আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ ফরাসী সাপ্তাহিক ব্যাঙ্গাত্নক পত্রিকা চার্লি হেবদো এই সপ্তাহের সংখ্যায় আবারো নবী মোহাম্মদ (সাঃ) ব্যাংগচিত্র প্রকাশ করেছে। ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে এই একই ব্যাংগচিত্র প্রকাশিত হলে, চার্লি হেবদো পত্রিকার অফিসে দুইজন বন্দুকধারী মুসলিম আক্রমণ পরিচালনা করলে ১২ জন নিহত এবং আরও ১১ জন আহত হন। এই আক্রমণে নিহতদের মধ্যে প্রকাশনা পরিচালক চার্ব সহ প্রখ্যাত কয়েকজন কার্টুনিস্ট ছিলেন। এর পর দফায় দফায় সংঘর্ষে সর্বমোট ১৪৯ জন নিহত হয়েছিলেন। ২০১৫ সালে চার্লি হেবদো পত্রিকায় আক্রমণকারী কৌচি ব্রাদার্স এবং এমেচি কৌলিবালি নিরাপত্তা রক্ষীদের হাতে মারা যান। বর্তমানে অভিযুক্ত ১১জন জন আদালতে হাজির থাকবেন অন্য ৩ জন অভিযুক্তরা হয় পলাতক না হয় কোথাও মৃত্যুবরণ করে থাকবেন। এই মামলা আগামী ১০ই নভেম্বর পর্য্যন্ত চলবে বলে জানানো হয়েছে। চার্লি হেবদো নামক এই পত্রিকা নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ, সংশয়বাদী, নাস্তিক, কড়া-বামপন্থী এবং বর্ণবাদবিরোধী হিসাবে বর্ণনা করে। সাধারণতঃ ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন, প্রতিবেদন, পোলিমিকস এবং জোকস প্রকাশ করে থাকে। তীব্র প্রথাবিরোধী এবং অশ্রদ্ধামূলক প্রকাশ এই পত্রিকার দৈনন্দিন খোরাক। ধর্ম (ক্যাথলিক ধর্ম, ইসলাম, ইহুদী ধর্ম), রাজনীতি এবং সংস্কৃতি সম্পর্কেও তারা ব্যাঙ্গ প্রকাশ করে থাকে। ১৯৭০ সালে হারাকিরি নামক পত্রিকায় চার্লস দ্য গলের মৃত্যু সম্পর্কে বিদ্রুপাত্নক শিরোনাম প্রকাশ করা হলে সেটি নিষিদ্ধ করা হয়। তখন হারি কিরি পত্রিকাটি নাম পরিবর্তন করে চার্লি হেবদো নাম ধারণ করে প্রকাশিত হতে শুরু করে। ১৯৮১ সালে এর প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়, তবে ১৯৯২ সালে পুনরায় আত্নপ্রকাশ করে। পত্রিকাটি প্রতি বুধবার প্রকাশিত হয়, মাঝে মাঝে বিশেষ সংস্করণও প্রকাশ করা হয়। পত্রিকার পক্ষ থেকে প্রকাশিত হয় যে, ২০১৫ সাল থেকেই তারা মুহাম্মদ (সাঃ আঃ) সম্পর্কে ক্যারিকেচার প্রকাশের অনুরোধ পাচ্ছিলেন কিন্তু যদিও এই বিদ্রুপাত্নক প্রকাশ দেশের আইনবিরোধি নয় তবুও এই ধরনের প্রকাশের জন্য কোন কারণ কিংবা সঠিক যুক্তি এবং একই সাথে বিতর্ক তৈরি হওয়ার পরিবেশ প্রয়োজন। যেহেতু ২০১৫ সালের হত্যকান্ডের মামলাটি এই সপ্তাহে পুনরায় কোর্টে শুরু হতে যাচ্ছে তাই তাদের নিকট এই সময়টি যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে। � নবীর এই ব্যাংগচিত্র প্রথম ২০০৫ সালে জিলান্ডস-পোস্টেন নামক ড্যানিশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চার্লি হেবদো “মুহাম্মদ মৌলবাদীদের দ্বারা অভিভূত” শিরোনামে প্রথম পৃষ্ঠায় ক্রন্দনরত মুহম্মদ (সাঃ আঃ) একটি কার্টুনে তিনি “এটিকে পছন্দ করা কঠিন” এই কথা বলছেন দেখানো হয়। একই সাথে তারা ড্যানিশ পত্রিকার ব্যাংগচিত্রও প্রকাশ করে। ঐ সময়ে তাদের পত্রিকার বিক্রি ১০,০০০ হাজার কপির জায়গায় ১লক্ষ ৬০ হাজার কপিতে দাঁড়ালে তারা আরও ১ লক্ষ ৫০ হাজার কপি ছেপে ভালো ব্যাবসা করে। ঐ সময়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাক এই কার্টুন প্রকাশের নিন্দা করে বলেছিলেন, “কারো ধর্ম বিশ্বাসকে আঘাত করতে পারে এমন কিছু কাজ এড়িয়ে চলা উচিত”।প্যারিসের গ্র্যান্ড মসজিদ, মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগ এবং ইউনিয়ন অফ ফরাসী ইসলামিক সংগঠনের পক্ষ থেকে তখন এই পত্রিকার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ২০০৭ সালের রায়ে নির্বাহী সম্পাদক ভাল আদালতে খালাস পেয়ে যান। আদালত রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তির অনুসরণ করে বলেছিল যে তিনটি কার্টুনের মধ্যে দুটি ইসলামের উপর আক্রমণাত্নক নয় বরং এগুলো মুসলিম সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিদ্রুপাত্নক ছিল এবং মুহাম্মদ (সাঃ আঃ) কে তার পাগড়িতে বোমাযুক্ত তৃতীয় কার্টুনকে প্রশ্নযুক্ত এই ম্যাগাজিনের চরিত্রে দেখা উচিত, কেননা এই পত্রিকাটি ধর্মীয় মৌলবাদকে আক্রমণ করে প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে এই পত্রিকা ২০১১ এবং ১২ সালে পুনরায় ব্যাঙ্গাত্নক প্রকাশনা করে। ২০১১ সালে পত্রিকা অফিস পুড়িয়ে দেয়া হয় এবং তাদের ওয়েব সাইট হ্যাক করা হয়। চারিদিকে বিতর্ক সৃষ্টি হলে দ্রুত এই পত্রিকার কাটতি বেড়ে গিয়ে ৫০ লক্ষ পর্য্যন্ত উন্নীত হয়। এই সপ্তাহে এই ব্যাংগচিত্র পুনঃপ্রকাশিত হলে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে এই কাজের নিন্দা করে বলা হয়েছে যে, এই কাজটি বিশ্বের কোটী কোটী মুসলিমের হৃদয়ে আঘাত করবে এবং এটা শান্তিপূর্ন সহাবস্থানের পক্ষে সহায়ক হবেনা। এদিকে ফ্রান্সেস কন্সুল ডি কলটে মুসলমান নামক ফ্রান্সের মুসলিম সংগঠনের পক্ষ থেকে সকল মুসলিমকে এই ঘৃণিত কাজকে উপেক্ষা করার অনুরোধ জানিয়েছেন। ��মূল সংবাদ সূত্রঃ দা কানেকশন, ইউরোনিউজ, আল জাজিরা, ফাইনান্সিয়াল টাইমস