চার্টার্ড বিমানে ধনাঢ্যদের দেশত্যাগের হিড়িক । (ভিডিও)

এ,কে,আজাদ – আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ করোণাক্রান্ত সময়টা বিশ্বের সকলের জন্যই অভিনব। বিগত জানুয়ারি মাস থেকে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে ইতিমধ্যে নথিভুক্ত ৩ লক্ষ ৬৬ হাজারের বেশী মানুষের জীবনাবসান হয়েছে, এই মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা কত হবে তা বলা দুরূহ। এই মহামারী সময়ে বাণিজ্যিক বিমানে ভ্রমণ প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এলে দেশে বিদেশে অনেক দেশের নাগরিক প্রবাসে আটকে যান। এসকল নাগরিককে রাষ্ট্রসমূহ বিশেষ কিংবা চার্টার্ড বিমানে জন্মভূমিতে ফিরিয়ে আনার ব্যাবস্থা করে। বাংলাদেশ এব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখে বিশেষ বিমানে চীন থেকে ৩১২ জন বাংলাদেশীকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়। পরবর্তীতে যুক্ত্যরাজ্য থেকে ৪টি বিশেষ বিমানে ৮৫০ জন আটকে পড়া নাগরিককে ফিরিয়ে আনে। সম্প্রতি ব্যাক্তিগত উদ্যোগে একটি বিপরীত স্রোত বাংলাদেশে প্রদর্শিত হচ্ছে। বাংলাদেশী নাগরিকবৃন্দ এই করোনাক্রান্ত সময়ে জন্মভূমি ত্যাগ করে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। ডেইলি স্টার পত্রিকা সূত্রে জানা যায় এ মাসের ২৫ তারিখে শিকদার গ্রুপের একটি বিশেষ এয়ার এম্ব্যুলেন্স যোগে শিকদার গ্রুপের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক রণ হক শিকদার ও তার ভাই দিপু হক শিকদার ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে ব্যাংকক যাত্রা করেন।

এই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে দেশের একটি ব্যাংকের দুইজন উর্ধতন কর্মকর্তাকে ঋণ প্রদানের উদ্দেশ্যে গুলি করার ভয় দেখানোর অভিযোগ সম্প্রতি উত্থাপিত হয়। করোনাক্রান্ত সময়ে বিমান ভ্রমণের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ থাকা সত্ত্বেও এই দুই ভাই বিশেষ বিমান যোগে দেশত্যাগ করেন বলে সংবাদে প্রকাশ। এদিকে প্রিয়. কম সূত্রে প্রকাশ যে, ২৮শে মে বৃহস্পতিবার বিশেষ চার্টার্ড বিমানে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দর ত্যাগ করেন বি এন পি সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান। ভাড়া করা ঐ বিমানে যাত্রী হিসাবে শুধু তারা দুজনই ছিলেন। প্রিয়. কম সূত্রে আরও জানা যায় যে, বৃহস্পতিবার এই দুজন যাত্রী নিয়ে চার্টার্ড উড়োজাহাজ যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে ছেড়ে গিয়েছে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ উল-আহসান।

প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ২১ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, চীন, হংকং, থাইল্যান্ড ছাড়া সব দেশের সঙ্গে যাত্রীবাহী সব উড়োজাহাজ সংস্থার ফ্লাইট চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল বেবিচক। এরপর আরেকটি আদেশে এই সময়সীমা আরও সাত দিন বাড়িয়ে চীন বাদে সব দেশের সঙ্গে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ফ্লাইট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।এই নিষেধাজ্ঞা কয়েক দফায় ১৪ এপ্রিল, ৩০ এপ্রিল, ৭ মে, ১৬ মে এবং ৩০ মে পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।
এরপর আসে তৃতীয় সংবাদ বিডি নিউজ ২৪. কম জানায় যে, ২৯শে মে শুক্রবার একটি বিশেষ ফ্লাইটে সোহেল এফ রহমান এবং তার স্ত্রী লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা শাহজালাল বিমান বন্দর ত্যাগ করেন। এই তথ্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান মো. মফিদুর রহমান নিশ্চিত করেছেন।
সোহেল এফ রহমান বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সালমান রহমানের বড় ভাই। পূর্বে প্রস্থানকৃত প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান আর সালমান এফ রহমান সম্পর্কে বেয়াই। তথ্যসূত্রে এও জানা যায় যে, সোহেল এফ রহমানের মেয়ে লন্ডনে থাকেন, তিনি অন্তঃসত্ত্বা। করোনাভাইরাস সঙ্কটে একমাত্র মেয়ের পাশে থাকতেই সোহেল এফ রহমান এবং তার স্ত্রী বিমান ভাড়া করে রওনা হয়েছেন। বাংলাদেশ একটি সংকটময় সময় অতিক্রান্ত করছে। প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন হাজারো মানুষ। বিমানযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাও অব্যাহত আছে এই অবস্থায় দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি ও ধনাঢ্য ব্যাক্তিদের বিপুল অর্থব্যয়ে দেশত্যাগের সংবাদে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তাহলে কি বিত্তশালীরা করোনার ভয়ে দেশত্যাগ করছেন? তাহলে কি থাইল্যান্ড কিংবা যুক্তরাজ্য অভয়ারণ্য? বাংলাদেশ কি তাদের নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে ব্যার্থ? বিত্তশালীরা ভাড়া করা বিমানে দেশত্যাগ করলে সাধারণ নাগরিকদের হাল হকিকত বর্তমানে কি আর ভবিষ্যত্বে কি হবে তা নিয়ে সারা জাতি আজ উদ্বিগ্ন।

SHARE THIS ARTICLE