
আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ ভারতের পশ্চিম বংগের সাম্প্রতিক বিধানসভার নন্দিগ্রামের নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে এবার হাই কোর্টে গেলেন পশ্চিম বংগের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোট গণনায় কারচুপি সহ একাধিক অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছেন তৃনমূল প্রার্থী মমতা। আজ শুক্রবার বেলা ১১টা নাগাদ কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি কৌশিক চন্দের বেঞ্চে এই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
গত ২ মে ভোটের ফলপ্রকাশের দিনই মমতা বলেছিলেন, নন্দীগ্রামের ফল নিয়ে আদালতে যাবেন। ভোট গণনার দিন টান টান উত্তেজনায় প্রথম সংবাদ প্রকাশিত হয় যে মমতা ১২০০ ভোটে নন্দীগ্রামে জয়ী হয়েছেন। তার ঠিক অল্পক্ষণ পরেই খবর আসে, নন্দীগ্রামে মমতা হেরে গেছেন, জিতেছেন শুভেন্দু। ১৯০০ থেকে কিছু বেশি ভোটের ব্যবধানে শুভেন্দু অধিকারী জিতেছেন নন্দীগ্রামে। পরে নির্বাচনী রিটার্নিং অফিসার শুভেন্দুকে জয়ী ঘোষণা করেন। তখনই ভোট গণনায় কারচুপির অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে এবার নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে পুনর্গননার দাবি জানালেন স্বয়ং মমতা।

তৃণমূলের পক্ষ থেকে কয়েকটি বিষয় উঠে আসে। গণনার সময়ে দু’ঘণ্টার জন্য সার্ভার ডাউন হয়ে যাবার ঘটনা ঘটেছিল। এ ব্যাপার নিয়ে বারে বারে প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়াও মমতা ১২০০ ভোটে জিতে গিয়েছেন প্রকাশ্যে আসার পরও নতুন করে গণনা করে শুভেন্দুকে জয়ী ঘোষণার বিষয়টি মেনে নিতে পারেন নি মমতার দল। নির্বাচনের পরই মোবাইলে একটি মেসেজ দেখিয়ে মমতা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘‘এক জনের কাছ থেকে এসএমএস পেয়েছি। নন্দীগ্রামের এক রিটার্নিং অফিসার জানিয়েছেন, বন্দুকের নলের মুখে কাজ করতে হচ্ছে। তিনি যদি পুনর্গণনার নির্দেশ দেন, তাহলে তাঁর প্রাণ সংশয় হতে পারে। নন্দীগ্রামে মেশিন পাল্টে দেওয়া হয়েছে।’’
এদিকে নন্দিগ্রামে নির্বাচনে বিজয়ী শুভেন্দু বিজয়ের পর থেকেই মারমুখী বক্তব্য দিচ্ছেন। মমতা ভোটে হেরে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, এ সব বলেও কটাক্ষ করেছেন তাঁকে। মমতা অবশ্য এ সব নিয়ে তেমন কিছু বলেন নি। কিন্তু অবশেষে পূর্ব ঘোষণা মতো আদালতের দ্বারস্থ হলেন। শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলের সদস্য হিসেবে নন্দীগ্রাম থেকে আগেও জিতে এসেছিলেন এবং বিগত মন্ত্রীসভায় মমতার মন্ত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন। বিগত ডিসেম্বর মাস থেকে বদলে যেতে থাকে পশ্চিম বংগের রাজনীতি আর তারই ধারাবাহিকতায় তৃনমূল থেকে পদত্যাগ করে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)তে যোগদান করেন শুভেন্দু। আর সেই নন্দীগ্রামেই মমতাকে হারিয়ে দেন শুভেন্দু।
প্রবীণ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, “নির্বাচন নিয়ে যদি কারও অভিযোগ থাকে তাহলে জনপ্রতিনিধিত্ত্বমূলক আইন অনুসারে আবেদন করা। নির্বাচন শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে এই আবেদন জমা দিতে হয়। হাইকোর্টে এই ধরনের মামলার শুনানি শুরু হলে টানা শুনানি চলে। মুখ্যমন্ত্রী আগেই বলেছিলেন গণনা নিয়ে তাঁর অভিযোগ আছে। সঙ্গে অন্যান্য অভিযোগ আছে। নিয়ম মেনেই মুখ্যমন্ত্রী দেড় মাসের মধ্যে সেই আবেদন করেছেন। ভোটের ফলাফল বেরিয়েছে ২রা মে। ১৭ জুন দেড় মাসের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রী আবেদন করায় আজ শুক্রবার থেকে মামলা শুরু হয়ে যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী যে ঘোষণা করেছিলেন সেই প্রতিশ্রুতি মতোই তিনি কাজ করেছেন।”
বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য বলেছেন, “আদালতে যাওয়ার ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনের কোণের গোপন ব্যথা প্রকাশিত হয়েছে। একটা সময়ে ভারতবর্ষের সবচেয়ে ছোট দলের সাংসদ দেবেগৌড়া প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তখন সবচেয়ে বড় দল বিরোধী দল ছিল। এটাই ভারতীয় গণতন্ত্রের উৎকর্ষ। এটা মেনে নেওয়া উচিত।” তিনি আরও বলেন, “ভারতীয় গণতন্ত্রের নিয়ম মেনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হেরেও মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। অন্য দিকে, শুভেন্দু জিতেও বিরোধী দলের নেতা হয়েছেন। এটাই গণতন্ত্রের নিয়ম। এটা মেনে নেওয়া উচিত।”
বিজেপির আইটি সেলের সর্বভারতীয় প্রধান অমিত মালব্য টুইটে কটাক্ষ বলেন, ‘হেরেও জনগণের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’
তথ্যসূত্রঃ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, আনন্দবাজার



