আইরিশ বাংলাপোষ্ট অনলাইন ডেস্কঃ যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন যুক্তরাজ্যকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, আগামী নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি উত্তর আয়ারল্যান্ডের শান্তিকে ব্রেক্সিটের দুর্ঘটনার শিকার হতে দেবেন না। একই সঙ্গে গুড ফ্রাইডে চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনও বাণিজ্য চুক্তিকে অবশ্যই নির্ভরযোগ্য হতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
উত্তর আয়ারল্যান্ডকে অধিকতর স্বায়ত্তশাসন দিয়ে ১৯৯৮ সালে লন্ডন ও বেলফাস্টের চুক্তি স্বাক্ষর হয়; যা গুড ফ্রাইডে এগ্রিমেন্ট নামে পরিচিত। ইউরোপ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার চুক্তি; যা বেক্সিট হিসেবে পরিচিত। সমপ্রতি ওয়াশিংটন সফরের সময় মার্কিন রাজনীতিকদের এই চুক্তির ব্যাপারে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমিনিক রাব।
এ সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন- যুক্তরাজ্য সঠিকভাবেই বেক্সিট সম্পন্ন করবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, গুড ফ্রাইডে এগ্রিমেন্টকে উপেক্ষা করে কোনও ধরনের কর্মকা- সম্পন্ন করলে যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তি মার্কিন কংগ্রেসে পাস হওয়ার সুযোগ পাবে না। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের এই স্পিকার বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার ফলে উত্তর আয়ারল্যান্ডের শান্তি বিঘি্নত হতে দেয়া যাবে না।
তিনি বলেছেন, বর্তমানে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের নিয়ন্ত্রণে থাকা তার দল ডেমোক্র্যাট শিবির ১৯৯৮ সালের গুড ফ্রাইডে এগ্রিমেন্টকে পুরো বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের জন্য আশার আলো হিসেবে রক্ষা করবে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন নেতৃত্বাধীন সরকার ব্রেক্সিট চুক্তি ভেঙে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়ার পর দেশটিতে সমপ্রতি সমালোচনা শুরু হয়। বরিস জনসনের প্রস্তাবিত একটি বিল প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানান ব্রিটেনের অন্তত সাবেক পাঁচ প্রধানমন্ত্রী।তারা বলেছেন, ব্রেক্সিট চুক্তি লঙ্ঘন করে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন আয়ারল্যান্ডের শান্তিপ্রক্রিয়া নষ্ট করছেন। বাণিজ্য সমঝোতা এবং যুক্তরাজ্যের সততাকে তিনি নষ্ট করতে চাইছেন। গত জানুয়ারি মাসে স্বাক্ষরিত ব্রেক্সিট চুক্তিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন পরিবর্তন আনতে চাইছেন বলে অভিযোগ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ২৮ দেশের এই জোট বলছে, এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন।
বরিস জনসন দেশটির পার্লামেন্টে গত বছরের অক্টোবরের বেক্সিট চুক্তিতে পরিবর্তন আনতে নতুন একটি বিলের প্রস্তাব করেছেন। আইনটি পাস হয়ে গেলে আন্তর্জাতিক আইনকে বুড়ো আঙুল দেখাতে পারবে ব্রিটেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এমন পদক্ষেপে গত সপ্তাহে দেশটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এই আইন আনা হলে যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারিও দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বিলটি আইনে পরিণত হলে ব্রিটেন ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে পণ্য পরিবহণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন ব্রিটিশ মন্ত্রীরা।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাজ্য বাণিজ্যিক চুক্তির সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে তা কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যরাও ব্রিটেনকে এই আইনের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন। মঙ্গলবার মার্কিন কংগ্রেসের অন্তত চার সদস্য ব্রিটেনকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, গুড ফ্রাইডে চুক্তির শর্ত রক্ষায় ব্রিটেন ব্যর্থ হলে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য চুক্তি আটকে দেয়া হবে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বেক্সিট ইস্যুকে অতিমাত্রায় রাজনীতিকরণ করায় গুড ফ্রাইডে চুক্তির জন্য হুমকি তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমিনিক রাব।