তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক হায়া (হাগিয়া) সোফিয়ায় দীর্ঘ ৮৬ বছর পর নামাজ পড়লেন মুসলিমরা। শুক্রবারের জুমা’র নামাজে নেতৃত্ব দেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইয়েপ এরদোগান। ঐতিহাসিক এই প্রাঙ্গণ, খৃষ্টানদের জন্য পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম গ্রীক অর্থোডক্স গীর্জা হিসাবে প্রথম নির্মান করেন বাইজেন্টাইন সম্রাট প্রথম জাস্টিনিয়ান, ৫৩২- ৫৩৭ খৃষ্টাব্দে, তখন এই শহরের নাম ছিল কনস্টান্টিনোপল।
১২০৪-১২৬১ সাল পর্য্যন্ত এটি ছিল রোমান ক্যাথলিক চার্চ, ১২৬১-১৪৬৩ পর্য্যন্ত পুনরায় গ্রীক অর্থোডক্স চার্চ এবং নির্মানের ৯১৬ বছর পর ১৪৫৩ সালে অটোমান সম্রাট সুলতান মেহেমেদ-২, কনটান্টিনোপল দখল করে নিলে এই গীর্জাকে মসজিদে রূপান্তর করেন। ইতিহাসের দোলাচলে, অটোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। ১৯২৩ সালে, আধুনিক তুরস্কের ত্রাতা হিসাবে ক্ষমতায় আসেন মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক। ১৯৩১ সালে কামাল এই মসজিদে জনসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারী করেন, কামাল আতাতুর্কের ধর্ম নিরপেক্ষ নীতির কারনে আমূল পরিবর্তন ঘটে যায় তুরস্কে, ৪ বছর বন্ধ থাকার পর ১৯৩৫ সালে কামাল পাশা এই হায়া সোফিয়াকে মসজিদ থেকে যাদুঘরে রূপান্তরিত করেন।
২০১৮ সাল থেকেই এরদোগান এই যাদুঘরকে পুনরায় মসজিদে রূপান্তরের কথা বলে আসছিলেন। সম্প্রতি তুরস্কের শীর্ষ আদালত কর্তৃক এই ঐতিহাসিক স্থাপনাকে মোস্তাফা কামাল পাশা কর্তৃক যাদুঘরে রূপান্তরকে অবৈধ ঘোষণা করলে দুই সপ্তাহ আগে তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইয়েব এরদোগান হায়া সোফিয়াকে মুসলিমদের উপাসনার জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করেন।
গতকাল ১৫০০ বছরের পুরনো এই ঐতিহাসিক স্থানে মুসলিমরা ৮৬ বছর পর পুনরায় জুমার নামাজ আদায় করলেন। শুক্রবার প্রেসিডেন্ট এরদোগান, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তাবৃন্দ হায়া সোফিয়ার অভ্যন্তরে নামাজে যোগদান করতে আসায় এখানে বিশাল জনসমাবেশ ঘটে।
এই রূপান্তরে তুরস্কের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। জাতিসংঘের সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কো, তুরস্কের এই সিদ্ধান্তকে গভীর সমালোচনা করে বলেছে, “পূর্বে আলোচনা ছাড়াই তুরস্ক এই পরিবর্তন করেছে”। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া এবং বিভিন্ন গির্জার নেতারা এই পরিবর্তনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেশী গ্রীস এই পদক্ষেপকে “সভ্য বিশ্বের প্রতি উন্মুক্ত উস্কানি” বলে অভিহিত করেছে। এরদোগান অবশ্য জোর দিয়ে বলেছেন, টি তুরস্কের “ঐতিহাসিক এবং সার্বভৌম অধিকার”।