আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা কমে এলেও আগামী শীত মৌসুম এই রোগের ব্যাপক বিস্তারের ভয় জাগাচ্ছে। এই মৌসুমে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে দেশে এমনিতেই ধূলাবালির পরিমাণ বাড়তে থাকে, যে কারণে মানুষ ঠা-াজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হন। সর্দি, কাশি, জ্বর ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের হার অনেক বেড়ে যায়। এজন্য শীতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ফের বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকে। গত মে-জুন মাসে প্রতি ১০০টি নমুনা পরীক্ষায় ২৫ জন করোনা আক্রান্ত পাওয়া গেলেও এখন সেখানে শনাক্ত হচ্ছেন ১১-১২ জন। কিন্তু শীত মৌসুমে এই সংখ্যা বাড়তে পারে বলে এ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটিও সতর্ক করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শীত বা গ্রীষ্মের সঙ্গে করোনা সংক্রমণের কোনো সম্পর্ক নেই। তারপরও যে পরিবেশ করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধিতে সহায়ক, আমাদের দেশে সেটি হচ্ছে শীতকাল। এ সময় মানুষ ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রেখে এক সঙ্গে অনেকে অবস্থান করেন। এতে করোনার সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ ছাড়া করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর ব্যাপকতা থাকলেও এই ভাইরাস নিয়ে মানুষের ভীতি কমে গেছে। মানুষ মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। সরকারের করোনা আক্রান্ত শনাক্তকরণ কার্যক্রমে টিলেঢালা অবস্থায় রয়েছে। সব মিলিয়ে শীতে করোনার সংক্রমণ দ্বিতীয় দফায় বাড়তে পারে। গত রবিবার এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সামনে শীত, করোনা পরিস্থিতি হয়তো কিছুটা খারাপের দিকে যেতে পারে। তাই এখন থেকে সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে। ওই রাতে জাতীয় পরামর্শক কমিটি বৈঠক করে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠায়। এতে বলা হয়, দেশে জনসাধারণের মধ্যে শৈথিল্য আসার কারণে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় সংক্রমণ (সেকেন্ড ওয়েভ) আসতে পারে। তারা এটি মোকাবিলার জন্য রোডম্যাপ তৈরি ও পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। অবশ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এক ধাপ এগিয়ে গত বুধবার বলেছেন, করোনার সেকেন্ড ওয়েব শুরু হয়েছে। শীতে প্রকোপ আরও বাড়তে পারে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত হিসেবে তিনজন শনাক্ত হন ৮ মার্চ। প্রথম দিকে সংক্রমণ ও মৃত্যু- দুটিই কম ছিল। এর পর ধীরে ধীরে সংক্রমণ ও মৃত্যু ব্যাপক আকার ধারণ করতে থাকে। সম্প্রতি দুটিই কমতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ হাজার ৯০০টি নমুনা পরীক্ষা করে এক হাজার ৫৪০ জন আক্রান্ত পাওয়া গেছে। শনাক্তের হার ১১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি ১০০টি নমুনা পরীক্ষায় আক্রান্ত পাওয়া গেছে ১১ জনের বেশি। দেশে এখনো প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজারের মতো করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হচ্ছেন। গড়ে ৩০ করে মারা যাচ্ছেন। অথচ করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বা সচেতনতা কোনোটাই তেমন নেই। সংক্রমণের প্রথমদিকে মানুষ অনেক সচেতন থাকলেও এখন সেটি কমে গেছে। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় গৃহীত স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পর্যালোচনা ও সমন্বয়ের লক্ষ্যে সরকারের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ ও পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি ডা. এজেএম ফয়সাল বলেন, সংক্রমণ এখন কিছুটা কমেছে। তবে আবার তা বাড়তে পারে। কারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। শীত এলে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটিই বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, শীতের সময় সর্দি, কাশি ও জ্বর, নিউমোনিয়া রোগ বেড়ে যায়। করোনা ভাইরাসের লক্ষণ-উপসর্গও সর্দি, কাশি, জ্বর। এই দুটি মিলিয়ে তখন দেখা যাবে অনেক বেশি রোগী পাওয়া যাবে। সংক্রমণ যদি প্রতিরোধ করতে পারতাম তাহলে বলতে পারতাম শীতকালে সংক্রমণ বাড়বে না। আমরা তো কঠোরভাবে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়গুলো মানাতে পারিনি। যেহেতু আমরা প্রতিরোধ করতে পারিনি, আগের সংক্রমণ এখনো চলছেই। ফলে শীতকালে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা আছে। এখন মানুষকে এসব স্বাস্থ্যবিধি মানানোর প্রস্তুতি নিতে হবে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন বলেন, করোনার সঙ্গে শীতের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে শীতকালে মানুষ ঘরের ভেতর থেকে দরজা-জানালা বন্ধ রাখে। বন্ধ জায়গায় করোনা ভাইরাস বেশি ছড়ায়। শীতের সময় একটি বদ্ধ জায়গায় অনেক মানুষ অবস্থান করবে। ফলে সংক্রমণ বৃদ্ধির ঝুঁকি আছে। এ কারণে শীতকালে দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে। দেশে এখন করোনার সংক্রমণ কিছুটা কম বলেই আবার বাড়ার আশঙ্কা আছে। যদি আমরা স্বাস্থ্যবিধি না মানি, রোগী শনাক্ত না করি, আইসোলেশন না করি তাহলে শীতে সংক্রমণ বাড়বে। দেশে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা শুরু হয় ২১ জানুয়ারি থেকে। ওইদিন থেকে গতকাল পর্যন্ত ১৮ লাখ ৭৫ হাজার ৫৩৭টি নমুনা পরীক্ষার করে আক্রান্ত পাওয়া গেছে ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৩৮৪ জন। নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৭৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুস্থতার মাসভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৮-৩১ মার্চ পর্যন্ত ১ হাজার ৫১৫টি নমুনা পরীক্ষায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫১ জন। এই সময়ে মারা গেছেন ৫ জন এবং সুস্থ হয়েছে ২৫ জন। নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্তের হার ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং সুস্থতার হার ৪৯ দশমিক ১০ শতাংশ। ১-৩০ এপ্রিল ৬৩ হাজার ৬৪টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হন ৭ হাজার ৬১৬ জন। মারা গেছেন ১৬৩ জন এবং সুস্থ হয়েছে ১৩৫ জন। শনাক্তের হার ১২ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ২ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং সুস্থতার হার ১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ১-৩১ মে পর্যন্ত ২ লাখ ৪৪ হাজার ২৬৪টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হন ৩৯ হাজার ৪৮৬ জন। মারা যান ৪৮২ জন এবং সুস্থ হন ৯ হাজার ৬২১ জন। শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২২ শতাংশ এবং সুস্থতার হার ২৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ১-৩০ জুন ৪ লাখ ৫৭ হাজার ৪৭৭টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হন ৯৮ হাজার ৩৩০ জন। মৃত্যু ১ হাজার ১৯২ জন এবং সুস্থ হন ৪৯ হাজার ৮৪৪ জন। শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২১ শতাংশ এবং সুস্থতার হার ৫০ দশমিক ৭০ শতাংশ। ১-৩১ জুলাই ৪ লাখ ১০ হাজার ৪০২টি নমুনা পরী