চীনের তৈরি করোনা ভ্যাকসিন ট্রায়ালের অনুমোদন দিলো বাংলাদেশ

এক চীনা কোম্পানির তৈরি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ফেজ-থ্রি ট্রায়াল বা তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষামূলক ব্যবহার বাংলাদেশে করার অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি)।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) এই পরীক্ষামূলক ব্যবহার তদারকি করবে। পরীক্ষামূলক ব্যবহারটি আগামী মাসে শুরু হতে পারে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, ট্রায়াল পর্যায়ে ঢাকায় কোভিড-১৯-এর জন্য ডেডিকেটেড আটটি হাসপাতালের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হবে।

বলা বাহুল্য, দুনিয়াজুড়ে মানুষের জীবন ও অর্থনীতির চাকা স্থবির করে দেওয়া করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারে পৃথিবীতে গবেষকদের ১৪০টিরও বেশি দল কাজ করে যাচ্ছে। সেগুলোর মধ্যে শুধু যুক্তরাজ্য ও চীনের দুটি দল ব্যাপক আশার আলো দেখাচ্ছে।

ভ্যাকসিন আবিষ্কারে নেতৃত্ব দিচ্ছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি। এটির উদ্ভাবিত সম্ভাব্য ভ্যাকসিনটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের একটি সমন্বিত ট্রায়াল চলছে যুক্তরাজ্যে। সেটির তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে শুরু হয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের সূত্রমতে, প্রজেক্টটি সম্ভবত এ বছরের অক্টোবরের মধ্যেই জরুরি ভিত্তিতে ভ্যাকসিনটি বাজারে ছাড়বে।

এর বাইরে আর একমাত্র যে ভ্যাকসিন চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু করেছে, সেটির উদ্ভাবন করেছে চীনা ফার্ম সিনোফার্ম।

প্রথম পর্যায়ের নিরাপত্তামূলক ট্রায়ালের বেশ আশাব্যঞ্জক ফলাফল তারা মে মাসে প্রকাশ করেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের অপ্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, মানব দেহে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়তে ভ্যাকসিনটি বেশ কার্যকর। আর তাই ‘জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহৃত’ ওষুধ হিসেবে এটিকে ব্যবহারের জন্য এক বছরের অনুমোদন ২৫ জুন দিয়েছে চীনা সামরিকবাহিনী।

সৈনিকদের জন্য ওই ভ্যাকসিন নেওয়া বাধ্যতামূলক কি না, তা অবশ্য জানায়নি ক্যানসিনো, বলছে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন।

অন্যদিকে, দ্য ইকোনোমিস্ট অবশ্য দাবি করেছে, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের প্রতি বৈশ্বিক সমর্থন ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা থাকলেও চীনের ভ্যাকসিন কপালে তা জুটেনি।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভ্যাকসিনটি যেন বিশ্বব্যাপী ‘ব্যাপক ও দ্রুত’ ছড়িয়ে পড়ে, সেজন্য একটি আন্তর্জাতিক সাপ্লাই চেইন গড়ে তুলছে ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি- অ্যাস্ট্রাজেনেকা।

ওই কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, ভ্যাকসিনটির এক ডোজের দাম এক কাপ কফির সমতুল্য রাখার চেষ্টা চালানো হচ্ছে- প্রতিবেদনে বলেছে দ্য ইকোনোমিস্ট।

ইতোমধ্যেই ২০০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের অর্ডার পেয়েছে তারা। ইউরোপ, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্রে এবং ভ্যাকসিনে অর্থলগ্নিকারী গ্রুপ- গ্যাভির কাছে ১০০ কোটি ডোজেরও বেশি ভ্যাকসিন সরবরাহে কোম্পানিটি সম্মত হয়েছে।

এদিকে, নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর জন্য অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের বাড়তি ১০০ কোটি ডোজ উৎপাদন করছে সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া; এরমধ্যে ২০২০ সালের শেষ নাগাদ ৪০ কোটি ডোজ উৎপাদন করা হবে। অন্যদিকে, সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্রিটেনে ৩ কোটি ডোজ পাওয়া যাবে বলে জানানো হয় দ্য ইকোনোমিস্টের প্রতিবেদনে।

ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের প্রতিযোগিতায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জার্মানি, ফ্রান্স ও সুইডেন-সহ আরও কিছু দেশ।

সম্প্রতি আচমকাই একটি ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দাবি করেছে ভারতের এক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি। ১৫ আগস্ট, দেশটির স্বাধীনতা দিবস থেকে সেটি পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে তারা। তবে এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা সন্দিহান।

কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দাবি সম্প্রতি একটি বাংলাদেশি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিও করেছে। তবে এ ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে কোনো তথ্য নেই।

২ জুলাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড-১৯-এর সম্ভাব্য ভ্যাকসিনগুলোর একটা খসড়া প্রকাশ করে।

SHARE THIS ARTICLE