ধূমপানের অপকারিতার কথা লেখা থাকে খোদ সিগারেটের প্যাকেটেই। কিন্তু এরপরও মানুষ ধূমপান করে। বাইরে থেকে দেখলে যদিও বোঝা যায় না, কিন্তু ভেতরে ভেতরে আপনি নিঃশেষ হয়ে যেতে পারেন এই সিগারেটের কারণে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে বহু মৃত্যু ও রোগের কারণ হলো তামাক, যা চাইলেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। এটি মানুষকে বয়সের আগেই মৃত্যুর দিকে টেনে নেয়। তামাক গ্রহণের ফলে ক্যান্সার, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, ডায়াবেটিস, ফুসফুসের সমস্যা, স্ট্রোক, বন্ধ্যাত্ব, অন্ধত্ব, টিবি, ওরাল ক্যাভিটির মতো রোগ দেখা দিতে পারে। জেনে নিন ধূমপানের ফলে আপনার শরীরে আর কী কী ক্ষতি হয়-
হার্ট অ্যাটাক
ধূমপানের ফলে হার্ট অকেজো হয়ে যেতে পারে। এই ক্ষতিকর অভ্যাস হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। হার্ভার্ড হেলথে প্রকাশিত এক আর্টিকেলে বলা হয়েছে, ধূমপান শুধু ফুসফুসেরই ক্ষতি করে না, এটি হার্টের অসুখেরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ধূমপানের ফলে রক্তনালীতে প্লাক জমার ফলে হৃৎপিন্ডের পেশী ঠিকভাবে অক্সিজেন পায় না। যা শেষ পর্যন্ত হার্ট অ্যাটাকের দিকে নিয়ে যায়।
ফুসফুসের ক্ষতি
ধূমপান শ্বাসনালী এবং ফুসফুসের ক্ষুদ্র বায়ু থলির (অ্যালভিওলি) ক্ষতি করে, যা ফুসফুসের রোগের কারণ হতে পারে। এমফিসিমা এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিস হলো দুটি ফুসফুসের রোগ যা ধূমপানের ফলে হয়। ফুসফুসের ক্যান্সার মূলত সিগারেট খাওয়ার কারণে হয়। ধূমপান হাঁপানির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে বা আগে থেকেই এই সমস্যা থাকলে তা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
বন্ধ্যাত্বের কারণ
ধূমপানের ফলে পুরুষ ও নারীদের মধ্যে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা বেড়েছে। এটি নারীদের জন্য গর্ভবতী হওয়া কঠিন করে তোলে এবং নবজাতক শিশুর স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করে। পুরুষদের ক্ষেত্রেও এটি নবজাতক শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। ধূমপানের ফলে পুরুষের শুক্রাণুর সংখ্যা ও মান কমে যায়।
ওরাল হেলথের জন্য ক্ষতিকর
ধূমপান দাঁত এবং মাড়ির স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ, দাগযুক্ত দাঁত, মাড়ির রোগ, দাঁতের চিকিৎসার পরে সেরে উঠতে দেরি হওয়া এবং মুখের ক্যান্সারের উচ্চ ঝুঁকির কারণ এই ধূমপানের অভ্যাস। এটি লালা উৎপাদন হ্রাস করে, ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে।
চোখের সমস্যা সৃষ্টি করে
ধূমপান ছানি পড়ার ঝুঁকি বাড়ায় এবং বয়স-সম্পর্কিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের কারণ হতে পারে। ম্যাকুলার ডিজেনারেশন হলো চোখের রেটিনার কাছে অবস্থিত একটি অংশের ক্ষতি, যা কেন্দ্রীয় দৃষ্টিশক্তির জন্য প্রয়োজনীয় চোখের অংশ। তামাকের ধোঁয়ায় থাকা বিষাক্ত রাসায়নিকগুলো চোখের সূক্ষ্ম টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা দৃষ্টিশক্তির অবনতি এবং অন্ধত্বের দিকে নিয়ে যায়।
ডায়াবেটিস হতে পারে
ধূমপান ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। এটি প্রদাহ, ইনসুলিন প্রতিরোধ এবং চাপ সৃষ্টি করে, গ্লুকোজ বিপাক ব্যাহত করে। নিকোটিন ইনসুলিন সংবেদনশীলতা কমিয়ে দেয়, রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়। তামাকের টক্সিন ইনসুলিন উৎপাদন কমিয়ে দেয়। ধূমপান পেটে চর্বি জমতে সাহায্য করে, ইনসুলিন প্রতিরোধকে আরও করে দেয়। সেইসঙ্গে এটি কার্ডিওভাসকুলার ঝুঁকি বাড়ায়, ডায়াবেটিসও বাড়িয়ে তোলে। এমনকি এটি টাইপ ২ ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
পেটের ক্ষতি করে
ধূমপানের ফলে অন্ত্রের স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি অ্যাসিড রিফ্লাক্স প্ররোচিত করতে পারে। সিগারেটে উপস্থিত নিকোটিনের কারণে এটি ঘটে, যা পাকস্থলীর প্রতিরক্ষামূলক আবরণকে হ্রাস করে। ফলে অ্যাসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ধূমপাণের কারণে পাকস্থলীর অ্যাসিড সরাসরি খাদ্যনালীতে যায়, যা অস্বস্তির কারণ হয়। এটি ভিটামিন সি এবং ই-এর মতো মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট শোষণ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এগুলোর ঘাটতির ফলে আপনি দ্রুত দুর্বল এবং বিষণ্ণ বোধ করতে পারেন।