাফেররা ইসলাম সম্পর্কে কৌতূহলী হয়। তারা আল্লাহ নামটির সঙ্গে পরিচিত ছিল। কিন্তু আল্লাহ’র অন্যান্য নাম যেমন ‘রাহমান’ সম্পর্কে অবহিত ছিল না। তারা যেসব মূর্তির পূজা করতো সেগুলোর একাধিক নাম ছিল না। আল্লাহ’র গুণবাচক নাম ‘রাহমান’ শুনে তারা বলাবলি করতো ওয়া মা রাহমান, অর্থাৎ ‘রাহমান আবার কী?’ এ সূরা নাজিলের মাধ্যমে আল্লাহ’র ‘রাহমান’ নামের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে। (তাফসীরে মাআরেফুল কোরআন, ৮ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩৭-২৩৮)

সূরা আর রাহমানে- فَبِاَیِّ اٰلَآءِ رَبِّکُمَا تُکَذِّبٰنِ বারবার ব্যবহার হয়েছে যে কারণে-

সূরা আর রাহমানে فَبِاَیِّ اٰلَآءِ رَبِّکُمَا تُکَذِّبٰنِ  (অতএব (হে জ্বিন ও মানুষ!) তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?) -বাক্যটি বারবার ব্যবহার করা হয়েছে, এর কারণ হিসেবে মুফতি আল্লামা শফী (রহ.) লিখিত তাফসির মাআরিফুল কোরআনে বলা হয়েছে, এই সূরা আগের সূরা নাম কামার। সেখানে আল্লাহ তাআলা ইসলাম পূর্ব যুগের অবাধ্য জাতিদের শাস্তি সম্পর্কে আলোচনা করছেন।

এই আলোচনা করতে গিয়ে প্রত্যেক শাস্তির পর আল্লাহ তাআলা মানুষকে হুঁশিয়ার করার জন্য فَکَیۡفَ کَانَ عَذَابِیۡ وَ نُذُرِ (সুতরাং কেমন ছিল আমার শাস্তি ও সতর্কবাণী!) বাক্যটি ব্যবহার করেছেন।

এরসঙ্গে সঙ্গে ঈমান ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্যে উৎসাহিত করার জন্য দ্বিতীয় বাক্য وَ لَقَدۡ یَسَّرۡنَا الۡقُرۡاٰنَ لِلذِّکۡرِ فَهَلۡ مِنۡ مُّدَّکِرٍ (আমি তো কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য। অতএব, কোনো উপদেশ গ্রহণকারী আছে কি?) -কে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে।

মানুষের প্রতি সতর্কবার্তা ও কৃতজ্ঞতা স্বীকারে উৎসাহ-

এর বিপরীতে সূরা আর রাহমানের বেশির ভাগ বিষয়বস্তু দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহ তাআলার দেওয়া অবদানগুলোর সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। তাই এ সূরাতে যখনই কোনো অবদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তখনই মানুষকে হুঁশিয়ারি ও কৃতজ্ঞতা স্বীকারে উৎসাহিত করার জন্য  َبِاَیِّ اٰلَآءِ رَبِّکُمَا تُکَذِّبٰنِ (অতএব, (হে জ্বিন ও মানুষ!) তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?) বাক্যটি বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। পুরো সূরায় এই বাক্যটি একত্রিশ বার ব্যবহার করা হয়েছে।

প্রত্যেকবার বাক্যটি নতুন নতুন বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে এটা অলংকার শাস্ত্রের পরিপন্থী নয়। এছাড়া এ ধরনের বাক্য ব্যবহার বিশুদ্ধভাষী আরবদের গদ্য ও পদ্য রচনায় বহুল ব্যবহৃত ও প্রশংসিত। শুধু আরবি ভাষাই নয়, ফারসী, উর্দু ও বাংলা ভাষাতেও সর্বজনস্বীকৃত কবিদের কাব্যেও এমন দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়।  (তাফসির মাআরিফুল কোরআন, ৮ম-খণ্ড, ২৩৫)

SHARE THIS ARTICLE