ক্ষণস্থায়ী জীবনে মৃত্যুর স্মরণ ও পরকালের প্রস্তুতি

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ মৃত্যুকে স্বরণ করা ও পরকালের যথাযথ প্রস্তুতি নেয়া প্রতিটি মানুষের উচিত। কারণ, ‘মানুষ মরণশীল।’সূরা আম্বিয়ার ৩৫ নম্বর আয়াতে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,

كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ وَنَبْلُوكُم بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَةً وَإِلَيْنَا تُرْجَعُون

‘প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভালো দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।’ (সূরা: আম্বিয়া, আয়াত: ৩৫) 

আমাদের দুনিয়ার জীবনটা হচ্ছে ক্ষণস্থায়ী, প্রতিটি মানুষকে অবশ্যই মরতে হবে। আর তাই মৃত্যুর পূর্বেই তাকে আমলে সালেহ বা নেক আমল করতে হবে। যে আমল তার পরকালে নাজাতের ব্যবস্থা ও জান্নাতে যাওয়ার পথকে সহজ করবে। কারণ, মৃত্যুর পর মানুষের ‘আমলের কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে যাবে। (মুসলিম হাঃ ২০৩)

তাই কবরের ভয়ানক আজাব ও জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে বাঁচতে হলে দুনিয়া থেকে জীবিত অবস্থায় সকল প্রকার নেক ও ভালো আমল করতে হবে, আর সকল প্রকার খারাপ ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। দুনিয়ার জীবনটা হচ্ছে ক্ষণস্থায়ী। আর মৃত্যুর পর পরকালের জীবন হচ্ছে চীরস্থায়ী, অনন্ত ও অসীমকাল সেখানে থাকতে হবে।

রাব্বল আলামিন আল্লাহ তায়ালা বলেন,
بَلْ تُؤْثِرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا

وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَى

‘বস্তুতঃ তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দাও, অথচ আখেরাত হচ্ছে উত্তম ও স্থায়ী।’ (সূরা: আ‘লা,  আয়াত: ১৬-১৭)
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে আমলে সালেহ বা নেক কাজ করার জন্য দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন (সূরা: মূলক আয়াত: ২)। 

আর নির্ধারিত সময়ে তাকে মৃত্যু বরণ করতে হবে। মৃত্যুর সময় হলে তাকে দুনিয়ার সকল ধন-সম্পদ,বাড়ী-গাড়ী, ব্যবসা-বানিজ্য, নিজের আপন প্রাণ প্রিয় পরিবার পরিজন সবাইকে ছেড়ে একাকী হয়ে চলে যেতে হবে। এটাই আল্লাহর চূড়ান্ত বিধান ও ফায়সালা। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَما الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلاَّ مَتَاعُ الْغُرُورِ

‘প্রতিটি প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর তোমরা কেয়ামতের দিন তোমাদের (আমলের) পরিপূর্ণ বদলা পাবে। আর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে আর জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে সফলতা অর্জন করবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কিছু নয়।’ (সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৫)

মৃত্যু থেকে কেউ বাঁচতে পারবে না, সে যেখানে, যে অবস্থায় থাকুক না কেন, যতো ক্ষমতার অধিকারী হোক না কেন? তাকে চলে যেতেই হবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, 
أَيْنَمَا تَكُونُواْ يُدْرِككُّمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنتُمْ فِي بُرُوجٍ مُّشَيَّدَةٍ 

‘তোমরা যেখানেই থাকো না কেন মৃত্যু তোমাদের পাকড়াও করবেই, যদিও তোমরা সুদৃঢ় দুর্গের ভেতরেও অবস্থান কর।’ (সূরা: আন-নিসা, আয়াত: ৭৮) আরো ইরশাদ হচ্ছে,

قُلْ إِنَّ الْمَوْتَ الَّذِي تَفِرُّونَ مِنْهُ فَإِنَّهُ مُلَاقِيكُمْ

‘বলুন! যে মৃত্যু থেকে তোমরা পালিয়ে বেড়াও তা একদিন তোমাদেরকে এসে পাকড়াও করবেই।’ (সূরা: আল-জুমু’আহ, আয়াত: ৮)
বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমরা স্বাদ বিনষ্ট কারী মৃত্যুকে অধিক পরিমাণে স্বরণ কর।’ (তিরমিযী-২৩০৭, হাদিস হাসান সহিহ; নাসায়ী-১৮২৪, মিশকাত-১৬০৭)

যে ব্যাক্তি মৃত্যুকে অধিক পরিমাণে স্বরণ করবে, আর পরকালের পাথেয় সংগ্রহ করবে সেই বুদ্ধিমান।
রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন,‘জ্ঞানী বা বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে নিজের অবস্থা সম্পর্কে চিন্তা করল আর মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য আমল করল। আর জাহেল বা বোকা সেই ব্যক্তি যে আত্মাকে খাহেস বা কামনা-বাসনার অনুসারী করে দিয়েছে। অথচ আল্লাহর অনুগ্রহের আশা করে বসে আছে।’(তিরমিযী হাঃ ২৪৫৯, হাদিস হাসান)

একদা এক সাহাবি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘সবচেয়ে বুদ্ধিমান মুমিন কে? রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যারা সবচেয়ে বেশি মরণকে স্বরণ করতে পারে আর মরণের পর পরবর্তী জীবনের জন্য সবচেয়ে সুন্দর প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে, তারাই সবচেয়ে বুদ্ধিমান।’ (ইবনে মাজাহ-৪২৫৯, হাদিস হাসান)। 

প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) ওদের সম্পর্কে সুসংবাদ প্রদান করে বলেন,
‘ওই সমস্ত লোকেরাই প্রকৃত বুদ্ধিমান, তারাই দুনিয়ার সম্মান, ইজ্জত ও পরকালের মর্যাদা (জান্নাত) উভয়ই লাভ করতে পারবে। (ত্বাবারানী ও মু’জামুস সগীর)। মুজরিম বা অপরাধী ও গুনাহগার ব্যক্তিরা  মৃত্যুর সময় আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে বললেন,

قَالَ رَبِّ ارْجِعُونِ

لَعَلِّي أَعْمَلُ صَالِحًا فِيمَا تَرَكْتُ كَلَّا إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَائِلُهَا وَمِن وَرَائِهِم بَرْزَخٌ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ

‘হে আমার পালনকর্তা! আমাকে পূনরায় (দুনিয়াতে) পেরণ করুন, যাতে আমি নেক কাজ করতে পারি। যা আমি পূর্বে করিনি। (আল্লাহ বলেন) না, কখনো নয়। এতো তার একটি কথার কথা মাত্র।’ (সূরা: আল-মুমিন, আয়াত: ৯৯-১০০)

মৃত্যুর সময় চলে আসলে তখন কারো ওজর গ্রহণ যোগ্য হবে না, নিদির্ষ্ট সময়েই চলে যেতে হবে। দুনিয়াতে ফিরে আসারও কোনো অবকাশ নেই।  

আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَلَن يُؤَخِّرَ اللَّهُ نَفْسًا إِذَا جَاء أَجَلُهَا وَاللَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ

‘মানুষের যখন নির্ধারিত সময় (মৃত্যু) উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না।’ (সূরা: আল মুনাফিকুন, আয়াত: ১১)

আসুন! আমরা সকল প্রকার গুনাহ, অন্যায়, অবিচার, জুলুম পরিহার করি। আর মৃত্যুকে অধিক পরিমাণ স্বরণ করি এবং মৃত্যুর পর কবর ও পরকালেরর জীবনের মুক্তি ও নাজাতের জন্য পার্থিব জীবনে আল্লাহ ও রাসূলের বিধি-বিধান অনুযায়ী নেক ও ভালো কাজ করার আপ্রাণ চেষ্টা করি। আর এ ‘আমলগুলোই হচ্ছে আমাদের পরকালের প্রস্তুতি।

ইয়া আল্লাহ! আপনি আমাদের আমলগুলোকে কবুল করুন আর ইহকালে এবং পরকালে মুক্তির ব্যবস্থা করে জান্নাতে যাওয়ার সু-ব্যবস্থা করে দিন। আমিন।

SHARE THIS ARTICLE