আজ একুশে ফেব্রুয়ারি, মহান ‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

এ, কে, আজাদ, ডেক্স রিপোর্টঃ আজ একুশে ফেব্রুয়ারি, মহান ‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ভাষার দাবিতে অকুতোভয় বাঙালির সহোদর সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিকদের মত অগণিত ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি। মায়ের ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে একুশে ফেব্রুয়ারি ছিল ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ও শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ এবং জাতীয় চেতনার প্রথম উন্মেষ। ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় আত্মত্যাগকারী সেসব সৈনিকদের আজ লাখো বাঙালি সবটুকু আবেগ ঢেলে দিয়ে স্মরণ করবে। অমর একুশে, বাঙালির পথদিশা, একুশে হৃদয়াপ্লুত ঐশ্বর্য, প্রাণের স্পন্দন। মাতৃভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছর পূর্ণ হবে এদিন। এ মহান দিবসে বাঙালির হৃদয় যেমন স্বজন হারানোর বেদনায় হাহাকার করে, তেমনি অধিকার আদায়ের আনন্দেও উদ্বেলিত হয়। একুশের প্রথম প্রহর থেকেই কোটি কণ্ঠ গেয়ে উঠবে সেই অমর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।’ ধর্ম-বর্ণ, পেশা-বয়স নির্বিশেষে সব মানুষ ভাষাবীরদের প্রতি ফুলের ভালোবাসা ও বিনম্র শ্রদ্ধায় প্রভাত ফেরি করবে, শহীদ মিনারে জমায়েত হবে। অঙ্গীকার করবে ভাষা, সংস্কৃতি এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার।
শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী প্রদান করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় অমর একুশের চেতনা আজ অনুপ্রেরণার অবিরাম উৎস। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় অমর একুশের চেতনা আজ অনুপ্রেরণার অবিরাম উৎস। এ চেতনাকে ধারণ করে পৃথিবীর নানা ভাষাভাষী মানুষের সঙ্গে নিবিড় যোগসূত্র স্থাপিত হোক, লুপ্তপ্রায় ভাষাগুলো আপন মহিমায় নিজ নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে উজ্জীবিত হোক, গড়ে উঠুক নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির বর্ণাঢ্য বিশ্ব-মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এ কামনা করি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, সারাবিশ্বের সব নাগরিকের সত্য ও ন্যায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রেরণার উৎস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান একুশে ফেব্রুয়ারির সেই রক্তস্নান গৌরবের সুর বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে আজ বিশ্বব্যাপী মানুষের প্রাণে অনুরণিত হয়।
ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতি একুশের মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ একুশের প্রথম প্রহরে ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এর পরপরই শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর কূটনৈতিক, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, ভাষা সৈনিক, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার ও বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম রৌশন এরশাদ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিকদল শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তাদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শহীদ মিনার সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
অমর একুশে উপলক্ষে সরকারি ছুটি। এ দিনটি পালনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত জনপদেও চলছে নানা আয়োজন। শহীদ মিনারগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে গতকাল সন্ধ্যার মধ্যে। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দ্বীপসমূহ এবং অন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে বর্ণমালা সম্বলিত ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে সব সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন, রেডিও এবং কমিউনিটি রেডিও ব্যাপক অনুষ্ঠানমালা প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। জাতীয় দৈনিকসমূহে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে।

SHARE THIS ARTICLE